বিপ্লবচন্দ্র দত্ত, কৃষ্ণনগর: ফুড ব্যাংক বা অভুক্তদের মুখে খাবার পৌঁছে দেওয়ার জন্য সম্মিলিত উদ্যোগে খাদ্যের ভাঁড়ার গড়ে তোলা নতুন নয়। লকডাউনের সময়ে এই ফুড ব্যাংক খিদের জ্বালা বুঝতে দেয়নি ফুটপাতের অনেক বাসিন্দাকে। এবার নদিয়ায় তৈরি হল ‘রুটি ব্যাংক’। এও এক খাদ্যসঞ্চয়ের প্রক্রিয়া। যার কাজকর্ম অবিকল ব্যাংকের মতই। নদিয়ার বগুলার জনা কয়েক যুবকের এই উদ্যোগ খুব কম সময়ের মধ্যেই বেশ ফলপ্রসূ হয়েছে বলে মত স্থানীয় বাসিন্দাদের।
ব্যাংকে যেমন টাকাপয়সা জমা রাখা যায়, আবার প্রয়োজনমতো তুলেও নেওয়া যায়, রুটি ব্যাংকের কাজও ঠিক তেমনই। সদ্য পড়াশোনা শেষ করা কয়েকজন যুবকের এক মানবিক উদ্যোগ। যার মূল উদ্দেশ্য, কেউ যেন অভুক্ত না থাকেন। ব্যাংকের মতই বিভিন্ন জায়গা থেকে জোগাড় করা রুটি এবং অন্যান্য খাদ্য সামগ্রী সঞ্চয় করা হয় এখানে। এরপর তা পৌঁছে দেওয়া হয় অভুক্ত মানুষদের কাছে। উদ্যোগটা শুরু হয়েছিল প্রথমে মাত্র একজন অভুক্তকে খাবার দেওয়ার মধ্যে দিয়ে। মাত্র আড়াই মাসের মধ্যেই প্রতিদিন অন্তত প্রায় পঞ্চাশজন অভুক্তকে খাবার পৌঁছে দেওয়া হচ্ছে এই রুটি ব্যাংক থেকে। ছোট্ট একটি আড়তের মধ্যেই চলছে ব্যাংকের কাজ।
নদিয়ার রুটি ব্যাংকের উদ্যোক্তাদের মধ্যে অন্যতম এক তরুণ, তাপস কুমার মণ্ডল জানিয়েছেন, ”মূলত ব্যাংকের কনসেপ্ট থেকেই এই উদ্যোগ। আমরা ভেবে দেখেছিলাম, আমার জন্য যদি চারটে রুটি লাগে, তার মধ্যে একটি কম খেলে আমার কোনও অসুবিধা হয় না। একটি রুটি আমরা দিতে পারি অন্যকে। বিষয়টা আমরা প্রথম আমাদের মায়েদের বলি। তাঁরা সহাস্যে রাজি হয়ে যান। এইভাবে প্রথমে বাড়ি থেকেই আমরা রুটি জোগাড় করে সঞ্চয় করি। এরপর আমরা কয়েকজন ‘রুটি ব্যাংক’ নাম দিয়ে কাজ শুরু করি বড় আকারে। কাজে লাগাই সোশ্যাল মিডিয়াকেও। আমাদের ভাবনাচিন্তা তাতে প্রকাশ করি। অনেকেই সাড়া দিতে শুরু করেন। তাঁদের নাম, ঠিকানা লিখে প্রয়োজনমত রুটি বা অন্য কোন রান্না করা খাবার আনতে পৌঁছে যাই তাঁদের বাড়িতে। সেই খাবার নিয়ে এসে জড়ো করি। এরপর তা স্টেশন চত্বর, হাসপাতালের পাশে, ফুটপাথে, বাসস্ট্যান্ডের পাশে আশ্রয় নিয়ে থাকা বয়স্ক, ভবঘুরে, অভুক্ত মানুষদের কাছে পৌঁছে দিই।”
নদিয়ার হাঁসখালি থানার বগুলার তাপস কুমার মন্ডল, প্রসেনজিৎ বিশ্বাস, অরুণ বিশ্বাস, সুধাংশু অধিকারীরা অল্প সময়েই বগুলা ও তার পার্শ্ববর্তী এলাকার প্রচুর মানুষের সাহায্য ও ভালবাসা পেয়ে যান। এঁদের মধ্যে কেউ প্রাইভেট টিউশন পড়ান, কেউ বা ছোটখাটো কোনও কাজ করেন, আবার কেউ চাকরির সন্ধানে রয়েছেন। যদিও তাঁদের এই মুহূর্তে অন্যতম মূল কাজ, রুটি ব্যাংকে খাবারের সঞ্চয় ঠিক রাখা। তাঁরা বলছেন, ”রুটি দিয়ে শুরু করলেও বর্তমানে আমরা রান্না করা খাবারও পৌঁছে দিচ্ছি। এছাড়া বয়স্কদের ওষুধ, বাচ্চাদের দুধের মত কিছু প্রয়োজনীয় সামগ্রীও দেওয়া হচ্ছে। আমরা দাঁড়িয়েছি মাজদিয়ার আদিবাসী ঝুমুর নৃত্যশিল্পীদের পাশে। ঝড়ে ক্ষতিগ্রস্তদেরও সাধ্যমত খাবার পৌঁছে দেওয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে। কোয়ারেন্টাইন সেন্টারে থাকা পরিযায়ী শ্রমিকদেরও প্যাকেট করে খাবার পৌঁছানো হচ্ছে।”
আপাতত রুটি ব্যাংকের ‘কর্মী’ মাত্র ন’জন যুবক। অবশ্য তাইই যথেষ্ট। স্কুটার বা মোটরবাইক নিয়ে সামনে ‘রুটি ব্যাংক’ লিখে তাঁরা যাচ্ছেন খাবার জোগাড়ের জন্য। খাবার সঞ্চয় করে অভুক্তদের মুখে তুলে দিচ্ছেন অন্ন।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.