সৌরভ মাজি, বর্ধমান: বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র হস্টেলে র্যাগিং-এর শিকার প্রথম বর্ষের ছাত্র। অভিযোগ, গত কয়েকদিন ধরে ওই ছাত্রর উপর শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন চালানো হয়েছে। এমনকী হস্টেলের বাগানের মাটি পর্যন্ত কাটানো হয়েছে তাঁকে দিয়ে। তাতে তাঁর হাতের চামড়া উঠে রক্তাক্ত হয়েছেন। শুক্রবার রাতে তাঁকে হস্টেল থেকে বের করে দেওয়া হয় বলেও অভিযোগ। শনিবার দুপুরে এই বিষয়ে বর্ধমান থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন স্নাতকোত্তর উইমেন্স স্টাডিজ বিভাগের প্রথম বর্ষের ওই ছাত্র। পুলিশ ঘটনার তদন্ত শুরু করেছে।
নির্যাতিত ওই ছাত্র বিশ্ববিদ্যালয়ের রবীন্দ্র ছাত্রাবাসে থাকেন। তাঁর অভিযোগ, হস্টেলে উত্তীর্ণ অনেক ছাত্র থাকে। তারাই এইভাবে প্রথম বর্ষের ছাত্রদের উপর শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন চালাচ্ছে। এদিন বর্ধমান থানায় লিখিত অভিযোগে নির্যাতিত জানান, গত ১৬ অক্টোবর থেকে তাঁর উপর শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন শুরু হয়। নিয়ম করে ওই দিনগুলিতে রাত সাড়ে ১০টা থেকে রাত আড়াইটা পর্যন্ত নির্যাতন করা হয়। শুক্রবার মধ্যরাতে যা মাত্রা ছাড়িয়ে যায়। ওইদিন রাত ১২টা নাগাদ তাঁকে অত্যাচার করে হস্টেল থেকে বের করে দেওয়া হয়। সারারাত বাইরে কাটাতে হয়েছে তাঁকে। অভিযোগে, কয়েকজন প্রাক্তন ছাত্রের নামও উল্লেখ করেছেন যাঁরা নিয়মিত এইভাবে প্রথম বর্ষের ছাত্রদের উপর শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন চালাচ্ছে। প্রথম বর্ষের অনেক ছাত্র ভয়ে মুখ খুলতে বা অভিযোগ জানাতে চায় না বলেই দাবি নির্যাতিতর।
নিগৃহীত ওই ছাত্রের দাবি, হুমায়ুন কবীর, শেখ কামরুজ্জামান, চণ্ডীচরণ বন্দ্যোপাধ্যায়, সজল মণ্ডল ও তাঁদের কয়েকজন সঙ্গী এইভাবে তাঁদের উপর শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন চালাচ্ছে। বর্ধমান থানায় নির্যাতিত নিজের দুই হাত দেখিয়ে বলেন, “কোদাল দিয়ে হস্টেলে বাগানের জমিতে মাটি কাটা করানো হয়। তার ফলে আমার হাতের বিভিন্ন জায়গায় চামড়া উঠে গিয়েছে।” অভিযুক্ত হুমায়ুন কবীর এদিন ফোনে বলেন, “আমরা এখনও পড়ছি। আমি পিএইচডি করছি। তাই হস্টেলে থাকছি। মিথ্যা অভিযোগ করা হচ্ছে। হস্টেলে থাকার নির্দিষ্ট নিয়ম রয়েছে। ওই ছেলেটি নিয়ম মানেনি।বিশ্ববিদ্যালয়ে ভরতির পর হস্টেলে এসে মিল চালু করতে হয়। আমি মেস কমিটি থেকে জেনেছি মিল চালু করেনি। দীর্ঘদিন ধরে হস্টেলে আসছিল আবার চলে যাচ্ছিল। থাকছিল না। সেই কারণে মেস কমিটির সাথে ওর কথা হয়েছে। কেন করা হচ্ছে জানি না।” আর এক অভিযুক্ত কামরুজ্জামান ফোনে বলেন, “আমি স্নাতকোত্তর সম্পূর্ণ করেছি। বর্তমানে আইন বিভাগের ছাত্র। যে অভিযোগ করেছে সে প্রথম বর্ষের। আমি চিনিও না। নামও জানি না। কেন এমন মিথ্যা অভিযোগ করা হচ্ছে জানি না।”
যদিও বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের দাবি, তাঁদের কাছে লিখিত বা মৌখিকভাবে কেউ কিছু জানায়নি। অভিযোগ পেলে কড়া ব্যবস্থা নেবে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার তোফাজল হোসেন জানান, বিষয়টি তাঁর জানা নেই। হস্টেল কর্তৃপক্ষ বা ওই ছাত্র তাঁকে কিছুই জানায়নি এই বিষয়ে।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.