শ্রীকান্ত পাত্র, ঘাটাল: ইংরেজের গুলিতে নিহত দাসপুরের (Daspur) ১৪ জন স্বাধীনতা সংগ্রামীর স্মরণে নির্মিত শহিদবেদী জলের তলায়! চারপাশে ঝোপঝাড়ে ভরতি। নাহ, সরকারি বা বেসরকারি কেউই উদ্যেগ নেয়নি শহিদবেদী পরিষ্কারের। অথচ কয়েকঘণ্টা পর সারা দেশের মতোই ৭৪ তম স্বাধীনতা দিবস পালনে মেতে উঠবে দাসপুরও।
গান্ধীজীর লবণ আইন আন্দোলনে অংশ নিয়ে ১৯৩০ সালের ৬ জুন দাসপুরের চেঁচুয়াহাটের ১৪ জন স্বাধীনতা সংগ্রামী ইংরেজ পুলিশের গুলিতে প্রাণ দিয়েছিলেন। কত মানুষ সারা জীবনের জন্য পঙ্গুত্ব বরণ করেছিলেন তার হিসেব নেই সরকারি নথিতে। মাসের পর মাস ইংরেজ পুলিশের অত্যাচারের হাত থেকে রেহাই পেতে কত মানুষ ঘরছাড়া হয়েছে তারও হিসাব কেউ রাখেনি। ১৯১৯ সালের জালিওয়ানবাগের নৃশংস হত্যাকাণ্ডের ঠিক ১১ বছরের মাথায় দাসপুরে ঘটে গিয়েছিল এই নৃশংস হত্যালীলা। যে ঘটনার তীব্র নিন্দা করেছিলেন স্বয়ং গান্ধীজী। সে দিনের সেই ঘটনা পাঠ্য বইয়ে ঠাঁই পায়নি। এমনকী সরকারি উদ্যোগে তৈরি হয়নি শহিদবেদীও। অনেক পরে জাতীয় কংগ্রেসের উদ্যোগে পলাশপাই নদীর পাড়ে নির্মিত হয় এই শহিদবেদী। প্রতিবছর সেই বেদীতে ১৪ জন স্বাধীনতা সংগ্রামীর স্মৃতিতে শ্রদ্ধা জানিয়ে থাকেন দাসপুরের মানুষ। পলাশপাই নদী সংস্কার করতে গিয়ে বালিকাদায় আগেই ঢেকে গিয়েছিল সেই বেদী। পরে বেদীর চারপাশে তৈরী হয় নালা। সদ্য বর্ষার জলে আধডোবা হয়ে গিয়েছে শহিদবেদীটি। ঢেকে গিয়েছে ঝোপ জঙ্গলে।
কী বলছেন রাজনৈতিক দলের নেতারা ? জাতীয় কংগ্রেসের দাসপুর শাখার সভাপতি অংশুমান মাজি বলেন, “ এটা অবশ্যই আমাদের ত্রুটি। আমরা বারবার সরাকারের কাছে ওই জায়গায় একটি স্থায়ী শহিদবেদী নির্মাণের দাবি করে আসছি। কিন্তু সরকারের কোনও উদ্যোগ নেই। ফলে আমরা কিছুটা হতাশই বলতে পারেন । ” যাঁর উদ্যোগে একসময় এই শহিদবেদী নির্মাণ করা হয়েছিল বর্ষীয়ান কংগ্রেস নেতা অধুনা স্থানীয় নন্দনপুর দুই নম্বর গ্রাম পঞ্চায়েতের তৃণমূলের উপপ্রধান গোপাল নন্দী বলেন, “ বর্তমান প্রশাসনের উদ্যোগে একটি স্থায়ী শহিদবেদী নির্মাণের চেষ্টা চলছে। ওই শহিদবেদীর জায়গা নিয়ে একটি জটিলতা তৈরি হওয়ায় আমরা আর গুরুত্ব দিচ্ছি না। তবে ওই শহিদদের স্মরণে প্রতি বছর আমরা শহিদ দিবস পালন করি। ” দাসপুরের সিপিএম নেতা গণেশ সামন্ত বলেন, “ আমরা প্রতি বছর ৬ জুন ওই স্থানে শহিদ দিবস উদযাপন করি। স্বাধীনতা দিবসের দিন কোনও অনুষ্টান করা হয় না।” অনাদর অবহেলায় শহিদবেদী নিয়ে সরব হয়েছেন ঘাটালের বিদ্দজনরা। ঘাটালের বিশিষ্ট আঞ্চলিক ইতিহাসবিদ রোহিনীনাথ মঙ্গল বলেন, “ দাসপুরের ওই ঘটনা আজও আমাদের শিহরণ তোলে। খুব খারাপ লাগছে অনাদরে অবহেলায় পড়ে রয়েছে শহিদবেদীটি। শহিদদের যথাযথ সম্মান জানাতে না পারলে শহিদবেদী নির্মাণ করে তাঁদের অসম্মান জানানো ঠিক নয়।”
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.