Advertisement
Advertisement

সন্তান ভূমিষ্ঠ হতেই ‘বেঁচে উঠলেন’ মা

কার্ডিও পালমোনারি অ্যারেস্ট’ হওয়া সেই প্রসূতিকে লেবার রুমেই ঝুঁকি নিয়ে ‘ব্লেড’ চালিয়ে ‘পেরিমর্টেম সিজার’ করলেন বাঁকুড়া সম্মিলনী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের কতর্ব্যরত এক চিকিৎসক৷ বাচ্চা ভূমিষ্ঠ হওয়ার পর প্রায় অলৌকিকভবেই প্রাণের সঞ্চার হল প্রসূতির শরীরে৷

A rare incident where mother gets her life back after caesar
Published by: Sangbad Pratidin Digital
  • Posted:May 18, 2016 11:16 am
  • Updated:May 18, 2016 11:16 am  

গৌতম ব্রহ্ম: নিয়ম মানতে গেলে হয়তো দু’টি প্রাণই ঝরে যেত!

ভোর পাঁচটা পয়ত্রিশ থেকে সাড়ে ছ’টা৷

Advertisement

এক ঘণ্টার নাছোড়বান্দা লড়াই৷ অ্যানিস্থিশিষ্ট নেই৷ দু’টি ফুসফুস জলে ভর্তি৷ হৃৎপিণ্ড স্তব্ধ৷ ‘একল্যাম্পসিয়া’-য় আক্রান্ত প্রসূতিকে  ওটি রুমে নিয়ে যাওয়ারও সময় নেই ৷

‘কার্ডিও পালমোনারি অ্যারেস্ট’ হওয়া সেই প্রসূতিকে লেবার রুমেই

ঝুঁকি নিয়ে ‘ব্লেড’ চালিয়ে ‘পেরিমর্টেম সিজার’ করলেন বাঁকুড়া সম্মিলনী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের কতর্ব্যরত এক চিকিৎসক৷ বাচ্চা ভূমিষ্ঠ হওয়ার পর প্রায় অলৌকিকভবেই প্রাণের সঞ্চার হল প্রসূতির শরীরে৷ আনন্দে চোখে জল চলে এল লেবার রুমের অন্য প্রসূতিদের৷এদিকে, ডাক্তারের সাহস দেখে স্তম্ভিত চিকিৎসককুল৷ প্রসূতি ও তাঁর সন্তানকে বাঁচাতে না পারলে নিঃসন্দেহে সমালোচনার ঝড় উঠত ওই চিকিৎসকের বিরু‌দ্ধে৷ হয়তো চাকরি চলে যেত৷ নিদেনপক্ষে শো-কজ হত৷ কিংবা প্রসূতির পরিবার দায়ের করত অনিচ্ছাকৃত খুনের মামলা৷ সেই সব কিছুর তোয়াক্কা না করে দু’টি জীবনকে বাঁচাতে অভাবনীয় কাণ্ড করে বসলেন ডাক্তার৷ মরা মানুষকে কেটে যেভাবে ময়নাতদন্ত হয়, অনেকটা সেই ধাঁচেই প্রসূতিকে অবশ করার ওষুধ না দিয়েই ‘পেরিমর্টেম সার্জারি’ করলেন চিকিৎসক৷ মৃত্যুর মুখ থেকে ফিরিয়ে আনলেন দু’টি জীবন৷ এই জন্যই বোধহয় চিকিৎসকদের ভগবনের দূত বলা হয়৷

প্রসূতির নাম কবিতা মহাপাত্র৷  বাড়ি বাঁকুড়ার ছাতনা থানা এলাকার জামতোড়া কাঠারিয়া গ্রামে৷ গত ৩ মে ভোর পাঁচটা পয়ত্রিশ নাগাদ হঠাৎ কবিতার প্রবল শ্বাসকষ্ট শুরু হয়৷ তাঁকে অত্যন্ত সঙ্কটজনক অবস্থায় বাঁকুড়া মেডিক্যাল কলেজে নিয়ে আসা হয়৷ ইমার্জেন্সিতে তখন ডিউটিতে ছিলেন ডা. অনির্বাণ দাশগুপ্ত৷ তিনি জানান, ছ’টা নাগাদ প্রসূতির রক্তচাপ বাড়তে শুরু করে৷ ১৬০ বাই ১১০৷ ছ’টা নাগাদ বন্ধ হয়ে যায় শ্বাস-প্রশ্বাস৷ স্তব্ধ হয়ে যায় হৃৎপিণ্ড৷ সঙ্গে সঙ্গেই ডাক্তার অ্যানেস্থেসিস্টকে ‘কল’ করা হয়৷ সেই সঙ্গে শুরু করা হয় সিপিআর৷ কিন্তু, কিছুতেই হৃৎস্পন্দন চালু করা যাচ্ছিল না৷ অন্য অপারেশন চলায় আটকে গিয়েছিলেন অ্যানিস্থিশিষ্টও৷ বাধ্য হয়ে সাড়ে ছ’টায় লেবার রুমে বসেই অপারেশন করেন অনির্বাণ৷ ব্লেড চালিয়ে সিজার করে কবিতার জঠর থেকে টেনে বের করেন এক কন্যাসন্তানকে৷ পাঠান এসএনসিইউ-তে৷

এরপর শুরু হয় যমে-মানুষে টানাটানি৷ অপারেশন চলাকালীন সিপিআর একবারে জন্যও বন্ধ হয়নি৷ অনির্বাণের সহকারীরা পাম্প করেই যাচ্ছিলেন৷ কিন্তু হৃৎস্পন্দন চালু হচ্ছিল না৷ পরে অ্যানেস্থেসিস্ট এসে ফুসফুস থেকে জল বের করে ভেণ্টিলেশনে দেন কবিতাকে৷ সোয়া সাতটা নাগাদ ফের পাওয়া যায় নাড়ির স্পন্দন৷ সচল হয় ফুসফুস, হৃৎপিন্ড৷ আস্তে আস্তে জ্ঞান ফেরে কবিতার৷ পরের দিনই আইসিইউ থেকে ‘অবজারভেশন ওয়ার্ড’-এ স্থানান্তরিত করা হয় তাঁকে৷ ১০ মে সন্তানকে কোলে নেন কবিতা৷ নিয়ম মেনে হয় ‘ক্যাঙ্গারু মাদার কেয়ার’-ও৷ কবিতা এখন স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞ ডা. দেবজ্যোতি সাঁতরার অধীনে চিকিৎসাধীন৷  অনির্বাণ জানালেন, “ওই পরিস্থিতিতে অন্য কোনও উপায় ছিল না৷ বিদেশে এমনটা হয়৷ মা মরণাপন্ন হলে ‘পেরিমর্টেম সার্জারি’ করে সন্তানকে বের করে মাকে বাঁচানোর একটা শেষ চেষ্টা করা হয়৷ আমিও সেই নিয়ম মেনেই কাজ করেছি৷”

বাঁকুড়া মেডিক্যালের অধ্যক্ষ ডা. পার্থপ্রতিম প্রধান জানান, মা মারা যাওয়ার পাঁচ মিনিটের মধ্যে সিজার করতে পারলে সন্তানকে বাঁচানো যায়৷ অনির্বাণ প্রসূতির স্বামী মহাদেব মুর্মূর মৌখিক সম্মতি নিয়ে সেটাই করার চেষ্টা করেছেন৷ ঝুঁকি নিয়েছেন৷ এক মিনিট দেরি হলে হয়তো দু’টো প্রাণই ঝরে যেত৷ কিন্তু ভাগ্য সাহসীদের সহায় হয়৷ সন্তান ভূমিষ্ঠ হওয়ার পর মায়ের শরীরেও নতুন করে প্রাণসঞ্চার হল৷ এটা সত্যিই অভাবনীয়৷

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

Advertisement