সৌরভ মাজি, বর্ধমান: বিহারের পাটনায় গিয়ে রহস্যমৃত্যু বর্ধমানের তরুণীর। কিন্তু ময়নাতদন্ত না করিয়েই দেহ নিয়ে চলে আসা হল তাঁর বাড়িতে। পরিবারের লোকজন পরে বুঝতে পারেন ওই তরুণীকে খুন করা হয়ে থাকতে পারে। এরপর এলাকায় শোরগোল পড়ে যায়। খবর পেয়ে বুধবার বর্ধমান থানার পুলিশ দেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তে পাঠায়। প্রাথমিকভাবে পুলিশ জানতে পেরেছে, পাটনায় বার ডান্সারের কাজ করতেন ডলি। সেখানকার পুলিশের সঙ্গে যোগাযোগ করে বিস্তারিত তথ্য জানার চেষ্টা করছে পুলিশ।
বর্ধমানের ছোটনীলপুরের মাণিক কর্মকারের দুই মেয়ে মলি ও ডলি। কয়েকমাস আগে দুই বোনই হুগলির শ্রীরামপুরে একটি শপিং মলে কাজ করতেন। মাসছয়েক আগে মলি প্রথমে পাটনায় কাজে যান। পরে তার বোন ডলিকেও নিয়ে যান। বুধবার বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে আসেন মলি। জানান, পাটনার হনুমান নগর কালীমন্দির এলাকায় তিনি থাকতেন। তবে বোনের সঙ্গে তাঁর সম্পর্ক ভাল ছিল না। অন্যরা চা–কফি খাওয়ার জন্য ডাকলেও ডলি ছাদ থেকে নিচে নামতেন না। তাই বোন আলাদা ঘরে থাকতেন। মঙ্গলবার রাতে তাঁর বোন বাড়ির ছাদে গিয়েছিলেন। প্রতিবেশীরা পরে এসে জানান, বোন নিচে পড়ে রয়েছে। সঙ্গে সঙ্গে তিনি এবং আরও কয়েকজন ডলিকে উদ্ধার করে স্থানীয় একটি বেসরকারি হাসপাতালে নিয়ে যান। সেখানে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন ডলিকে। কিন্তু অস্বাভাবিক মৃত্যু ঘটলেও সেখানে ময়নাতদন্ত না করিয়েই মলি ও তার কয়েকজন সঙ্গী অ্যাম্বুল্যান্সে করে সটান বর্ধমানে চলে আসেন। প্রশ্ন উঠেছে, সেখানকার বেসরকারি হাসপাতাল বিষয়টি স্থানীয় থানায় কেন জানায়নি বা জানালেও পুলিশ কেন ময়নাতদন্ত করল না। হাসপাতাল দেহই বা কীভাবে ছেড়ে দিল?
[আরও পড়ুন: উইকেট দিয়ে বেধড়ক মার শিক্ষকের, হাসপাতালে মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ছে ছাত্র]
ডলির বাবা মাণিক কর্মকার দাবি করেন, মেয়ের সঙ্গে তাঁর দীর্ঘদিন ধরে তেমন সম্পর্ক ছিল না। তিনি জানতেনই না মেয়ে পাটনায় থাকে।তিনি জানতেন মেয়ে শ্রীরামপুরে কাজ করে। এদিন ভোরে বাড়িতে দেহ আনার পর আকাশ থেকে পড়েন তিনি। অপমৃত্যু ঘটেছে জানতে পারেন। তাঁর সন্দেহ মেয়েকে খুন করা হয়েছে। এরই মধ্যে সেখানকার ডেথ সার্টিফিকেট নিয়ে দেহ সৎকারের তোড়জোড়ও শুরু হয়েছিল।কিন্তু পুলিশ জানতে পেরে দেহ উদ্ধার করে। বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে দাঁড়িয়ে মলি দাবি করেন, “বোনকে খুন করা হয়েছে বলে মনে হচ্ছে।” কিন্তু সেখানে ময়নাতদন্ত না করিয়েই কেন দেহ বর্ধমানে আনা হল তার সদুত্তর অবশ্য কিছু দিতে পারেননি। ডলির বাবাও দাবি করেন, তাঁর মেয়ের মৃত্যু স্বাভাবিক নয়। বর্ধমান পুলিশের তরফে পাটনা পুলিশের সঙ্গে যোগাযোগ করা হচ্ছে। সেখানে দুই বোন কী কাজ করতেন, কোথায় থাকতেন, ঘটনার দিনই বা কী ঘটেছিল সে বিষয়ে বিস্তারিত জানার চেষ্টা করা হচ্ছে। ডলি আত্মঘাতী হয়েছেন না কি তাঁকে ছাদ থেকে ঠেলে ফেলে দেওয়া হয়েছে পুরোটাই তদন্ত করে দেখা হচ্ছে। প্রাথমিকভাবে পুলিশ জানতে পেরেছে, প্রেমের সম্পর্কের টানাপোড়েন চলছিল ডলির। তার সঙ্গে এই ঘটনার কোনও সম্পর্ক রয়েছে কি না তাও খতিয়ে দেখছেন তদন্তকারীরা।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.