সৌরভ মাজি, বর্ধমান: ব্যাগ তোলাকে কেন্দ্র করে স্কুল ছাত্রকে নির্মমভাবে উইকেট দিয়ে মারধরের অভিযোগ উঠল স্কুল শিক্ষকের বিরুদ্ধে। শিক্ষকের বেদম প্রহারে গুরুতর জখম হয়ে হাসপাতালে ভরতি ওই ছাত্র। চাঞ্চল্যকর ঘটনাটি পূর্ব বর্ধমানের খণ্ডঘোষের চাগ্রাম হাইস্কুলের। জখম দশম শ্রেণির ছাত্রের বাবা ওই শিক্ষকের বিরুদ্ধে খণ্ডঘোষ থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন। অভিযুক্ত ইংরাজির শিক্ষক জহরলাল কোঙার অবশ্য বুধবার আর স্কুলে আসেননি। মোবাইল সুইচড অফ থাকায় তার সঙ্গে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি।
জখম ছাত্র জানায়, মঙ্গলবার তাদের সহপাঠী সায়ন্তন সাঁইয়ের ব্যাগটি নিচে পড়েছিল। জহরবাবু ক্লাসে এসে ওই ছাত্রকে ব্যাগটি তোলার জন্য বলেন। তখন সে জানায়, ব্যাগটি তার নয়। প্রহৃত ছাত্র বলে, “এরপরই জহরবাবু আমাকে চড়, কিল, ঘুসি মারতে থাকেন। মারতে মারতে ক্লাসের বাইরে বের করে দেন। টিফিনের আগে চড়া রোদে বাইরে কান ধরে দাঁড় করিয়ে দেন।” কিছু পরে কয়েকজন এসে তাকে বলে স্টাফরুমে দিদিমণি ডাকছেন। এই শুনে সে স্টাফরুমের কাছে যায়।এরপরই জহরবাবু তাকে দেখতে পেয়ে উইকেট দিয়ে মারধর শুরু করেন বলেই অভিযোগ জখম ছাত্রের। কয়েকজন শিক্ষক–শিক্ষিকা তাকে উদ্ধার করে। জখম অবস্থায় খণ্ডঘোষ ব্লক প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে নিয়ে যাওয়া হয়। তবে ওই স্বাস্থ্যকেন্দ্রেক চিকিৎসক তাকে বর্ধমানে মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে স্থানান্তরিত করার পরামর্শ দেন। চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী ইউএসজি, সিটি স্ক্যান–সহ অন্যান্য পরীক্ষা–নিরীক্ষা করানো হয়েছে। তার মুখের একাংশে কালশিটে পড়ে ফুলে গিয়েছে।
তবে জেলা বিদ্যালয় পরিদর্শক শ্রীধর প্রামাণিক জানিয়েছেন, বুধবার সকালেই তিনি এই ঘটনাটি জানতে পেরেছেন। বিস্তারিত খোঁজ নিচ্ছেন। অতিরিক্ত জেলাশাসক (শিক্ষা) হুমায়ুন বিশ্বাসও জানিয়েছেন, একজন শিক্ষকের উচিত হয়নি এইভাবে মারধর করা। প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাসও দিয়েছেন তিনি।স্কুলের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক সমরেন্দ্র দাঁর সঙ্গেও বারবার মোবাইলে যোগাযোগের চেষ্টা করেও পাওয়া যায়নি। তবে এই প্রথমবার নয়, এর আগেও কয়েকবার একইভাবে পড়ুয়াদের সামান্য অজুহাতে মারধর করার অভিযোগ উঠেছে জহরলালবাবুর বিরুদ্ধে। পুলিশেও অভিযোগ দায়ের হয়েছিল আগের ঘটনাগুলিতেও।
বিদ্যালয় সূত্রে জানা গিয়েছে, জহরবাবুর মোটর সাইকেলের পাদানিতে পা দিয়ে দাঁড়িয়ে থাকার কারণে এক ছাত্রীকে মারধর করার অভিযোগ উঠেছিল তাঁর বিরুদ্ধে।জখম ছাত্রের দাদা জানান, তাপসকুমার বন্দ্যোপাধ্যায় নামে এক ব্যক্তির ছেলেকে এমন মেরেছিলেন জহরলালবাবুকে যে ওই ছাত্রকে ১৫ দিন হাসপাতালে ভরতি থাকতে হয়েছিল। সেই সময় তাঁকে সাসপেন্ডও করা হয়। তারপর স্কুলে যোগ দিয়েই ওই ছাত্রীকে চড় মেরেছিলেন বাইকে পা দিয়ে দাঁড়িয়ে থাকার কারণে। শাসনের নামে এমন নির্মমভাবে ছাত্রকে মারধর করায় এলাকার বাসিন্দারাও ক্ষুব্ধ। আইনগতভাবেও পড়ুয়াদের মারধর করা নিষিদ্ধ। তা সত্ত্বেও ওই শিক্ষক বারবার কোন সাহসে এমন কাজ করছেন তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন অভিভাবকদের অনেকেই।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.