গৌতম ব্রহ্ম: অর্থ, খাদ্যের অভাব সইতে না পেরে যোগীরাজ্য থেকে সাইকেলেই ঘরের উদ্দেশ্যে যাত্রা শুরু করেছিলেন ১১ জন পরিযায়ী শ্রমিক। বাংলায় প্রবেশের পরও পিছু ছাড়ল না দুর্ভোগ। আসানসোল প্রবেশের মুখে ছিনতাইবাজের কবলে পড়ে খোয়া গেল সর্বস্ব। ছিল না খাওয়ার টাকাও। অবশেষে সাহায্যের হাত বাড়ালেন এক হ্যাম রেডিও অপারেটর।
দীর্ঘদিন ধরেই কানপুরে কর্মরত ছিলেন বাংলার এই ১১ জন পরিযায়ী শ্রমিক। আচমকা লকডাউন ঘোষণা হওয়ায় সেখানেই আটকে পড়েন তাঁরা। প্রথম কিছুদিন সমস্যা না হলেও কিছুটা সময় যেতেই শেষ হয় জমানো অর্থ। ফুরোয় খাবার। হন্যে হয়ে বাড়ি ফেরার উপায় খুঁজতে শুরু করেন তাঁরা। কিন্তু নাহ, কোনও সহযোগিতায় মেলেনি। অবশেষে দিন চারেক আগে সকলের কাছে পড়ে থাকা সামান্য কিছু টাকা সঙ্গে নিয়ে সাইকেলেই ঘরের উদ্দেশ্যে রওনা হন তাঁরা। কোনও রকমে কিছু খেয়ে আর রাতগুলো পেট্রোলপাম্পে কাটিয়ে বৃহস্পতিবার দুপুরে ৮০০ কিমি পথ পেরিয়ে আসানসোলের কাছাকাছি পৌঁছন তাঁরা। বাংলায় প্রবেশ করলেও বিপদ পিছু ছাড়েনি তাঁদের। এক ছিনতাইবাজের খপ্পরে পরে খোয়া যায় ওই শ্রমিকদের সঙ্গে থাকা সামান্য অর্থও। এবার আর খাওয়ার পয়সাটুকুও বেঁচে নেই। এই সময়ই সাক্ষাত দেবদূতের মতো তাঁদের সঙ্গে দেখা হয় হ্যাম রেডিও অপারেটর অরূপ ভট্টাচার্যের।
তিনিই ভরপেট খাওয়ান শ্রমিকদের। এরপর কেক, বিস্কুট, জল-সহ বেশ কিছু খাদ্যসামগ্রী হাতে তুলে দিয়ে গন্তব্যের পথে এগিয়ে দেন। জানা গিয়েছে, দুবরাজপুর হয়ে এই শ্রমিকদের কেউ যাবেন মালদহের কালিয়াগঞ্জে, কেউ যাবেন বালুরঘাট, কেউ আবার হিলি। বাংলায় প্রবেশের পর যেন ঘরে ফেরার তাড়া কয়েকগুণ বেড়ে গিয়েছে ওই পরিযায়ী শ্রমিকদের। এ প্রসঙ্গে অরূপবাবু বলেন, “ওরা দুবরাজপুর হয়ে যাবেন। চেষ্টা করছি কোনও অপারেটরের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারলে দুবরাজপুরেই ওদের রাত্রিবাসের ব্যবস্থা করার।” শুধু এই ১১ জনই নয়, একটানা এই লকডাউনে হাজার হাজার মানুষ আটকে ভিনরাজ্য, এদের মতোই কেউ সাইকেলে, কেউ মোটরবাইকে, কেউ বা পায়ে হেঁটেই ঘরে ফেরার চেষ্টা করছেন। বিপদও হচ্ছে, কিন্তু উপায় নেই। তাই বিপদের পরোয়া না করেই ঘরের পথে পা বাড়াচ্ছেন পরিযায়ী শ্রমিকরা।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.