ছবি: প্রতীকী
সুমিত বিশ্বাস, পুরুলিয়া: একটানা চারদিন ধরে চোরের অপবাদ দিয়ে হেনস্তা করা হয় এক ছাত্রীকে। শারীরিক, মানসিক অত্যাচারে অবসাদে ভুগতে শুরু করে সে। মানসিক অবসাদে স্কুলের তিনতলার ছাদ থেকে ঝাঁপ দিয়ে আত্মহত্যার চেষ্টা করল ওই ছাত্রী। পুরুলিয়ার বিদ্যাসাগর আবাসিক বালিকা বিদ্যালয়ের দ্বাদ্বশ শ্রেণির ওই ছাত্রীর অবস্থা গুরুতর। বর্তমানে একটি বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা চলছে তার। এই ঘটনায় মুখ পুড়ল ওই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের।
বলরামপুরের পাঁড়দ্দা গ্রামের বাসিন্দা ওই ছাত্রী। পড়াশোনার সূত্রে বর্তমানে সে তেলকল পাড়ায় থাকে। একাদশ শ্রেণিতে পড়াকালীনই হস্টেলে থাকতে শুরু করে। এই প্রথমবার এমন ভয়ংকর অভিজ্ঞতার সাক্ষী হতে হল বলেই দাবি ছাত্রীর। মানসিক অবসাদে ভোগা ওই ছাত্রী বলে, “হস্টেলের ঘরে আমরা ছ’জন থাকতাম। গত রবিবার এক রুমমেটের ৮৮০ টাকা হারিয়ে যায়। অনেক খোঁজাখুঁজি করার পরেও পাওয়া যায়নি। তখন আমাকেই ওরা চুরির অপবাদ দেয়। আরেক রুমমেটও বলে সে ২০০ টাকা খুঁজে পাচ্ছেনা। সে-ও আমাকেই দোষারোপ করতে থাকে। পরে ওই ছাত্রীর বিছানার বালিশের তলা থেকে টাকা পাওয়া যায়। কিন্তু ৮৮০ টাকার কোনও খোঁজ না মেলায় ওই ঘরে থাকা সকলেই আমার উপর অত্যাচার করতে থাকে।” কিল, ঘুষি, চড় কিছুই বাদ যায়নি। ফলে বাঁ গালে ও কপালে কালশিটে হয়ে যায় ওই ছাত্রীর। অভিযোগ, শুধু মারধরই নয়, রুমমেট-সহ অন্যান্য ছাত্রীরা তাকে কাগজে জোর করে চুরির কথা লিখিয়েও নেয়।
অত্যাচার সহ্য করতে না পেরে গত মঙ্গলবার ওই ছাত্রী তাদের হস্টেল সুপারিনটেনডেন্টের ঘরে ঘুমোয়। বুধবার সকালে হস্টেলে নিজের ঘরে আসে ওই ছাত্রী। আবারও চোর অপবাদ দিয়ে ওই রুমমেটরা তাকে খোঁটা দেয় বলেও অভিযোগ। তাতেই মেজাজ হারায় ছাত্রী। সে সোজা তিনতলায় যায়। ছাদ থেকে নিচে ঝাঁপ দেয়। সঙ্গে সঙ্গেই খবর পৌঁছায় স্কুল কর্তৃপক্ষের কাছে। গুরুতর জখম অবস্থায় ছাত্রীকে উদ্ধার করে দেবেন মাহাতো মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালে ভরতি করা হয়। ওই ছাত্রীর মা বলেন, “স্কুল কর্তৃপক্ষ আমাদের জানায় মেয়ে নাকি শাড়িতে পেঁচিয়ে পড়ে গিয়েছে। তারপর আমরা মেয়ের জ্ঞান ফিরলে সব জানতে পারি। ওই সরকারি হাসপাতাল থেকে নার্সিংহোমে নিয়ে আসি। আমরা চাই দোষীদের উপযুক্ত শাস্তি হোক।” ওই স্কুলের প্রধান শিক্ষিকা মন্দিরা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “এই বিষয়ে আমরা অত্যন্ত কড়া। ঘটনার তদন্তে তিনজনকে নিয়ে একটি কমিটি গঠন করেছি। তদন্ত কমিটির রিপোর্টের ভিত্তিতে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.