ছবি: প্রতীকী
সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: সত্যিকারের ভালবাসা বোধহয় সব পারে। তবে একতরফা ভালবাসা কি মূল্যহীন? দক্ষিণ ২৪ পরগনার ক্যানিংয়ের (Canning) ঘটনা প্রকাশ্যে আসার পর যেন সে প্রশ্ন বড় বেশি প্রাসঙ্গিক হয়ে উঠেছে। কারণ, স্রেফ স্বামীর পণের দাবি মেটাতে পারেননি বলেই গৃহবধূকে খুনের চেষ্টার অভিযোগ। বুধবার রাতে শ্বশুরবাড়ি থেকে আধপোড়া অবস্থায় উদ্ধার হলেন ওই গৃহবধূ। তবে আধপোড়া শরীরেই গৃহবধূর দাবি, “ভালই তো বেসেছিলাম। তাই সংসার করতে চেয়েছিলাম।” তাঁর দাবি শুনে তাজ্জব প্রায় সকলেই।
আজ থেকে প্রায় বছর পাঁচেক আগে বিয়ে হয় হালিমা শেখ ও শাহজামালের। ক্যানিয়ের দাঁড়িয়া গ্রামপঞ্চায়েকের রোনিয়ায় বাপেরবাড়ি হালিমার। পেশায় অটোচালর শাহজামাল গোপালপুর পঞ্চায়েতের ধর্মতলার বাসিন্দা। বিয়ের পর থেকেই সংসার কখনও সুখের ছিল না তাঁদের। হালিমার পরিবারের দাবি, শাহজামাল বাপেরবাড়ি থেকে টাকাপয়সা, নানা দামি দামি সামগ্রী নিয়ে আসার জন্য চাপ দিত। ক্রমাগত মারধর করত। বিয়ের বছর পেরতে না পেরতেই মা হন হালিমা। পুত্রসন্তানের জন্ম দেন। সকলেই ভেবেছিলেন সন্তানের মুখের দিকে তাকিয়ে হয়তো বদলে যাবে শাহজামাল। সে ভাবনাও মিথ্যে প্রমাণিত হয়। পরিবর্তে হালিমার উপর অত্যাচার বাড়তে থাকে। মাঝেমধ্যেই অত্যাচার থেকে বাঁচতে বাপেরবাড়িতে চলে যেতেন হালিমা। তবে শাহজামাল ফের বুঝিয়ে শুনিয়ে তাঁকে নিজের বাড়ি ফেরতও নিয়ে যেতেন।
ইতিমধ্যে শাহজামাল এবং হালিমার জীবনে আসে দ্বিতীয় সন্তান। তাতেও দাবি কিংবা দাবিপূরণ করতে না পারায় অত্যাচার কমেনি। বরং তা দিনে দিনে বাড়তে থাকে। ইদানীং স্ত্রীকে বাপেরবাড়িও যেতে দিত না শাহজামাল। তবে বুধবার রাতে হালিমার বাপেরবাড়ির লোকজন জানতে পারেন, তাঁদের মেয়ে অসুস্থ। এক মুহূর্ত সময় নষ্ট না করে শাহজামালের বাড়িতে দৌড়ে যান গৃহবধূর বাপেরবাড়ির লোকজন। তাঁরা গিয়ে হালিমাকে আধপোড়া অবস্থায় দেখতে পান। গৃহবধূকে উদ্ধারের সময় তাঁর শরীরে ভেজা ছিল। মাথায় এবং গায়ে ক্ষতচিহ্ন। অভিযোগ, প্রথমে ধারাল অস্ত্রের কোপ। তারপর কেরোসিন তেল ঢেলে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়। অসহ্য যন্ত্রণা সহ্য করতে না পেরে বাড়ির সামনের পুকুরে ঝাঁপ দেন হালিমা। ওই পকুরেই তাঁকে তাঁর স্বামী ও শাশুড়ি মিলে ডুবিয়ে মারার চেষ্টা করে বলেও অভিযোগ। এরপর প্রতিবেশীরা হালিমাকে উদ্ধার করে বাপেরবাড়িতে খবর দেয়।
আধপোড়া শরীরেও ওই গৃহবধূ বলেই চলেছেন স্বামীকে ভালবাসতেন। এছাড়া দুই সন্তানের মুখ চেয়ে হাজারও মারধর মুখ বুজে সহ্য করতেন। সংসার করছিলেন তিনি। ওই গৃহবধূ ক্যানিং মহকুমা হাসপাতালে ভরতি। তাঁর শারীরিক অবস্থা অত্যন্ত আশঙ্কাজনক। অভিযুক্ত স্বামী ও শাশুড়ি পলাতক। তাদের খোঁজে চলছে তল্লাশি।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.