সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়, দুর্গাপুর: তৃণমূলকে ঠেকাতে সিপিএম দেদার ভোট দিয়েছে বিজেপিকে৷ চতুর্থ দফা নির্বাচনের পর দলীয় বিশ্লেষণে এই চাঞ্চল্যকর তথ্য উঠে আসতেই কপালে ভাঁজ সিপিএম জেলা নেতৃত্বের৷ তবে সিপিএম-বিজেপির এই আঁতাঁতের অভিযোগ নতুন কিছু নয়৷ রাজ্যে পালাবদলের পর স্রেফ দলীয় কর্মীদের উপর আক্রমণ ঠেকাতে দলের এই প্রবণতা প্রকাশ্যে না এলেও নিচুতলার কর্মীরা বিজেপিকে সমর্থনই করেছিলেন৷ কিন্তু সেটাই যে এই লোকসভা নির্বাচনে বুমেরাং হয়ে ফিরে আসবে, তা ভাবতেও পারেনি নেতৃত্ব।
সিপিএম-বিজেপির অলিখিত আঁতাঁত প্রকাশ্যে আসতেই শুরু হয়েছে গভীর পর্যবেক্ষণ৷ দলীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, সিপিএম কর্মীদের বিজেপিকে ভোট দেওয়ার বিষয়টি নিয়ে চিন্তিত রাজ্য নেতৃত্বও। তবে এক্ষেত্রে লোকসভার নির্বাচনে দলের নিচুতলার কর্মীরা এই ‘কাণ্ড’ ঘটিয়ে ফেলেছে বলেই ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা হয়েছে সিপিএমের পক্ষ থেকে। বর্ধমান-দুর্গাপুর কেন্দ্রের একটি বিরাট অংশের বাম ভোটাররা ঢেলে বিজেপিকে ভোট দিয়েছে বলে পর্যবেক্ষণে উঠে এসেছে। এর জেরে আবার তৃণমূলের ভোটব্যাংকে ধস নামার আশঙ্কাও করা হচ্ছে৷
এই কেন্দ্রে বামেদের প্রার্থী নিয়ে কোনও দ্বিমত নেই দলের অন্দরে। প্রচারেও কোনও খামতি রাখেননি বাম প্রার্থী আভাস রায়চৌধুরি। তুলনায় অন্যান্যদের থেকে বেশিই প্রচারের আলোয় ছিলেন তিনি। তা সত্ত্বেও তাঁদের ভোটব্যাংকে আঘাত আনলেন নিজেদেরই সক্রিয় ভোটাররা৷ ড্যামেজ কন্ট্রোলে দল একাধিক যুক্তি খাঁড়া করেছে৷ বলা হচ্ছে, তৃণমূলের বিকল্প হিসাবে বাম কর্মী, সমর্থকরা বিজেপির উপর আস্থা রেখেছেন৷ রাজ্যের যে সব অঞ্চলে অস্তিত্বের সংকটে ভুগছে বামেদের সংগঠন, সেসব অঞ্চলেই বাম ভোট বিজেপিতে চলে যাচ্ছে৷ পশ্চিম বর্ধমান জেলা নেতৃত্বের দাবি, লোকসভা ভোট বলেই এই ভোট স্থানান্তরিত হয়েছে। কারণ, কেন্দ্রীয় সরকার গঠনে যেহেতু বামেদের দ্বারা সম্ভব হবে না, তাই তৃণমূলকে ঠেকাতে বিজেপিই বিকল্প৷ কিন্তু বিধানসভা ভোটে এমন ‘কাণ্ড’ হবে না বলেই আশা বাম নেতৃত্বের। সিপিএমের জেলা সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য পঙ্কজ রায় সরকার বলেন, ‘জনজীবনের মূল সমস্যা এড়িয়ে তৃণমূল ও বিজেপি এই ভোটে অন্য ইস্যু তুলে ধরে মানুষকে বিভ্রান্ত করেছে। মানুষ তাতে প্রভাবিতও হয়েছে। কিন্তু মানুষের মূল সমস্যা তুলে ধরা হয়নি।’
বর্ধমান-দুর্গাপুর কেন্দ্রের সিপিএম প্রার্থী আভাস রায়চৌধুরির কথায়, ‘আমার এই ধরনের কোনও অভিজ্ঞতা হয়নি। যা হওয়ার ২৩ তারিখের পর হবে। তবে এই নিয়ে আলোচনা না করে পরবর্তী ভোট নিয়ে আলোচনা হওয়াই বাঞ্ছনীয়।’ আদর্শে একনিষ্ঠ বাম কর্মীদের এহেন ‘কাণ্ড’ যে সত্যিই দলকে বিড়ম্বনায় পড়তে হচ্ছে, তা আর গোপনে রইল না৷
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.