সুরজিৎ দেব, ডায়মন্ড হারবার: করোনা মোকাবিলায় এবার মুখ্যমন্ত্রীর আপৎকালীন ত্রাণ তহবিলে অর্থসাহায্য করল অষ্টম শ্রেণির এক ছাত্র। নিজের টিফিনের পয়সা বাঁচিয়ে জমিয়ে রাখা ১৩০০ টাকা বুধবার সে তুলে দিল ডায়মন্ড হারবারে প্রশাসনিক কর্তাদের হাতে। বিপদের দিনে নজির হয়ে থাকল তার মানবতাবোধ।
বাড়ি থেকে বেরনো নিষেধ। চলছে লকডাউন। সকলের মুখ থেকে শুনে করোনা ভাইরাস সম্পর্কে ধারণা তৈরি হয়েছিল ডায়মন্ড হারবার ২ নম্বর ব্লকের সরিষার ভূষণার বাসিন্দা ছোট্ট সবুজের। পানাকেশী হাই স্কুলের অষ্টম শ্রেণির ছাত্র সবুজ হালদার। ওর বাবা ছোট্ট চায়ের একটা দোকান চালান। সপ্তম শ্রেণিতে পড়ার সময় থেকেই টিফিনের জন্য বাড়ি থেকে ১০ বা ১৫ টাকা করে পেত সে। তবে পুরো টাকা কখনই খরচ করেনি সবুজ। পরিবর্তে টিফিনের বেঁচে যাওয়া টাকা ফেলত একটি ছোট্ট ভাঁড়ে। ওর সেই জমানো অর্থ যে কোনওদিন এভাবে দেশের কাজে লাগবে তা স্বপ্নেও ভাবেনি সবুজ।
সে জানায়, সারা পৃথিবীজুড়ে করোনা ভাইরাসের সংক্রমণে মৃত্যুমিছিল আর একের পর এক আক্রান্ত হওয়ার ঘটনা প্রতিদিনই টিভিতে দেখছে। দেখেছে মারণ ভাইরাসের মোকাবিলায় কত মানুষ কতরকমভাবে অর্থ সাহায্য করছেন। তখনই মনে হয়েছে, সেও তার ওই জমানো টাকা করোনা মোকাবিলায় ত্রাণ তহবিলে দিয়ে দেবে। যেমন ভাবা তেমন কাজ। সঙ্গে সঙ্গে ভাঁড় ভাঙতে বসে যায়। ভাঁড় ভাঙতেই দেখে পাঁচ টাকা ও দশ টাকার কয়েন মিলিয়ে ১৩০০ টাকার মতো জমেছে তার।
প্রথমে কিছুটা দ্বিধাগ্রস্ত ছিল সবুজ। মাত্র ১৩০০ টাকা কি নেবেন ওঁরা। পরে দ্বিধা-দ্বন্দ্ব সব ঝেড়ে বাবাকে নিয়ে সে সোজা চলে যায় ডায়মন্ড হারবারে মহকুমা শাসকের দপ্তরে। সেখানেই সে তার জমানো ১৩০০ টাকা হাসিমুখে মুখ্যমন্ত্রীর আপৎকালীন ত্রাণ তহবিলে তুলে দেয়। সবুজের কাছ থেকে তা নেন দক্ষিণ চব্বিশ পরগনার অতিরিক্ত জেলাশাসক (উন্নয়ন) সাগর চক্রবর্তী। ছিলেন মহকুমা শাসক সুকান্ত সাহাও। মহকুমা শাসক বলেন, “সবুজ যখন তার ভাঁড় ভেঙে জমানো কয়েনগুলো ত্রাণ তহবিলে তুলে দিচ্ছিল, আনন্দে ভরে উঠেছিল মনটা। ছোট্ট শিশুর মানবতাবোধে মুগ্ধ হয়ে যাই আমরা সকলেই।” অতিরিক্ত জেলাশাসক (উন্নয়ন) সবুজের এই কাজে দারুণ খুশি। তিনি ওই ছাত্রের সুস্থ মনের এভাবেই উত্তরোত্তর বিকাশ কামনা করেন।
ত্রাণ তহবিলে লক্ষ-কোটি টাকার চেকের ভিড়ে ওই ১৩০০ টাকার কয়েনই শ্রেষ্ঠ দান হিসেবে এদিন গ্রহণ করেন প্রশাসনিক আধিকারিকরা।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.