দীপঙ্কর মণ্ডল: তেলা মাথায় তেল দিল রাজ্যের স্কুল সার্ভিস কমিশন (এসএসসি)। যে স্কুলে তিন বছর ধরে প্রধান শিক্ষক আছেন, সেখানে একই পদে বহাল করা হল অন্যজনকে। আইন অনুযায়ী, যিনি আগে থেকে আছেন, তিনিই রইলেন। এসএসসির তুঘলকি সিদ্ধান্তে ভুক্তভোগী দ্বিতীয়জন। মুখ খোলায় সেই শিক্ষককেই ফোনে হুমকি দিলেন এসএসসি চেয়ারম্যান।
[ আরও পড়ুন: রাস্তায় বৃষ্টি উপভোগ গজরাজের! যাত্রী নিয়ে দীর্ঘক্ষণ আটকে রইল বাস]
জানা গিয়েছে, পূর্ব মেদিনীপুরের কাঁথির বাসিন্দা নন্দীশ নিয়োগী সুন্দরবনের বাসন্তী সেন্ট জেভিয়ার্স হাই স্কুলে গণিত বিষয়ের শিক্ষক। প্রধান শিক্ষক নিয়োগের পরীক্ষায় পাস করার পর এসএসসি তাঁকে এগরার নেগুয়া সুন্দর নারায়ণ হাইস্কুলের দায়িত্ব নেওয়ার চিঠি দেয়। কিন্তু ওই স্কুলে গত তিন বছর ধরে প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব সামলাচ্ছেন নিরুপম গিরি। একই স্কুলে দু’জন প্রধান শিক্ষক থাকতে পারেন না। নিরুপমবাবুই দায়িত্বে থাকবেন। কোনও ভূমিকা না থাকলেও মাঝখান থেকে ‘বলি’ হলেন নন্দীশবাবু। সুন্দবনের এই শিক্ষক জানান, তাঁর কাঁথির বাড়িতে থাকেন বয়স্ক বাবা-মা। বাড়ির কাছে পোস্টিং পেয়ে তিনিও খুব আনন্দে ছিলেন। তবে ‘রেকমেন্ডেশন লেটার’ পাওয়ার পরে তিনি জানতে পারেন, যে স্কুলে তাঁকে পাঠানো হচ্ছে, সেখানে ইতিমধ্যে একজন প্রধান শিক্ষক রয়েছেন। এই সমস্যার কথা এসএসসি-কে জানাতে গিয়ে চরম হেনস্তার মুখে পড়েন নন্দীশবাবু। সোশ্যাল নেটওয়ার্কে নিজের হতাশার কথা যানান তিনি। অভিযোগ করেন, এসএসসি চেয়ারম্যান তাঁর সঙ্গে দুর্ব্যবহার করেছেন। বলেছেন, ওই স্কুলে যে ইতিমধ্যে প্রধান শিক্ষক রয়েছেন, তা জানার দায়িত্ব না কি নন্দীশবাবুরই।
[ আরও পড়ুন: দুশ্চিন্তার অবসান, বাংলাদেশে হদিশ মিলল নিখোঁজ ২৫ জন ভারতীয় মৎস্যজীবীর ]
এখানেই শেষ নয়, রবিবার রাত এগারোটার পর এসএসসি চেয়ারম্যান সৌমিত্র সরকার তাঁকে ফোন হুমকি দেন বলেও অভিযোগ করেন নন্দীশবাবু৷ তিনি জানান, তাঁর বিরুদ্ধে সাইবার ক্রাইমে অভিযোগ করা হবে বলে হুমকি দেওয়া হয়েছে। যদিও নিজের বক্তব্যে এখনও অনড় রয়েছেন সুন্দরবনের স্কুলের সহ-শিক্ষক৷ তাঁর আক্ষেপ, “আমি কী এমন অপরাধ করলাম যে আমাকে এমন হুমকির মুখে পড়তে হল। রবিবার রাত থেকে মানসিকভাবে আমি এবং আমার পরিবার বিপর্যস্ত।” ওই শিক্ষককে ফোনের কথা স্বীকার করেছেন এসএসসি চেয়ারম্যান। সৌমিত্রবাবুর দাবি, “কোন স্কুলে প্রধান শিক্ষক আছেন বা নেই তা দেখার দায়িত্ব আমার নয়। স্কুলশিক্ষা দপ্তরের পাঠানো রিপোর্টের ভিত্তিতেই আমরা নিয়োগ করি। আমি ওই শিক্ষককে ফোন করেছিলাম। তবে কোনও হুমকি দিইনি।”
তিন বছর ধরে দায়িত্বে থাকা নেগুয়া সুন্দরনারায়ণ হাই স্কুলের প্রধান শিক্ষক বলেন, “ইতিমধ্যে দু’বার পোস্ট ভেরিফিকেশন হয়েছে। ২০১৬ সালের জুলাই মাস থেকে আমি যে এই স্কুলে প্রধানশিক্ষক হিসাবে আছি তা জানিয়েছি। তারপরও কী করে এমন হল বুঝতে পারছি না।” বিষয়টি শুনে স্বাভাবিকভাবেই স্তম্ভিত শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়। বুধবার বিধানসভার লবিতে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, “কোন স্কুলে শূন্যপদ আছে তা জানার দায়িত্ব প্রার্থীর নয়। এসএসসি চেয়ারম্যানের কাছে এই আচরণের কৈফিয়ত চাইব।” এ প্রসঙ্গে স্কুলশিক্ষা দপ্তরের এক আধিকারিককের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলেও তিনি কোনও মন্তব্য করতে চাননি।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.