বাঁদিকে দ্বিতীয় স্থানাধিকারী বিল্টু মাজি। ডানদিকে প্রথম স্থানাধিকারী সিঞ্চনস্নিগ্ধ।
শেখর চন্দ্র ও দেব গোস্বামী: ইউপিএসসি’র ইন্ডিয়ান স্ট্যাটিস্টিক্যাল সার্ভিস (আইএসএস) পরীক্ষায় বাংলার জয়জয়কার। এই সর্বভারতীয় পরীক্ষায় প্রথম ও দ্বিতীয় স্থান অধিকারী দুজনই বাংলার। প্রথম স্থান ছিনিয়ে এনেছেন আসানসোলের সিঞ্চনস্নিগ্ধ অধিকারী। দ্বিতীয় স্থান অধিকার করেছেন আউশগ্রামের ‘চাষার ব্যাটা’ বিল্টু মাজি।
সিঞ্চন আসানসোলের ইসমাইল মাদার টেরেজা সরণির বাসিন্দা। তিনি রামকৃষ্ণ মিশনের প্রাক্তন ছাত্র। পরে কলকাতার আইএসআই থেকে স্ট্যাটিস্টিক্সে স্নাতকোত্তরের পড়া শেষ করেন। নিম্ন মধ্যবিত্ত পরিবারে তার বেড়ে ওঠা। বাবা প্রদীপ অধিকারী মাইন্স বোর্ড অব হেলথের কর্মী। মা সুজাতাদেবী গৃহবধূ। কঠিন অধ্যবসায়ের পর এই সাফল্যের পুরো কৃতিত্বটাই সিঞ্চন দিতে চান তাঁর বাবা-মাকে। প্রদীপবাবু বলছিলেন, “ইউপিএসসিতে পাশ করা ওঁর স্বপ্ন ছিল। কিন্তু দেশের মধ্যে প্রথম স্থান দখল করবে, তা ভাবিনি। খুব ভালো লাগছে। শুধু পরীক্ষায় প্রথম নয়, প্রশাসক হিসাবেও যেন এক নম্বর হয়, এটাই চাইব।”
অন্যদিকে, দ্বিতীয় স্থান অধিকার করা বিল্টুর লড়াইটা যেন আরও কঠিন। বাবা কৃষক। বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্ট্যাটিস্টিক্সে স্নাতক পাশ করার পরই সংসারে অভাবের কারণে কাজ যোগ দেন। পোস্ট অফিসে চাকরি পান তিনি। কাজের পাশাপাশি চলতে থাকে পড়াশোনা। ডব্লিউবিসিএস ও ইউপিএসসি মিলিয়ে তিনবার অসফল হন। তবে হাল ছাড়েননি। করে দেখানোর জেদ চেপে যায় তাঁর। এবার নজরকাড়া সাফল্য বিল্টুর।
প্রত্যেকের সাফল্যের পিছনে নিজেদের কঠিন লড়াই রয়েছে। সেই লড়াইয়ে তাঁদের সঙ্গে সঙ্গে জিতেছে বাংলাও। এই জয়ের প্রভাব এখানেই শেষ নয়! বঙ্গের কোনায় কোনায় ছড়িয়ে থাকা এক টালির চালের ঘরে বসে জেতার সাহস পাচ্ছে কোনও এক যুবক। পরিবারের দায়িত্বের ভারে নুইয়ে পড়া সদ্য তরুণের চোখও হয়তো চিকচিক করে উঠছে। বিল্টুর কথায়, “আমি নিয়মিত ভাগবত গীতার অধ্যায়গুলি শুনতাম। গীতার কর্মযোগ আমার সাহস জুগিয়েছে। স্বামী বিবেকানন্দ বলেছিলেন ‘লক্ষ্যে না পৌঁছনো পর্যন্ত হাল ছেড়ো না।”
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.