ছবি: প্রতীকী।
দিব্যেন্দু মজুমদার, হুগলি: পাওনা টাকা মিটিয়ে দেওয়ার নাম করে হিন্দি সিনেমার কায়দায় ব্যবসায়ীকে অপহরণ। তারপর ১৫ লক্ষ টাকা মুক্তিপণ দাবি করে পরিবারকে ফোন। কিন্তু শেষরক্ষা হল না। অপহরণের ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই ব্যবসায়ী-সহ তার দুই কর্মচারীকে উদ্ধার করল পুলিশ। ধৃত অভিযুক্তরা।
পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, হুগলির (Hooghly) চুঁচুড়ার বাসিন্দা ওই ব্যবসায়ীর নাম মিঠুন কুণ্ডু। নবদ্বীপের বাসিন্দা জনৈক মুকুন্দকে ১ লক্ষ ৭৫ হাজার টাকা ধার দিয়েছিলেন তিনি। বহুদিন পেরিয়ে গেলেও টাকা ফেরত দিচ্ছিল না মুকুন্দ। বরাবরই বকেয়া টাকা দ্রুত ফেরত দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিত সে। এদিকে করোনা পরিস্থিতিতে লকডাউনের কারণে মিঠুনের ব্যবসার অবস্থা খারাপ। তাই টাকার প্রয়োজন হয়ে পড়েছিল। তিনি বারবার মুকুন্দকে টাকা শোধ করার জন্য চাপ দিতে থাকেন। এই পরিস্থিতিতে মিঠুনকে নবদ্বীপে ডেকে পাঠায়। মিঠুন তাঁর প্রেসের দুই কর্মীকে নিয়ে বুধবার সকালে গাড়িতে করে নবদ্বীপ রওনা দেন। তাঁরা ধুবুলিয়া পৌঁছতেই মুকুন্দ ফোন করে গাড়ি দাঁড় করাতে বলে। জানায়, একসঙ্গে ইস্কনের মন্দিরে দুপুরে খাওয়া দাওয়া সেরে তারপর টাকা মিটিয়ে দেবে। সরল বিশ্বাসে ধুবুলিয়ায় গাড়ি দাঁড় করান মিঠুন। মুকুন্দ তার দুই সঙ্গীকে নিয়ে গাড়িতে ওঠার পরই মাথায় আগ্নেয়াস্ত্র ঠেকিয়ে ব্যবসায়ী ও তাঁর দুই কর্মচারীকে অপহরণ করে ধুবুলিয়ার একটি পরিত্যক্ত হাসপাতালে নিয়ে যায়। তিনজনকে দড়ি দিয়ে বেঁধে বেধড়ক মারধর করে বলে অভিযোগ। এরপর মিঠুনের কাছ থেকে ৩০ লক্ষ টাকা মুক্তিপণ দাবি করে। শেষ পর্যন্ত অপহরণকারীরা মুক্তিপণ ১৫ লক্ষ টাকা নেবে বলে সিদ্ধান্ত নেয়। মিঠুনের ফোন থেকেই তার শ্যালক অমিত কুণ্ডুকে ফোন করে অপহরণকারীরা। এরপরই ব্যবসায়ীর পরিবারের সদস্যরা চুঁচুড়া থানায় অপহরণের ঘটনার কথা জানান।
চন্দননগর কমিশনারেটের ডেপুটি পুলিশ কমিশনার তথাগত বসুর নেতৃত্বে পুলিশের একটি দল অমিতকে নিয়ে নবদ্বীপের উদ্দেশে রওনা দেয়। পুলিশের কথামতো অমিত তাঁর ফোন থেকে জামাইবাবুর নম্বরে ফোন করে কোথায় টাকা দিতে হবে জানতে চায়। অমিতকে সম্পূর্ণ আলাদা একটা গাড়িতে তুলে দিয়ে পিছন থেকে ফলো করতে থাকে পুলিশের একটি দল। ইতিমধ্যে অপহরণকারীরা বারংবার লোকেশান পরিবর্তন করে একেক বার এক একেক জায়গায় টাকা দেওয়ার কথা বলে। অপহরণকারীরা জানায়, মায়াপুর রোডে টাকার লেনদেন হবে। তখন গভীর রাত। অপহরণকারীরা গাড়ি করে এসে অমিতের গাড়ি আটকায়। পিছনেই যে পুলিশের একটি দল, তা বুঝতে পারেনি অপহরণকারীরা। তখনই দুই অপহরণকারী বিশ্বনাথ সাহা ও সুজিত ঘোষ পুলিশের হাতে ধরা পড়ে যায়। মারুতি গাড়িটি বাজেয়াপ্ত করেছে পুলিশ। হাসপাতালের ভিতর থেকে অপহৃত মিঠুন কুণ্ডু ও তাঁর দুই কর্মচারীকে উদ্ধার করলেও মূল পাণ্ডা মুকুন্দ পালিয়ে যায়।
তথাগত বসু জানান, অপহরণকারীরা যেহেতু মিঠুনের ফোন ব্যবহার করছিল তাই তাঁর মোবাইলের টাওয়ার লোকেশান ধুবুলিয়ায় পাওয়া যাচ্ছিল। এই বিষয়ে ধুবুলিয়া থানা ও কৃষ্ণনগর থানার পুলিশ তাদের যথেষ্ট সহযোগিতার পাশাপাশি তাঁদের একটি টিম বাতকুল্যা বাইপাসের উপর নজরদারি চালাতে থাকেন। ধৃত দুই জনকে জেরা করে পুলিশ জানতে পারে অপহরণের মূল পাণ্ডা মুকুন্দ নিজে একজন ব্যবসায়ী। এদের একটা দল এই ধরনের অপরাধমূলক কাজের সঙ্গে যুক্ত। এর আগেও পাঞ্জাবের এক ব্যবসায়ীকে এরা আটকে রেখেছিল। সেই সময় পাঞ্জাব পুলিশ এসে সেই ব্যবসায়ীকে উদ্ধার করে। তথাগতবাবু জানান, ধৃতদের পুলিশ হেফাজতে নিয়ে এই পুরো চক্রটাকে ধরার জন্য বিভিন্ন জায়গায় রেড করা হবে। তবে এই ঘটনার পর থেকেই মিঠুনবাবু মানসিকভাবে এতটাই বিপর্যস্ত যে কথা বলার অবস্থায় নেই। তবে তার পরিবার পুলিশের ভূমিকায় রীতিমতো খুশি।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.