ধীমান রায়, কাটোয়া: প্রেমিকের সঙ্গে আগেই ছক কষে রেখেছিল স্ত্রী। রাতে খাওয়াদাওয়া সেরে নির্জন জায়গায় মিলিত হওয়ার ‘টোপ’ দিয়ে স্বামীকে ডেকে নিয়ে গিয়েছিল। তারপর স্বামী-স্ত্রী দু’জনে যখন একান্ত ঘনিষ্ঠ অবস্থায়। ঠিক তখনই প্রেমিক পিছন থেকে চেপে ধরে ধারালো ব্লেড চালাতে থাকে। স্বামীর গলা থেকে ফিনকি দিয়ে রক্ত এসে লাগে স্ত্রীর মুখে, বুকে। সেই সময়েও নিজের পরিকল্পনায় অনড় স্ত্রী। প্রেমিকের হাত থেকে ব্লেডটা নিজে একবার নিয়ে চালিয়ে দেয় স্বামীর গলায়। তারপর পুকুরের জলে হাত ধুয়ে হাঁটা দেয় বাড়ির দিকে। পূর্ব বর্ধমান জেলার আউশগ্রাম থানার জামতাড়া গ্রামে মধুসূদন বাউড়ি নামে যুবকের গলার নলি কেটে খুনের ঘটনায় নয়া তথ্য পেল পুলিশ।
গত মঙ্গলবার সকালে দেহ উদ্ধারের পরেরদিনেই নিহতের স্ত্রী প্রীতি বাউড়ি ও তার প্রেমিক প্রতিবেশী যুবক মঙ্গল বাউড়িকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। তাদের নিজেদের হেফাজতে নিয়ে রবিবার মামলার পুনর্নির্মাণ করল পুলিশ। রবিবার ধৃত প্রীতি ও মঙ্গল ঘটনাস্থলে গিয়ে অভিনয় করে দেখায় কেমন করে তারা মধুসুদনকে খুন করেছিল। পুলিশ জানায়, গত সোমবার রাতে বাড়ি থেকে স্বামী মধুসূদনকে নির্জন বাগানে ডেকে নিয়ে যায় প্রীতি। তারপর সেখানে স্বামীর সঙ্গে মিলিত হয়। তার আগে ওই বাগানে লুকিয়ে ছিল মঙ্গল। ঘনিষ্ঠ অবস্থাতেই মঙ্গল পিছন থেকে মধুসূদনের উপর হামলা চালায়। পুলিশের জেরায় প্রীতি বাউড়ি জানায়, পাড়ার সম্পর্কে ভাগ্নে মঙ্গলের সঙ্গে সম্পর্কে জড়িয়ে পড়ে। ইদানিং সে মধুসূদনের সঙ্গে সম্পর্ক শেষ করার জন্য চাপ দিচ্ছিল। শেষে দু’জনে মিলেই ঠিক করে পথের কাঁটা সরিয়ে দেবে। তাই প্রেমিকের সহযোগিতায় স্বামীকে খুন করে প্রীতি।
পুলিশের জেরায় প্রীতি জানায়, ঘরে যৌনতার সময় সন্তানেরা জেগে যেতে পারে এই অজুহাত দেখিয়ে স্বামীকে পরপর দু’দিন ডেকে নিয়ে গিয়েছিল সে। প্রথম দিনেও প্রীতির প্রেমিক তা জানত। কিন্তু সেদিন মধুসূদনকে খুন করেনি তারা। পরের দিনেও খাওয়াদাওয়া সেরে স্বামী-স্ত্রী বেড়িয়ে যায়। বাড়িতে জানায় শৌচকর্ম করতে যাচ্ছে তারা। তারপর স্ত্রীর সঙ্গে আমবাগানেই যৌনতায় মাতেন মধুসূদন। ব্লেড চালানোর পরেও মঙ্গল ওই বাগানে বেশ কিছুক্ষণ নিজের গামছা দিয়ে মধুসূদনের গলায় ফাঁস দিয়ে চেপে ধরে মৃত্যু নিশ্চিত করতে। পুলিশি জেরায় এমনই জানিয়েছে সে। এদিন বিকেলে আউশগ্রাম থানার পুলিশ একটি পুতুল ও ধৃতদের সঙ্গে নিয়ে ঘটনার পুনর্নির্মাণ করে।
প্রায় সাত বছর আগে মানকরের মেয়ে প্রীতির সঙ্গে বিয়ে হয়েছিল জামতাড়া গ্রামের মধুসূদনের। তাদের দু’টি সন্তানও রয়েছে। ছেলের বয়স ৫ বছর। মেয়ে আড়াই বছরের। মেয়ের জন্মের আগে থেকেই মঙ্গলের সঙ্গে পরকীয়ায় জড়িয়ে পড়ে প্রীতি। যদিও মধুসূদন তার আঁচ পাওয়ার পর থেকেই স্বামী-স্ত্রীর অশান্তি লেগেই থাকত। তবে মধুসূদন চাননি তাঁর স্ত্রীকে হারাতে। তাই মানিয়ে নিয়েও চলার চেষ্টা চালিয়ে যেত বলে দাবি নিহতের বাবা খুদু বাউড়ির।
ছবি: জয়ন্ত দাস
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.