দিব্যেন্দু মজুমদার, হুগলি: লকডাউনের সময় এলাকার দুস্থ মানুষদের পাশে দাঁড়ালেন হুগলির কাশ্মীরি দাদা। সামর্থ্য অনুযায়ী পিছিয়ে পড়া মানুষদের হাতে তুলে দিচ্ছেন অন্ন। বিনিময়ে তাঁর প্রাপ্তি একরাশ তৃপ্তি।
স্ত্রী বিপাশা ঘোষ ও ৯ বছরের ছেলে আয়ান আব্বাসকে নিয়ে চুঁচুড়া ময়নাডাঙায় সুখের সংসার আদতে কাশ্মীরি শাল বিক্রেতা আরশাদের। করোনা আবহের মাঝে একদিন স্ত্রীর সঙ্গে আলোচনা করছিলেন যে, বর্তমান পরিস্থিতিতে কি হবে কোনওক্রমে পেট চালানো মানুষগুলোর। সেই সময় ছেলে ছোট্ট আয়ান বলে ওঠে, “বাবা তোমার মতো বড় হয়ে আমি যখন রোজগার করব তখন এই গরীব মানুষগুলোকে খাওয়াব।” ছোট্ট আয়ানের মুখে এই কথা শোনার পর আর আরশাদ আর স্ত্রী পিছু ফিরে তাকাননি। তড়িঘড়ি ওই দম্পতি এলাকার অর্থনৈতিক দিক থেকে পিছিয়ে পড়া দুস্থ পরিবারগুলোর খোঁজ শুরু করে দেন। প্রয়োজন বুঝে তাঁদের খাদ্যসামগ্রী কুপনে লিখে দিচ্ছেন দম্পতি।পাড়ার মুদিখানার
দোকানে কাশ্মীরি দাদার লেখা সেই কুপন দেখালেই অসহায় মানুষগুলো পেয়ে যাচ্ছেন প্রয়োজনীয় খাদ্য সামগ্রী।
প্রায় দেড় দশক আগে আর পাঁচ জন শালওয়ালার মতোই শীতের মরসুমে কাশ্মীর থেকে শাল বিক্রি করতে এই রাজ্যে এসেছিলেন আরশাদ। সেই সুবাদেই পরিচয় বিপাশা ঘোষের সঙ্গে। পরিচয় থেকে কখন যেন আরশাদবাবুকে ভালবেসে ফেলেছিলেন বিপাশা দেবী। এরপর বিয়ে, সংসার, সন্তান। বর্তমানে পান্ডুয়ার একটি স্কুলের প্রধান শিক্ষিকা বিপাশাদেবী। বড়বাজারে ব্যবসা শুরু করেছেন আরশাদ। কিন্তু ভূস্বর্গকে ভোলেননি। প্রতিবছর সপরিবারে যেতেন ঘুরতে। কিন্তু ৩৭০ ধারা লাগু হওয়ার পর আর যাওয়া হয়নি। আরশাদের কথায়, “গরীব মানুষের পেটের জ্বালা কি তা আমি জানি। একটানা ৩০ বছর লকডাউনের যন্ত্রণা ভোগ করেছি। সেইসময় ওখানকার মানুষগুলোর কষ্ট আমি দেখেছি। আজকে ফের এখানকার গরীব মানুষগুলোর কষ্ট দেখে পুরোনো স্মৃতি, ফের কারফিউয়ের কথা মনে পড়ছে। তাই সামর্থ্য অনুযায়ী গরীব মানুষগুলোর পাশে দাঁড়াতে পেরে কিছুটা হলেও পুরোনো যন্ত্রণা ভুলতে পেরেছি।”
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.