সৈকত মাইতি, তমলুক: নার্সিংহোমের পার্টনারশিপ ব্যবসার নামে কোটি টাকা প্রতারণা। এক পার্টনারকে পরিকল্পনামাফিক খুনের অভিযোগে শোরগোল তমলুকে। মৃতের পরিবার তমলুক (Tamluk) থানার দ্বারস্থ হতেই ঘর ছাড়া অভিযুক্ত তমলুকের প্রায় হাফ ডজন চিকিৎসক। তালা ঝুলল নার্সিংহোমে।
স্থানীয় ও পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, মৃত উৎপল মাইতি। তমলুকের বাহারপোতা এলাকার বাসিন্দা হলেও দীর্ঘদিন নার্সিংহোমের কর্মসূত্রে তিনি তমলুক শহরেই থাকতেন। এমন অবস্থায় ২০০৮ সাল নাগাদ তমলুকের ধারিন্দা এলাকায় নামী দুই চিকিৎসক ইএনটি সার্জেন বি সি হাজরা এবং প্রসূতি রোগ বিশেষজ্ঞ সুবোধকুমার বেরার সঙ্গে যৌথভাবে একটি নার্সিংহোম গড়ে পার্টনারশিপে ব্যবসা শুরু করেন উৎপল। আর তখন থেকেই মূলত ওই নার্সিংহোমের যাবতীয় তদারকির দায়ভার সামলে আসছিলেন তিনি। এভাবেই প্রায় দীর্ঘ ১০ বছর এই অংশীদারী ব্যবসা ঠিকঠাকভাবে চললেও ২০১৯ সাল নাগাদ নতুন করে বিড়ম্বনা শুরু হয়। অভিযোগ, চক্রান্ত করেই ওই সময় এই তিন পার্টনারশিপ থেকে আরও তিন চিকিৎসক ইউরোলজিস্ট এসপি হাজরা, শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ কবির আলি খান এবং জাহাঙ্গির নাওয়াজ-সহ একাধিক শরিকের নতুন করে অন্তরভূক্তি ঘটে। আর তারপর থেকেই নানান অছিলায় এই অংশীদারি নার্সিংহোম ব্যবসার সমূহ টাকা অভিযুক্তরা আত্মসাৎ করে বলে অভিযোগ। এবং বকেয়া টাকা চাইতে গেলে প্রতিনিয়তই হুমকি, ভয় দেখানো হতো বলে অভিযোগ।
এর ফলে হতাশায় ভুগতে শুরু করেন উৎপল। এমন অবস্থায় ২০২২ সালের ১৭ ই ডিসেম্বর অস্বাভাবিক মৃত্যুর ঘটনা ঘটে উৎপলের। মৃতের স্ত্রী সচিপ্রিয়া দেবীর দাবি, ঘটনার দিন তিনি ভোগপুরের এক আত্মীয়ের বাড়িতে জন্মদিনের অনুষ্ঠানে গিয়েছিলেন। সে সময় নার্সিংহোমেই কর্মরত ছিলেন উৎপলবাবু। এমন অবস্থায় পরদিন সকালে তাঁর তমলুকের বাড়ি থেকে উদ্ধার হয় মৃতদেহ। মৃতের স্ত্রীর অভিযোগ, “আমার স্বামীকে ষড়যন্ত্র করে খুন করা হয়েছে।” ঘটনার দিন সন্ধে প্রায় ৭ টা নাগাদ মোবাইলে শেষবারের মতো স্বামীর সঙ্গে তাঁর কথা হয়। ওই সময় তিনি স্বাভাবিক অবস্থাতেই ছিলেন। তার ঠিক ঘণ্টা দুয়েকের থেকেই ওই চিকিৎসককে আর মোবাইলে পাওয়া যাচ্ছিল না। এমন অবস্থায় নার্সিংহোমেরই এক কর্মী তাঁকে সবকিছু স্বাভাবিক অবস্থায় রয়েছে বলেই জানান। পরদিন সকাল প্রায় সাড়ে দশটা নাগাদ বাড়ি ফিরে ঘরের দরজার তালা খুলে তিনি দেখেন, স্বামী মেঝেতেই মৃত অবস্থায় পড়ে। অভিযোগ, বিষয়টি নিয়ে ওই মহিলা ময়নাতদন্তের পাশাপাশি পুলিশের দ্বারস্থ হতে গেলে তাঁকে নানান রকমের ভয় দেখিয়ে ভুল বুঝিয়ে দাহ করতে বাধ্য করা হয়।
অবশেষে ঘটনা বিস্তারিতভাবে জানিয়ে তমলুক থানার দারস্থ হন মহিলা। এরপরই রাতারাতি নার্সিংহোমের দরজা বন্ধ করে গা ঢাকা দিয়েছেন অভিযুক্তরা। এদিকে হাফ ডজন চিকিৎসক সহ ১১ জনের নামে এফআইআর রুজু করে ঘটনার তদন্ত শুরু করেছে তমলুক থানার পুলিশ। এ প্রসঙ্গে অবশ্য অভিযুক্তদের তালিকায় থাকা চিকিৎসক এসপি হাজরা জানিয়েছেন, খুনের ঘটনার অভিযোগ ভিত্তিহীন। তবে শরিকি এই বিবাদ মেটাতে তিনি নিজেও নাকি চেষ্টা করেছিলেন। এদিকে এ বিষয়ে তমলুক থানার আইসি অরূপ সরকার জানিয়েছেন, নার্সিংহোমের অংশীদারী ব্যবসা চালাতে গিয়ে এক অংশীদারকে খুনের অভিযোগ উঠেছে। ঘটনার তদন্ত চলছে।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.