সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়, দুর্গাপুর: সম্পত্তির কাছে ফের ফিকে হয়ে গেল অভিভাবক-সন্তান সম্পর্ক। এবার সম্পত্তি হাতিয়ে বৃদ্ধ বাবাকে খুনের অভিযোগ উঠল দুই ছেলের বিরুদ্ধে। পাঁচদিন বদ্ধ থাকার পর হাত-পা বাঁধা অবস্থায় ঘর থেকে উদ্ধার করা হয়েছে ওই বৃদ্ধকে। চাঞ্চল্যকর ঘটনাটি ঘটেছে দুর্গাপুরের কাঁকসা থানার প্রয়াগপুর মোড়ে।
কাঁকসা থানার প্রয়াগপুর মোড়ের বাসিন্দা বছর পঁচাশির অমরনাথ নারান। বছর আটেক আগে মৃত্যু হয়েছে তাঁর স্ত্রীর। এরপর থেকে দুই ছেলের সঙ্গেই থাকতেন অমরনাথবাবু। অভিযোগ, প্রথম থেকেই বাবার সম্পত্তির উপর নজর ছিল তাঁর দুই ছেলে অশোককুমার, রবীন্দ্রকুমার ও নাতির। তাই বরাবরই বৃদ্ধের উপর অকথ্য অত্যাচারও করত তাঁরা। জানা গিয়েছে, বছর চারেক আগে বাবার সম্পত্তি নিজেদের নামে লিখিয়ে নেন দুই ছেলে। এরপর থেকেই বাড়তে শুরু করে অত্যাচারের মাত্রা। এমনকী বাবাকে খাবার দেওয়াও বন্ধ করে দেয় তারা। শুধু খাবারই নয়, জলও দেওয়া হয়নি তাঁকে। সেইসঙ্গে মারধর তো চলতই।
স্থানীয় সূত্রে খবর, শ্বশুরের উপর অত্যাচার মোটেই গ্রহণ করতে পারেননি বৃদ্ধের ছোট পুত্রবধূ। তাই তিনি বাপের বাড়ি চলে যান৷ তাতেও অবস্থার পরিবর্তন হয়নি। অভিযোগ, শেষ পাঁচ দিন ধরে চরমে পৌঁছায় অত্যাচারের মাত্রা। অমরনাথবাবুকে দোতলায় আটকে তাঁর মুখে কাপড় গুঁজে দেওয়া হয়, যাতে তিনি চিৎকার করতে না পারেন। গোঙানির শব্দ চাপা দিতে তারস্বরে চালিয়ে দেওয়া হয় টিভি। তা সত্ত্বেও কোনওক্রমে বিষয়টি টের পেয়ে যান স্থানীয়রা। খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে যায় কাঁকসা থানার পুলিশ। প্রথমে বিভিন্নভাবে পুলিশকে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করে অভিযুক্তরা। বেশ কিছুক্ষণ পর দোতলার তালা ভেঙে অচৈতন্য অবস্থায় বৃদ্ধকে উদ্ধার করে পুলিশ। বাড়ি থেকেই দুই অভিযুক্তকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
অমরনাথবাবুর অভিযোগ, “চার বছর ধরে আমার উপর অত্যাচার করছে আমার দুই ছেলে। যা সম্পত্তি ছিল তা দুই ছেলেকে লিখেও দিয়েছি। কিন্তু তারপরও আমাকে মারার চক্রান্ত করেছে ওরা।” যদিও এত অত্যাচার সত্ত্বেও স্বাভাবিক নিয়মেই সন্তানের এই ভয়ংকর অন্যায়কে সামান্য করেই দেখেছেন তিনি। এখনও সন্তানদের ওপর কোনও ক্ষোভ নেই বৃদ্ধের। পুলিশের কাছে তাঁর কাতর আবেদন করেন, “ওরা ভুল করেছিল। ওদের কঠোর শাস্তি দেবেন না।” আসানসোল দুর্গাপুর পুলিশের ডিসি-১ (পূর্ব) অভিষেক মোদি বলেন, “বাবার উপর লাগাতার অত্যাচারের অভিযোগে দুই ছেলেক গ্রেপ্তার করা হয়েছে।শুক্রবার তাদের আদালতে পেশ করা হবে।”
ছবি: উদয়ন গুহ রায়৷
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.