অভিষেক চৌধুরী,কালনা: সামান্য আয় বাবার, অভাবের সংসার। এক ছটাক জমিজমাও নেই। ডাক্তারি পড়ুয়া বড়ছেলের পড়ার খরচ জোগাতে গিয়ে লক্ষাধিক টাকা ধারদেনাও হয়ে গিয়েছে। অর্থের অভাবে তাই গৃহশিক্ষকও জোটেনি ছোট ছেলের। বাবা-মায়ের কাছে পড়েই মাধ্যমিকে নজরকাড়া রেজাল্ট মন্তেশ্বরের মীরপুরের মোল্লা শাকিবুল হাসানের। ভবিষ্যতে চিকিৎসক হয়ে মানুষের সেবা করার ইচ্ছা তাঁর। বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে সংসারের অভাব। ঘরে ‘রত্ন’ দুই ছেলে নিয়ে চিন্তায় পরিবার।
মন্তেশ্বরের মাঝেরগ্রাম পঞ্চায়েতের মীরপুর গ্রামের বাসিন্দা মোল্লা শাকিবুল হাসান। তার বাবা মোল্লা মহম্মদ হাসান পেশায় একজন গৃহশিক্ষক। মা শেফালি চৌধুরী মোল্লা একজন গৃহবধূ। অল্প জায়গার উপর অ্যাসবেসটারের চাল ও মাটির বাড়িই ঠিকানা। বাবার রোজগার সামান্য। নুন আনতে পান্তা ফুরানোর সংসারে ছোট ছেলে শাকিবুল হাসান মোল্লাকে প্রতিটি বিষয়ের জন্য গৃহশিক্ষক দেওয়ার ইচ্ছা থাকলেও অর্থের অভাবে তা সম্ভব হয়নি। অংক ছাড়া কোনও বিষয়েই গৃহশিক্ষক দিতে পারেননি বাবা। দুই ছেলেকে মানুষের মত মানুষ করার সাধনায় ব্রতী গ্র্যাজুয়েট দম্পতি দুই ছেলেকে নিজেরাই পড়িয়েছেন। বড় ছেলে এনামুল হাসান বর্তমানে কলকাতা মেডিক্যাল কলেজে এমবিবিএস পড়ছেন। ছোট ছেলে মোল্লা শাকিবুল হাসান এবার মধ্যমগ্রাম প্রেমময়ী উচ্চ বিদ্যালয় থেকে মাধ্যমিক পরীক্ষা দিয়ে মোট ৬৫২ নম্বর পেয়েছে। সে বাংলায় পেয়েছে ৯৭, ইংরাজীতে ৮৭,অংকে ৯০, ভৌত বিজ্ঞানে ৯৬, জীবন বিজ্ঞানে ৯৭, ইতিহাসে ৯৪, ভূগোলে ১০০ পেয়েছে।
শাকিবুল জানিয়েছে, দিনে ৬-৮ ঘণ্টা পড়াশোনা করার পাশাপাশি সে ক্রিকেট খেলা ভালবাসে। ভবিষ্যতে সে ডাক্তার হতে চাওয়ায় দুশ্চিন্তার মধ্যে পড়েছেন বাবা মোল্লা মহম্মদ হাসান ও মা শেফালী চৌধুরী মোল্লা। তাঁরা বলেন, “আড়াই কাঠার উপর বাড়িটুকুই শেষ সম্বল। এক ছটাক জমিজমা নেই আমাদের। টিউশন পড়িয়ে যেটুকু আয় হয়। বড় ছেলেকে ডাক্তারি পড়াতে গিয়ে ৪০ হাজার টাকা লোন নেওয়া হয়েছে। সবমিলিয়ে বাজারে লক্ষাধিক টাকা ধারদেনাও হয়ে গিয়েছে। এমনই এক পরিস্থিতিতেও ছোট ছেলের রেজাল্ট ভাল হয়েছে। সেও ডাক্তারি পড়তে চায়। কী করব তাই ভেবেচিন্তেও কুলকিনারা করতে পারছি না।”
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.