অর্ণব দাস, বারাসত: অভাব নিত্যসঙ্গী। দিনভর রাস্তায় ঘুরে লটারি বিক্রি করেন বাবা। তাতেও নুন আনতে পান্তা ফুরোনো পরিস্থিতি। ফলে পড়াশোনা বন্ধ হতে চলেছিল। শুধু লেখাপড়া চালিয়ে যেতেই রাস্তায় ধূপকাঠি বিক্রির সিদ্ধান্ত উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষার্থীর। জীবনে একটাই লক্ষ্য নিজের পায়ে দাঁড়ানো, একটা চাকরি।
বারাসত পুরসভার ১৪ নম্বর ওয়ার্ডের বনমালিপুরের বাসিন্দা মন্দিরা সিংহ। বারাসত প্রিয়নাথ বালিকা বিদ্যালয়ের কলা বিভাগের ছাত্রী সে। এবারের উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষার্থী। তার ভাই চতুর্থ শ্রেণির পড়ুয়া, মা গৃহবধূ। রাস্তায় ঘুরে ঘুরে দিনভর লটারির টিকিট বিক্রি করেন বাবা সাহেব সিংহ। মাধ্যমিকে ভালো ফল করার পরও মন্দিরার লেখাপড়া এগিয়ে নিয়ে যাওয়া সম্ভব ছিল না তাঁর বাবার পক্ষে। সেটা বুঝতে পেরেই ধূপকাঠি ফেরি শুরু করেছিল মন্দিরা। দত্তপুকুর, হাবড়া, মছলন্দপুর, নিউ বারাকপুর, বিরাটির বিভিন্ন জায়গায় ঘুরে ঘুরে কাজ করত সে। গত এক বছরে মন্দিরার দৈনন্দিন রুটিনই ছিল, সকালে উঠে কিছুটা সময় পড়ে ধূপকাঠির প্যাকেট হাতে বেরিয়ে পড়া। বিকেল পর্যন্ত চলত বেচাকেনা। সন্ধ্যার আগে বাড়িতে ফিরে ফের পড়তে বসে সে। প্রতিদিন গড়ে তিন-চারশো টাকার ধূপকাঠি বিক্রি করে লাভ হয় ৬০ থেকে ৭০ টাকা। সেই টাকা জমিয়ে সে প্রতিমাসে তিনজন প্রাইভেট টিউটরের বেতন দিত। বাকি টাকা দিত বাড়িতে।
পরীক্ষা সামনেই তা সত্ত্বেও এদিন মন্দিরা ধূপকাঠি বিক্রি করতে গিয়েছিল মছলন্দপুর বাজারে। সেখানেই কথায় কথায় মন্দিরার জীবনযুদ্ধের লড়াই জানতে পারেন ব্যবসায়ীরা। আর্থিক সহায়তার পাশাপাশি উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষার জন্য বোর্ড, পেন এবং জলের বোতল উপহার দিয়েছেন তাঁরা। মন্দিরা জানায়, উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষার পর কলেজের পড়াশুনো শেষ করে একটা চাকরি জোগাড় করতে চায় সে। বেসরকারি সংস্থায় হলেও আপত্তি নেই। চাকরি করে মা, বাবার পাশে দাঁড়ানোটাই মূল।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2025 Sangbad Pratidin Digital Pvt. Ltd. All rights reserved.