ধীমান রায়, কালনা: রাতারাতি কোটিপতি বছর পনেরোর কিশোর। কিন্তু তাতে বিড়ম্বনার অন্ত নেই। কোটি টাকার লটারি জিতে পূর্ব বর্ধমানের পূর্বস্থলীর নবম শ্রেণির ওই ছাত্রকে পরপর দুই রাত কাটাতে হল থানায়। পাছে কেউ তাকে খুন করে ‘আলাদিনের আশ্চর্য প্রদীপ’ হাতিয়ে নেয়!
শনিবার সন্ধ্যায় পূর্বস্থলীর কাষ্ঠশালি গ্রামের বাসিন্দা সুদেব দাস জানতে পারে, সে এক কোটি টাকা পুরস্কার জিতেছে। তারপর জানাজানি হয়ে যায় স্থানীয় এলাকায়। টিকিট ছিনতাই হতে পারে। প্রাণ সংশয় হতেও পারে। এসব ভেবেই ওদিন সন্ধ্যায় বাবা সহদেব দাসকে সঙ্গে নিয়ে সুদেব সোজা হাজির পূর্বস্থলী থানায়। কিন্তু তারপরের দিন রবিবার। ব্যাংক বন্ধ। তাই রবিবার বাপ-বেটা মিলে থানায় কাটিয়ে এদিন সোমবার একটি রাস্ট্রায়ত্ত ব্যাংক টিকিটটি জমা দেয়। তারপর সুদেব ও তার পরিবার কার্যত হাঁফ ছেড়ে বাঁচে।
পূর্বস্থলী থানার কাষ্ঠশালির দাসপাড়ার বাসিন্দা সুদেব কাষ্ঠশালি নিভাবনী উচ্চ বিদ্যালয়ে নবম শ্রেণিতে পড়ে। তার বাবা সহদেব দাস রাজমিস্ত্রির জোগাড়ের কাজ করেন। মা শিখা তাঁতবোনার কাজ করেন। অভাবের সংসার। দিন আনা, দিন খাওয়া পরিবারে বাবার সঙ্গে সুদেবকেও মাঝেমধ্যে কাজে যেতে হয়। এই নিতান্ত দরিদ্র পরিবারের ছেলে সুদেব রাতারাতি কোটিপতি বনে গিয়েছে। জানা গিয়েছে, সুদেব গত শনিবার দুপুরে ৩০ টাকা দিয়ে টিকিট কাটে। রাত আটটায় খেলা ছিল। সাড়ে আটটা নাগাদ টিকিট মেলাতে গিয়ে চক্ষু চড়কগাছ তার। একেবারে প্রথম পুরস্কার।
পূর্বস্থলীর গঙ্গারধারপাড়ার ওই টিকিট বিক্রেতা মোহন শেখও জেনে যান ওই নম্বরের টিকিটটি সুদেব কেটেছিল। স্থানীয় লোকজন জেনে যায়। অনেকে সুদেবের বাড়িতেও চলে আসেন। তবে রাত বাড়তে থাকলে সুদেব ও পরিবারের টেনশনও বাড়তে থাকে। শেষে শনিবার রাতে বাবা সহদেববাবুকে নিয়ে পূর্বস্থলী থানায় চলে আসে সুদেব। সঙ্গে তার এক কোটির টিকিটটিও। শনিবার রাত ও রবিবার দিনরাত কাটে পুলিশি আশ্রয়ে। তারপর এদিন সোমবার পুলিশই তাদের পৌঁছে দেয় একটি রাস্ট্রায়ত্ত ব্যঙ্কের শাখায়। সেখানে গিয়ে সুদেব টিকিটটি জমা করে।
সুদেব জানায় মাঝেমধ্যে টিকিট কাটার শখ ছিল তার। সুদেব বলে,“বাবা খুব কষ্ট করেন। মাকেও কাজ করতে হয়। তাই আমাদের যাতে ভাগ্যের পরিবর্তন হয় সেই আশায় মাঝেমধ্যে টিকিট কাটতাম। ঈশ্বর মুখ তুলে চেয়েছেন।” সুদেবের কথায়, “একটি ভাল বাড়ি করার ইচ্ছা রয়েছে। আর বাকি টাকা ব্যাংকে ফিক্সড ডিপোজিট করে রাখা হবে।”
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.