সুরজিৎ দেব, ডায়মন্ড হারবার: রুদ্রাক্ষের একটি মালাই শেষ পর্যন্ত চিনিয়ে দিল বন্ধু খুনে অভিযুক্তদের। অস্বাভাবিক মৃত্যু বদলে গেল খুনের মামলায়। সপ্তাহখানেক আগে দক্ষিণ ২৪ পরগনার মথুরাপুরের দহকান্দার তিল্লান গ্রাম থেকে এক নির্মীয়মাণ বাড়ি থেকে ছাত্রের দেহ উদ্ধার করা হয়। সেই ঘটনাতেই অবশেষে চার নাবালককে গ্রেপ্তার করল পুলিশ।
কালীপুজোর পরের দিন তিল্লান গ্রামে এক নির্মীয়মাণ বাড়ির ভিতর থেকে উদ্ধার হয় দশম শ্রেণির ছাত্র সন্তোষ হালদারের দেহ। মৃতের বাবা পেশায় দিনমজুর ধূর্জটি হালদার বলেন, “২৭ অক্টোবর সকাল দশটা নাগাদ ছেলে সন্তোষের চার বন্ধু অম্বুনাথ নাইয়া, সুমন হালদার, দেবা হালদার ও সত্যজিৎ জাতুয়া ভলিবল খেলার জন্য বাড়ি থেকে ওকে ডেকে নিয়ে যায়। সন্ধের পরেও ছেলে বাড়ি ফেরেনি। ওই বন্ধুদের বাড়িতে যাই। তাদের সঙ্গে কথা বলি। তাতেও ছেলে কোথায় জানতে পারিনি। ২৮ অক্টোবর সকালে ছেলের বন্ধু অম্বুনাথের থেকে খবর পাই গ্রামের শেষ প্রান্তে নির্মীয়মাণ বাড়ির মধ্যে কাদামাখা অবস্থায় ছেলের দেহ পড়ে রয়েছে। খবর শুনে সেখানে ছুটে যাই। দেখি সত্যিই সেখানে ছেলের দেহ পড়ে রয়েছে। হাত ও পায়ে দড়ি দিয়ে বেঁধে রাখার চিহ্নও দেখি।” সঙ্গে সঙ্গে পুলিশকে খবর দেওয়া হয়। মথুরাপুর থানার পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে সন্তোষের দেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তে পাঠায়। সন্তোষের যে চার বন্ধু তাকে খেলতে ডেকে নিয়ে গিয়েছিল তাদেরকে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করে পুলিশ। মৃত ছাত্রের বাবা বলেন, “কারও বিরুদ্ধে কোনও প্রমাণ না থাকায় তখন সবাইকে ছেড়ে দেওয়া হয়।”
এদিকে, যে নির্মীয়মাণ বাড়িটিতে সন্তোষের মৃতদেহ উদ্ধার হয়েছিল সেখান থেকে দিনচারেক আগে একটি রুদ্রাক্ষের মালা উদ্ধার করে পুলিশ। সোমবার স্থানীয় এক ব্যক্তি পুলিশকে জানান, ফেসবুকে ওই মালা সন্তোষের বন্ধু সুমনের গলায় থাকতে দেখেছেন তিনি। আর তখনই সন্তোষের মৃত্যুরহস্য নাটকীয়ভাবে মোড় নেয়। গ্রামের মানুষ সন্তোষকে খুন করা হয়েছে বলে অভিযোগ করে মূল অভিযুক্ত হিসেবে সুমনকেই চিহ্নিত করেন। এই ঘটনায় অবিলম্বে তাকে গ্রেপ্তারের দাবিতে পথ অবরোধ করে বিক্ষোভে ফেটে পড়েন তাঁরা। মথুরাপুর থানার অফিসার ইনচার্জ গৌতম সাহার নেতৃত্বে এক বিশাল পুলিশবাহিনী ঘটনাস্থলে পৌঁছয়। সোমবার বিকেলের মধ্যেই গ্রেপ্তার করা হয় অভিযুক্ত সুমনকে। তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করে গ্রেপ্তার করা হয় মৃতের আরও তিন নাবালক বন্ধু অম্বুনাথ, দেবা ও সত্যজিৎকেও। পুলিশ জানিয়েছে, মৃতের বাবার অভিযোগের ভিত্তিতে ওই চারজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। রুজু হয়েছে খুনের মামলাও। চার নাবালক অভিযুক্তকে মঙ্গলবার আদালতে তোলা হবে। তবে কী কারণে খুন করল সন্তোষকে তা এখনও অজানা।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.