ছবি: প্রতীকী।
বিপ্লবচন্দ্র দত্ত, কৃষ্ণনগর: মাধ্যমিকে (Madhyamik Exam 2022) ভাল রেজাল্ট করা সত্ত্বেও প্রতিশ্রুতি পূরণ করেননি বাবা। কিনে দেননি স্মার্টফোন। আবদার না মেটায় চরম পদক্ষেপ। গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মঘাতী ছাত্রী। ঘটনাটি ঘটেছে নদিয়ার ধানতলা এলাকায়। কান্নায় ভেঙে পড়েছে পরিবারের সদস্যরা।
মৃত ছাত্রীর নাম কেয়া বিশ্বাস (১৬)। নদিয়ার বহিরগাছির বিশ্বনাথপুর গ্রামের বাসিন্দা সে। ছাত্রীর বাবা রামকৃষ্ণ বিশ্বাস পেশায় একজন হোমিওপ্যাথি চিকিৎসক। আর্থিক অনটনেই কাটত সংসার। চলতি বছরে মাধ্যমিক দিয়েছিল কেয়া। পরীক্ষার আগে বাবার কাছে সে আবদার করে বলেছিল, ভাল রেজাল্ট করতে পারলে তাকে অ্যান্ড্রয়েড ফোন কিনে দিতে হবে। বাবা মেয়ের কথায় রাজিও হয়েছিলেন। কঠোর পরিশ্রম করে কেয়া মোট ৪৪১ নম্বর পেয়ে পাশ করেছে মাধ্যমিক। রেজাল্ট ভাল হওয়ায় বাবার কাছে কেয়ার আবদার জোরদার হয়। বুধবার মায়ের সঙ্গে স্কুলে গিয়ে কলা বিভাগে বহিরগাছি উচ্চ বিদ্যালয়েই একাদশ শ্রেণিতে ভরতি হয়ে ফিরে বাবার কাছে আবদার করে, এখনই তাকে অ্যান্ড্রয়েড ফোন কিনে দিতে হবে। বাবা রামকৃষ্ণ প্রতিশ্রুতি দেন দিন দশেকের মধ্যেই ফোন কিনে দেবেন।
কিন্তু বাবার উপর ভরসা করতে পারেনি ছাত্রী। বুধবার সন্ধেয় বাড়িতে একা ছিল কেয়া। সেই সুযোগেই নিজের ঘরে গলায় ফাঁস লাগিয়ে আত্মহত্যা করে। বান্ধবীরা কেয়াকে ডাকার জন্য তাঁর বাড়িতে যায়। বারবার কেয়ার নাম ধরে তারা ডাকাডাকি করতে থাকে। কিন্তু কোনও সাড়া শব্দ না মেলায় দরজা ধাক্কাও দেয়। এরপর প্রতিবেশীদের সাহায্যে দরজা ভাঙতেই উদ্ধার হয় কেয়ার ঝুলন্ত দেহ। এরপরই খবর দেওয়া হয় পুলিশে। তড়িঘড়ি কিশোরীকে হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসকরা মৃত বলে ঘোষণা করেন।
প্রতিবেশীদের কাছে কেয়া ভাল মেয়ে বলেই পরিচিত ছিল। পড়াশোনাতেও ভালই ছিল সে। কেয়ার এমন অকাল মৃত্যু মেনে নিতে পারছেন না কেউই। বৃহস্পতিবার বিকেল নাগাদ কেয়ার মৃতদেহ রানাঘাট মহকুমা হাসপাতালে ময়নাতদন্তের পর তাদের বাড়িতে গিয়ে পৌঁছায়। কান্নায় ভেঙে পড়েন কেয়ার পরিবারের লোকজন এবং প্রতিবেশীরা। কিন্তু কেন আত্মহত্যার সিদ্ধান্ত নিল কেয়া, সে বিষয়ে কেয়ার বাবা রামকৃষ্ণ বিশ্বাস বলেন, “ও আমার কাছে অ্যান্ড্রয়েড ফোনের আবদার করেছিল। আমি বলেছিলাম, ১০দিনের মধ্যেই আমি ফোন কিনে দেব। অথচ ও আমাকে এই সামান্য সময়টুকুও দিল না। অভিমানে গলায় ফাঁস লাগিয়ে নিজের জীবনটা শেষ করল। আর আমাদের সারা জীবনের জন্য কাঁদিয়ে গেল।”
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.