শান্তনু কর, জলপাইগুড়ি: গুরুদক্ষিণা দিতে দ্রোণাচার্যকে নিজের হাতে বৃদ্ধাঙ্গুষ্ঠ কেটে দিয়েছিলেন একলব্য। সেকথা প্রায় সকলেরই জানা। বর্তমান যুগে গুরুদক্ষিণার কথা যেন ভাবাই যায় না। কিন্তু ব্যতিক্রম যে সব সময়েই ঘটে। তাই বোধহয় ঘটল অতিমারী আবহেও। কোনও গাড়ি না পেয়ে করোনা (Coronavirus) আক্রান্ত শিক্ষককে বাইকে চড়িয়ে হাসপাতালে পৌঁছে দিলেন ছাত্র। তার দায়বদ্ধতায় মুগ্ধ প্রায় সকলেই।
জলপাইগুড়ির (Jalpaiguri) নেতাজি বিদ্যাপীঠের অবসরপ্রাপ্ত ক্রীড়া শিক্ষক তিনি। স্কুলের উন্নয়নের জন্য নিরন্তর পরিশ্রম করে গিয়েছেন ওই শিক্ষক। কখনও দুস্থ ছাত্রদের পাশে দাঁড়াতেও কম কাজ করেননি তিনি। অবসরের পর তাঁর প্রাপ্য সমস্ত টাকাপয়সাও স্কুলের উন্নয়নেই ব্যয় করেছেন শিক্ষক। এমন দরদী শিক্ষক সকলের কাছেই বেশ প্রিয় মানুষ ছিলেন। গত ৪ অক্টোবর আচমকাই অসুস্থতা বোধ করেন। করোনা আক্রান্ত হননি তো, সেই প্রশ্ন মনে উঁকিঝুঁকি দেয়। তাই পরীক্ষা করান। তাতেই জানা যায় তিনি করোনা আক্রান্ত। তবে তেমন কোনও সমস্যা না থাকায় চিকিৎসকের পরামর্শমতো হোম আইসোলেশনেই ছিলেন তিনি। মঙ্গলবার রাতে তাঁর শ্বাসকষ্ট শুরু হয়। তাই তাঁকে হাসপাতালে ভরতি করারই পরামর্শ দেন চিকিৎসক।
শিক্ষকের পরিজনেরা সরকারি অ্যাম্বুল্যান্স পাওয়ার জন্য ফোন করেন। বুধবার সকাল পর্যন্ত কোথাও অ্যাম্বুল্যান্স পাননি তাঁরা। স্থানীয় কোনও গাড়ি কিংবা টোটোও পাওয়া যায়নি। তাই বাধ্য হয়ে তাঁরা যোগাযোগ করেন করোনা আক্রান্তের শিক্ষকের এক ছাত্র তথা গ্রিন জলপাইগুড়ির সহ-সভাপতি নিত্যানন্দ বর্মনের সঙ্গে। নিত্যানন্দ বর্মন নিজেও বিভিন্ন জায়গায় আম্বুল্যান্স বা ছোট গাড়ি কিংবা টোটোর জন্য যোগাযোগ করেন। কিন্তু কোথাও কোন যানবাহন পাননি। অবশেষে সাধারণ একটি রেনকোট পড়েই শিক্ষককে নিজের বাইকে চাপিয়ে চলে আসেন জলপাইগুড়ি সুপার স্পেশ্যালিটি হাসপাতাল। তারপর বিশ্ববাংলা কোভিড হাসপাতালে যান তিনি। সেখানে প্রিয় মাষ্টারমশাইকে ভরতি করান। ছাত্রের মানবতাবোধ ও শিক্ষকের দায়িত্ববোধ মুগ্ধ করেছে সকলকে।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.