দিব্যেন্দু মজুমদার, হুগলি: লকডাউনের আগে মুর্শিদাবাদের জঙ্গিপুরে দিদির বাড়ি গিয়েছিলেন সুস্মিতা বাগ। লকডাউনে আটকে যাওয়ার এক মাস পর বারাসাত হয়ে ট্রাফিক পুলিশের সাহায্যে উত্তরপাড়ার মাখলার ভাড়াবাড়িতে ছয় বছরের ছেলেকে নিয়ে ফিরে আসেন পাঁচ দিন আগে। বাড়িওয়ালা সুস্মিতাকে ঘরে ঢুকতে দিতে রাজি। তবে এলাকার মানুষ তাঁকে ঘরে ঢুকতে বাধা দেয়। অভিযোগ, দীর্ঘ এক মাসের বেশি সময় বাইরে থাকার পর তিনি যখন ঘরে ঢুকতে যান এলাকারই কিছু ছেলে তাঁর দিকে রীতিমতো মারমুখী হয়ে তেড়ে যায়। বলে এখানে থাকা চলবে না। সে থাকলে গোটা গ্রামে করোনা ছড়িয়ে যাবে এই মিথ্যে অভিযোগ এনে তাঁকে তাড়িয়ে দেয়। তারপর থেকেই এক পিসতুতো ভাই ও ছয় বছরের ছেলেকে নিয়ে রাস্তায় রাস্তায় ঘুরে কাটাচ্ছেন। চরম অমানবিক ঘটনার প্রতিবাদ করে এলাকার কেউই সুস্মিতার দিকে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেননি। উত্তরপাড়া রেল ষ্টেশনের টিকিট কাউন্টারে এক রাতও কাটান তিনি। পরে রেল পুলিশের তাড়া খেয়ে এখন রাস্তাই ঘর হয়ে দাঁড়িয়েছে সুস্মিতার। কিন্তু কতদিন এভাবে চলবে তা নিজেই জানেন না তিনি।
সুস্মিতা জানান, তিনি গত ছয় বছর ধরে উত্তরপাড়া মাখলায় ভাড়া বাড়িতে থাকেন। এখানে তার স্বামী একটা রুটির দোকানে কাজ করেন। তিনি নিজে একটি আয়া সেন্টারে কাজ করেন। লকডাউনের আগে স্বামী ধনেখালির বাড়িতে চলে যান। তিনি জঙ্গিপুরে এক দিদির বাড়ি যান। সেখান থেকে গত সোমবার বারাসাত হয়ে বালিতে থার্মাল স্ক্রিনিংয়ের পর উত্তরপাড়ায় ঢোকেন। সেদিন উত্তরপাড়া স্টেট জেনারেল হাসপাতালে তাঁর, ছেলের ও পিসতুতো ভাইয়ের শারীরিক পরীক্ষা করান। তারপর হাসপাতাল থেকে তিনজনের ফিট সার্টিফিকেট নিয়ে উত্তরপাড়া থানার পুলিশের সহযোগিতায় মাখলার লোহারপুল রায়পাড়ার ভাড়া বাড়িতে যান। বাড়িওয়ালা তাঁকে ঢুকতে দেন। সুস্মিতার অভিযোগ, এক রাত ভাড়া বাড়িতে কাটান। পরেরদিনই এলাকার কিছু ছেলে রীতিমতো মারমুখী হয়ে তেড়ে আসে। তাঁকে বলে, “তোর জন্য কি পুরো গ্রামের মানুষ মরবে। তোর এখানে থাকা চলবে না।” এরপরই ভয়ে ছেলে ও পিসতুতো ভাইকে নিয়ে রাস্তায় আশ্রয় নেন সুস্মিতা।
এদিকে, লকডাউনের কারণে তাঁর স্বামীও ছেলে ও স্ত্রীকে নিতে ধনেখালি থেকে আসতে পারেননি। সুস্মিতা জানান, তার হাতে যেটুকু পয়সা ছিল তাও ফুরিয়ে গিয়েছে। নিজে না খেয়ে থাকলেও ছেলেটাকে কি খেতে দেব এ নিয়ে ভেবে কোনো কূল কিনারা পাচ্ছেন না। তাঁর বিনীত আবেদন, “মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় হস্তক্ষেপ করে তাঁর ঘরে ঢোকার ব্যবস্থা করে দিন। না হলে রাস্তাতেই না খেতে পেয়ে তাঁকে আর ছেলেকে মরতে হবে।” এ বিষয়ে মাখলা লোহার পুল এলাকার বৃদ্ধ বাড়িওয়ালা মধুসূদন রায় জানান, ওই মহিলা তাঁর স্বামী ও ছেলেকে নিয়ে রীতিমতো এগ্রিমেন্ট করে এক বছরেরও বেশি সময় ধরে রয়েছেন। এক মাস এক আত্মীয়ের বাড়ি কাটানোর পর হাসপাতালে স্বাস্থ্য পরীক্ষা করান। ফিট সার্টিফিকেট নিয়ে এখানে ফিরে আসলে তিনি মানবিকতার খাতিরে থাকার অনুমতি দেন। কিন্তু পাড়ারই কিছু ছেলে তাঁকে রীতিমতো মারতে উদ্যত হয়। কেউই প্রতিবাদ করেনি। পুলিশ এসে বাড়িতে ঢুকিয়ে দিলেও এলাকার ছেলেরা তাঁকে বাড়ি থেকে বের করে দেয়। তিনি চান এই চরম অমানবিক ঘটনার বিচার হোক।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.