সংগ্রাম সিংহরায়, শিলিগুড়ি: প্রথা ভেঙে গত বছর থেকেই স্কুলের ছাত্রীকে দিয়ে সরস্বতী পুজো করা শুরু করেছিল শিলিগুড়ি হায়দার পাড়া বুদ্ধভারতী হাই স্কুল। সেই প্রথা এবছরও বজায় রেখেছে স্কুল। তবে বদলেছে পুরোহিতের নাম।
গতবছর পুরোহিতের আসনে দেখা গিয়েছিল স্নিগ্ধা সরকারকে। এবার সেই দায়িত্বে স্কুলের পড়ুয়া আয়েশা বিশ্বাস। বাবা পেশায় সবজি বিক্রেতা। একাদশ শ্রেণির ছাত্রী আয়েশা অবশ্য তাকে নির্বাচনে চমকে যায়নি। কারণ, গতবার স্কুলেরই অগ্রজা স্নিগ্ধাকে প্রথমবার নজির গড়ে পুজো করতে দেখেছেন স্কুলে। তাই এবার যখন তাকে পুজোর জন্য মনোনীত করা হল, খুশি হলেও অবাক হয়নি সে। বরং নিজেকে শেষ কয়েকদিনে তালিম নিয়ে প্রস্তুত করেছে পুজোর জন্য। স্কুলের শিক্ষিকা তনুশ্রী পালের কাছ থেকে সরস্বতী বন্দনা মন্ত্র অনুশীলন করেছে। কলা বিভাগের ছাত্রী আয়েশার অন্যতম বিষয় হিসেবে সংস্কৃত থাকায় মন্ত্র অনুশীলন ও পাঠে খানিকটা বাড়তি সুবিধা পেয়েছে তা অস্বীকার করেনি সে।
ছক ভেঙে ছাত্রী পুরোহিতের পুজো দেখতে অনেকেই ভিড় করেছিলেন স্কুল চত্বরে। স্কুলের প্রধান শিক্ষক স্বপনেন্দু নন্দী জানান, “হিন্দু পুরাণে কোথাও লেখা নেই পুরোহিত শুধুমাত্র পুরুষই হতে হবে। তাই গতবছর থেকে সরস্বতী পূজায় ছাত্রীদের দিয়ে করানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছি। পাশাপাশি, প্রথা ভাঙ্গার পিছনে অবশ্য একটি কারণও রয়েছে। আগে অন্যান্য আর পাঁচটা স্কুলের মত পুরুষ পুরোহিত দিয়ে পুজো করানো হতো এই স্কুলেও। কিন্তু বয়সের ভারে সেই পুরোহিত পুজো চালিয়ে যেতে অক্ষম হয়ে পড়েন। এরপরই বিকল্প খোঁজা শুরু হয়। তখনই মাথায় আসে যে, ছাত্রীদের দিয়ে পুজো করলে কেমন হয়। এতে পাপ হতে পারে বলে পুরনো পুরোহিত জানিয়েছিলেন। তাতে আবার জেদ চেপে যায় বেশি। যেমন ভাবা তেমনই কাজ। স্কুলের একাদশ শ্রেণির ছাত্রীকে দিয়ে পুজো করানো হয়। সেই প্রথাকে এবার এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে আয়েশা।”
যাকে নিয়ে এত আলোচনা সেই আয়েশা কি বলছে? তার কথায়, স্যার বলেছেন, আর্যযুগে নারীপুরুষ উভয়ে পৈতে ধারণ করতেন। যজ্ঞ-যাজনেও সমান অধিকার ছিল তাঁদের। সেই রীতিতে শামিল হতে পারব ভাবিনি কোনওদিন। ভীষণ ভাল লাগছে। আনন্দিত পড়ুয়ার পরিবারও।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2025 Sangbad Pratidin Digital Pvt. Ltd. All rights reserved.