ছবি: প্রতীকী
দেবব্রত মণ্ডল, বারুইপুর: চলন্ত বাসের মধ্যে হঠাৎ নবজাতকের (Newborn) গলা। ব্যাপার বুঝতে অসুবিধা হয়নি বাসযাত্রী নার্সের। চিৎকার করে তিনি প্রথমে বাস থামান। বাস থামতেই সন্তান প্রসবরত মহিলার দিকে এগিয়ে গেলেন। তাঁর অভিজ্ঞতা ও তত্বাবধানে নিরাপদেই পৃথিবীর আলো দেখল এক কন্যা। বাসের মধ্যে এমন আনন্দদায়ক ঘটনা ঘটে গেল গড়িয়ার কাছে, এই শহরেই (Kolkata)।
হাসপাতালের অপারেশন থিয়েটারে বহু নবজাতকের জন্ম দিয়েছেন নার্স বীণা মণ্ডল। বর্তমানে তিনি ক্যানিং কোভিড হাসপাতালে কর্তব্যরত। কিন্তু বাসের মধ্যে এইভাবে কখনও সন্তান প্রসব করানোর অভিজ্ঞতা মোটেই ছিল না তাঁর। তাই তিনি বুঝতে পারছিলেন কীভাবে সবটা ঠিক করবেন। তবু পিছু হটেননি। চেষ্টা করেছেন নিজের অভিজ্ঞতা আর দক্ষতার উপর ভরসা রেখে। সবকিছু ঠিকঠাক মিটতে প্রায় ঘণ্টাখানেক সময় লেগে গেল। ধৈর্য ধরে বাস থেকে নেমে যাত্রীরাও এই অভিজ্ঞতার স্বাদ ভাগ করে নিলেন। বিশেষত যেখানে নবজাতকের আবির্ভাব, সেখানে ধৈর্য না দেখিয়ে থাকা যায় নাকি?
চলন্ত বাস (Running Bus) থামিয়ে সেখানেই প্রসব করানোর অভিজ্ঞতা ফোনে ‘সংবাদ প্রতিদিন’কে জানালেন নার্স বীণা দেবী। তিনি বলেন, “শুক্রবার বাইপাসের কাছে একটি বেসরকারি হাসপাতালে গিয়েছিলাম ছেলেকে ডাক্তার দেখাতে। সেখান থেকে বাস ধরে কামালগাছি নামব বলে বাসে উঠি। গড়িয়ার ঢালাই ব্রিজ অতিক্রম করার পরে দেখি, একজন মহিলা প্রসব যন্ত্রণায় ছটফট করছে। তার পোশাকের মধ্যেই বাচ্চা প্রসব হচ্ছে। সঙ্গে সঙ্গে তাঁর গায়ের কাপড় খুলে বাসের মধ্যে বাচ্চা জন্মানোর ব্যবস্থা করি। নাড়ি কাটার জন্য হাতের কাছে কিছুই ছিল না। হঠাৎ এক ব্যক্তি একটি ব্লেড বের করে দিলে সেটিকে স্যানিটাইজ করে নাড়ি কেটে দিই। মহিলার ওড়না ছিঁড়ে তা দিয়ে নবজাতকের কাটা নাড়ি বেঁধে দিই। গ্লাভস না থাকায় একটি প্লাস্টিকের ক্যারি ব্যাগ হাতে বেঁধে বাচ্চা হওয়ার পরে যে সমস্ত কাজকর্মগুলো থাকে, সেগুলো করেছি। তারপর বারুইপুর হাসপাতালে ভরতি হওয়ার পরামর্শ দিই।”
বাচ্চা প্রসব করানোর পর বীণাদেবী নেমে যান তাঁর নির্দিষ্ট গন্তব্যে। বাসের মধ্যে বাচ্চা জন্ম দেওয়া আঙুরজান বিবির সঙ্গে বছর দেড়েকের ছেলে ছাড়া তখন কেউই ছিলেন না। সেও মায়ের এই অবস্থা দেখে কান্নাকাটি শুরু করে দেয়। আঙুরজান বিবি বাসেই বাচ্চাকে নিয়ে সোজা চলে যান ঘুটিয়ারি শরিফে, তাঁর নিজের বাড়িতে। তবে সেখানেও তিনি হাসপাতালে ভরতি হননি। ঘুটিয়ারি শরিফের ব্লক হাসপাতালে দায়িত্বে থাকা স্বাস্থ্য আধিকারিক রঞ্জন মণ্ডল জানান, ”আপাতত এরকম কোনও রোগী এখনও হাসপাতালে ভরতি হয়নি। তাদের খুঁজে বের করার চেষ্টা হচ্ছে। মা ও সন্তানের উপযুক্ত চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হবে।”
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.