চন্দ্রশেখর চট্টোপাধ্যায়, আসানসোল: মৃত সুরেন্দ্র আগরওয়ালের শব কাঁধে বহন করে রামনাম করতে করতে শ্মশানে গেলেন বন্ধু শাহিদ খান৷ দায়িত্ব নিয়ে শাহিদ হিন্দুরীতি মেনে বন্ধু সুরেন্দ্রর সৎকার করলেন৷ শুধু সৎকার নয়, ক্যানসার আক্রান্ত সুরেন্দ্র আগরওয়ালকে সাতমাস ধরে নিজের বাড়িতে রেখে চিকিৎসাও করিয়েছেন শাহিদ৷ সম্প্রীতির অনন্য নজিরের সাক্ষী রইল আসানসোলের সীতারামপুর৷
মুম্বইয়ে কাজ করতে গিয়ে রাজস্থানের আজমেরের বাসিন্দা সুরেন্দ্র আগরওয়ালের সঙ্গে বন্ধুত্ব হয় সীতারামপুরের শাহিদ খানের৷ তিনি সুরেন্দ্রর থেকে প্রায় ২০ বছরের ছোট হলেও বন্ধুর মতো সম্পর্ক৷ এরপর মুম্বইয়ের কাজ ছেড়ে সীতারামপুর চলে আসেন শাহিদ৷ তবে বন্ধুত্ব আর যোগাযোগ থেকেই যায়৷ শাহিদ বলেন, ‘‘সুরেন্দ্র আমার স্ত্রীকে বেটি বলে ডাকত৷ মুম্বই ছেড়ে সুরেন্দ্র পুণেতে কাজ করার সময় ছুটিতে আমার বাড়ি আসত৷ উনি একা ছিলেন৷ আত্মীয় পরিজন কেউ নেই৷ মাস সাতেক আগে খবর পাই সুরেন্দ্র অসুস্থ৷ তারপর জানতে পারি সে ক্যানসার আক্রান্ত৷ ওরাল ক্যানসার হয়েছিল ওঁর৷ যখন চিকিৎসা করাই ডাক্তাররা বলেন দেড় মাস আর বাঁচবেন৷ তাই বন্ধুকে একা না ফেলে আমি সঙ্গে করে বাড়িতে নিয়ে আসি৷ তাঁকে দুর্গাপুর, কলকাতা ও বেঙ্গালুরুতেও চিকিৎসার জন্য নিয়ে যাই৷ এইভাবেই সাতমাস ধরে তাঁকে সেবা করি৷’’
শাহিদের স্ত্রী সুরেন্দ্রকে নিরামিষ রান্না করে দিত৷ আলাদা ঘরের ব্যবস্থাও করেছিলেন৷ যে ঘরে সাইবাবা, বজরংবলীর ছবি রয়েছে৷ সুরেন্দ্রকে তাঁর ধর্মীয় সম্মান দিয়েই রেখেছিলেন শাহিদের পরিবার৷ সুরেন্দ্র আগরওয়ালের মৃত্যুর পর হিন্দু রীতি মেনে তুলসি পাতা, চন্দন, ফুল দিয়ে সাজানো হয় দেহ৷ নিজের কাঁধে শাহিদ শব নিয়ে রামনাম করতে করতে তাঁকে বিদায়গড় শ্মশানে নিয়ে যান৷ চোখের জলে বন্ধুর অন্তিম সংস্কার করেন৷
আসানসোল শহরের প্রবেশপথে লেখা রয়েছে ভ্রাতৃত্বের বার্তা৷ সেই এলাকাতেই এমন ঘটনা ওই বার্তারই বাস্তব প্রতিফলনও বলছেন অনেকেই৷
দেখুন ভিডিও:
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.