সংগ্রাম সিংহরায়, শিলিগুড়ি: দেবীর হাতে দেবীর পূজা। প্রথা ভাঙা এমনই ব্যতিক্রমী ঘটনার সাক্ষী রইল শিলিগুড়ির হায়দরপাড়ার বুদ্ধভারতী হাইস্কুল। এই স্কুলেরই একাদশ শ্রেণির ছাত্রী স্নিগ্ধা সরকার। বাগদেবীর আরাধনার প্রস্তুতিতে আর পাঁচজনের মতোই সে-ও হাত লাগিয়েছিল। কিন্তু চমক ছিল শেষ পর্বে। তিথি মেনে ঠিক পুজো শুরু হওয়ার আগের মুহূর্তে পুরোহিতের আসনে বসল স্নিগ্ধা। পাঁজি দেখে আচার পালন এবং মন্ত্রোচ্চারণে দেবীকে শ্রদ্ধার্ঘ্য অর্পণে নিষ্ঠা এবং দক্ষতা কিছুই চোখ এড়াল না উপস্থিত জনগণের। এই দৃশ্যে রীতিমতো চমকে গিয়েছেন সকলে। তবে একবাক্যে মানছেন, এ মেয়ে সাধারণ নয় মোটেই।
বীণাপাণির আরাধনায় একেবারেই ব্যতিক্রমী ধরন শিলিগুড়ির বুদ্ধভারতী হাইস্কুলে।অন্যান্য বিদ্যালয়ের মতো এখানেও সকাল থেকে পুজোর আয়োজন চলেছে। একাদশ শ্রেণির ছাত্রছাত্রীরা দায়িত্ব নিয়ে সামলাচ্ছে সবকিছু। পুজোর সময়ে একাদশ শ্রেণির ছাত্রী, একতিয়াশালের বাসিন্দা স্নিগ্ধা সরকার জানায়, দেবী সরস্বতীকে নিজের হাতে সে পুজো করতে চায়। প্রস্তাব শুনে প্রথমদিকে সকলে একটু অবাক হলেও, স্কুল কর্তৃপক্ষ অনুমতি দেয়। আর তারপর? সমস্ত প্রথা, আচার যথাযথভাবে পালন করে পুজো সম্পন্ন করে স্নিগ্ধা।পুজোর মন্ত্রপাঠ, আরতি, অঞ্জলির স্তোত্র উচ্চারণ, প্রণাম – সবই রীতিমতো তাক লাগানো। ছাত্রছাত্রী, শিক্ষক-শিক্ষিকা তো বটেই, আশপাশের লোকজনও খবর পেয়ে স্নিগ্ধার পুজো দেখতে স্কুলে পৌঁছে যান।
ডায়মন্ড হারবারে গণপিটুনি রুখতে গিয়ে আক্রান্ত সিভিক ভলান্টিয়ার
স্কু্লের প্রধান শিক্ষক স্বপনেন্দু নন্দীর কথায়, ‘আমরা স্বাধীন ও মুক্ত চিন্তাকে সবসময় উৎসাহ দিই। সরস্বতী পুজো দীর্ঘকাল ধরে চলে আসা রীতি। সেখানে পুরুষরা বাড়তি সুযোগ পেয়ে পুরোহিত হিসেবে নিজেদের যোগ্য করে তুলেছেন। মহিলারাও সুযোগ পেলে একই কাজ করতে সক্ষম, সেই বার্তাই আজ স্নিগ্ধার মাধ্যমে আমরা দিতে চেয়েছি। এদিন স্নিগ্ধা যেভাবে পুজো করছে, তাতে ও সমস্ত মিথ ভেঙে দিয়েছে।’ আর যাকে ঘিরে এত উদ্যম, উদ্দীপনা, প্রশংসা সেই স্নিগ্ধা কী বলছে? সে জানিয়েছে, তাকে এই পুজো করতে অনুপ্রেরণা যুগিয়েছেন বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক স্বপনেন্দুবাবু। উৎসাহ দিয়েছেন অন্যান্য শিক্ষক-শিক্ষিকারাও। স্নিগ্ধার পালটা প্রশ্ন, ‘সরস্বতী নিজেই নারী।মায়ের মতো। মেয়ে হয়ে মায়ের পুজো করলে অসুবিধা কোথায়?’
এদিন স্কুলের পুজোয় যোগ দেওয়া অভিভাবক দয়াশ্রী মণ্ডলের বক্তব্য, ‘আমরা মহিলারা অনেক কাজ করি না, প্রথা মেনে। কিন্তু বইয়ে লেখা সব কথাই যে একেবারে অকাট্য নয়, তার প্রমাণ পেলাম এদিন। এ’জন্য ধন্যবাদ জানাই প্রধান শিক্ষক ও ওই ছাত্রীকে।’ সত্যিই এতদিন শুধু পুরুষরা পুরোহিতের গুরুদায়িত্ব পালন করলেও, একজন নারী যে কোনও অংশে সেই কাজে পিছিয়ে নেই নিষ্ঠা, দক্ষতায় – তার প্রমাণই দিলেন শিলিগুড়ির একতিয়াশালের বাসিন্দা স্নিগ্ধা সরকার। হয়ত ভবিষ্যতে আরও অনেক স্নিগ্ধাই এগিয়ে আসবে এই কাজে।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.