Advertisement
Advertisement
Migrant labourers

জমির পাশে শুয়ে কোলের সন্তান, রোদ-বৃষ্টি থেকে বাঁচাতে পরিযায়ী শ্রমিক মায়েদের তাঁবু দিল যুবকদল

আর পাঁচটা শিশুর মতো ওদের সব পাওয়ার অধিকার আছে, মনে করছেন ভাতারের ওই যুবকরা।

A group of Youth helps women migrant labourers by provide tents and food for their children in Bhatar, East Burdwan | Sangbad Pratidin

ছবি: জয়ন্ত দাস।

Published by: Sucheta Sengupta
  • Posted:August 13, 2022 7:55 pm
  • Updated:August 14, 2022 3:56 pm  

ধীমান রায়, কাটোয়া: কারও কোলে সদ্যোজাত শিশু, কারও বাচ্চার বয়স দেড়-দু’মাস। একেবারে দুধের শিশুদের কোলে নিয়েই ভিনরাজ্য থেকে কৃষিকাজের জন্য বেশ কয়েকজন আদিবাসী মহিলা (Tribal Woman)। আর এই বর্ষায় জমির আলের কাছে সন্তানদের শুইয়ে রেখেই ধান রোয়ানোর কাজ করে যাচ্ছেন মায়েরা। উপায় যে নেই! সংসারের ভরণপোষণের জন্য কাজ করতেই হবে। তাই রোদবৃষ্টির মধ্যেই কোলের শিশুকে ঘুমন্ত অবস্থায় রেখে জনমজুরি চালিয়ে যেতে হচ্ছে মায়েদের।

আমন চাষে ধান রোয়ার মরশুমে গ্রামেগঞ্জে এমন চিত্র হামেশাই দেখা যায়। ঝাড়খণ্ড (Jharkhand) থেকে এ রাজ্যে কাজ করতে আসা আদিবাসী সম্প্রদায়ের শ্রমিকদের এভাবেই জীবন সংগ্রাম চালিয়ে যেতে হয়। তবে জনমজুর মায়েদের ওই সমস্ত কচিকাঁচা সন্তানদের সুরক্ষার জন্য অভিনব উদ্যোগ নিলেন পূর্ব বর্ধমান (East Burdwan) জেলার ভাতারের মুরাতিপুর গ্রামের যুবক শেখ আমির। জমির আলে খোলা আকাশের নিচে শুয়ে থাকা বাচ্চাদের জন্য একটি করে বহনযোগ্য তাঁবু তুলে দিচ্ছেন শেখ আমির ও তাঁর কয়েকজন বন্ধু। তাঁদের এই অভিনব উদ্যোগ সাড়া ফেলেছে এলাকায়। তাঁবুর পাশাপাশি ওই প্রসূতি জনমজুরদের হাতে তুলে দেওয়া হচ্ছে পুষ্টিকর খাবারও। কয়েকদিন ধরেই এই উদ্যোগ নিয়েছেন তারা। পাশাপাশি কৃষকদের হাতে একটি করে বৃক্ষচারা তুলে দিয়ে শেখ আমিরদের আরজি, “দয়া করে আপনার জমির যে কোনও একদিকে একটি করে গাছ লাগান। যাতে রোদের সময় শ্রমিকরা একটু বিশ্রাম নিতে পারেন।”

Advertisement

[আরও পড়ুন: তেরঙ্গার সঙ্গে ৩০ বিপ্লবীর ছবি, স্বাধীনতা দিবসের আগে প্রোফাইল পিকচার বদলালেন মমতা]

উল্লেখ্য, বাংলার শস্যগোলা এই পূর্ব বর্ধমান। বিপুল পরিমাণে ধানচাষ হয় পূর্ব বর্ধমানে। আর আমন চাষ এবং বোরো চাষে প্রয়োজন হয় প্রচুর কৃষি শ্রমিকের। দেখা যায়, ধান রোয়ানো ও ধান তোলার মরশুমে যে বিশাল সংখ্যক কৃষিশ্রমিক এই জেলায় কাজ করেন, তার সিংহভাগই ঝাড়খণ্ড থেকে আসা আদিবাসী সম্প্রদায়ের শ্রমিক। বস্তুত আদিবাসী সম্প্রদায়ের পুরুষদের পাশাপাশি মহিলারাও চাষের মরশুমে কাজে চলে আসেন। কিছুদিন কাজ করার পর কিছুটা রসদ সংগ্রহ করে ফিরে যান। ভিনরাজ্য থেকে আসা আদিবাসী মহিলা শ্রমিকদের অনেকেরই কোলে থাকে সন্তান। এক, দেড়মাসের শিশুসন্তানকে নিয়েও তাঁরা রুজিরোজগারের জন্য চলে আসেন। আর কাজ করার সময় জমির আলে সন্তানদের শুইয়ে রেখে দেন। মাঝেমধ্যে লক্ষ্য রাখেন মায়েরা।

[আরও পড়ুন: ‘যাঁরা টাকা নিয়েছেন, তাঁদের টুঁটি চেপে ধরুন’, বাঁকুড়ার বিজেপি বিধায়কের মন্তব্যে বিতর্ক]

মুরাতিপুর গ্রামের বাসিন্দা শেখ আমির ওই শিশুদের জন্যই অভিনব উদ্যোগ নিয়েছেন। তাঁকে সহযোগিতা করছেন আমিরের বন্ধু স্থানীয় বাসিন্দা সাহিন মণ্ডল, ইনসান শেখ ও বর্ধমানের সরাইটিকুরির বাসিন্দা সুমন শেখ নামে আরও এক বন্ধু। শেখ আমির বলেন, “চড়া রোদের সময় বা বৃষ্টির মধ্যে ওইসব দুধের শিশুদের জমির আলে শুইয়ে রেখে মায়েরা কাজ করেন। অথচ আমাদের পরিবারের সমবয়সী শিশুদের কতটা যত্ন করে রাখা হয়। তাই ওই শিশুদের জন্য যদি কিছুটা সুরক্ষা দেওয়া যায়, তাহলে তাদের ক্ষতি হয় না।” আমির শেখ জানান, অর্ডার দিয়ে বহনযোগ্য তাঁবু তৈরি করে ওই শ্রমিক মায়েদের হাতে তুলে দেওয়া হচ্ছে। সঙ্গে দেওয়া হচ্ছে মায়েদের জন্য কিছু পুষ্টিকর খাবারও।

ছবি: জয়ন্ত দাস।

শেখ আমির, ইনসান শেখদের কথায়, “আমাদের আশা, এরপর অনেক কৃষকও ওই অসহায় শিশুদের কথা ভাববেন। কারণ, একটি করে এমন তাঁবু তৈরি করতে বড়জোর এক-দেড় হাজার টাকা খরচ।” ঝাড়খণ্ড থেকে কাজে আসা বৈশাখী মাড্ডি, সুমি কিস্কুদের মন্তব্য, “আমাদের ছেলেদের জন্য এমনটা কেউ ভাবতে পারে, কল্পনা করিনি। আমরাও নিশ্চিন্তে কাজ করতে পারছি।”

 

২০২৪ এর পূজা সংক্রান্ত সমস্ত খবর জানতে চোখ রাখুন আমাদের দেবীপক্ষ -এর পাতায়।

চোখ রাখুন
Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

Advertisement