রিন্টু ব্রহ্ম,কালনা: জন্মদিন মানেই কেক কাটা, হ্যাপি বার্থ ডে গান, খাওয়াদাওয়া, ঘরে কিংবা বাইরে বিশাল অনুষ্ঠান, হইচই। তারপরই সোশ্যাল মিডিয়ায় ছবি পোস্ট। এইভাবে জন্মদিন পালন করাটাই এখন ট্রেন্ড হয়ে গিয়েছে নব্য বাঙালির। কিন্তু চলতি হাওয়ার পথে গা না ভাসিয়ে পূর্ব বর্ধমানের শীল পরিবার ছেলের পাঁচ বছরের জন্মদিন পালন করলেন সম্পূর্ণ ভিন্নভাবে৷ যা নাগরিক সমাজের কাছে নিঃসন্দেহে একটা নজির রাখল৷
রবিবারই ৫ বছরে পা দিয়েছে জোতরামের বাসিন্দা শ্রেয়ন শীল৷ বাবা প্রদীপ শীল ছোট ব্যবসায়ী৷ ছেলের জন্মদিন একটু অন্যভাবে পালন করার কথা ভাবছিলেন প্রদীপবাবু এবং তাঁর স্ত্রী মান্তু৷ শেষে ঠিক করলেন, কিছু সমাজকল্যাণমূলক কাজের মধ্যে দিয়ে সন্তানের জন্মদিন পালন করা যাক৷ তাহলে একমাত্র সন্তানও ছোটবেলা থেকে ভাল কিছু শিখতে পারবে৷ যেমন ভাবা, তেমনই কাজ৷ শীল দম্পতি এই দিনে রক্তদান শিবিরের আয়োজন করেন৷ রক্তদাতাদের প্রত্যেকের হাতে তুলে দেওয়া হয় একটি করে চারাগাছ৷
গ্রীষ্মকালে সর্বত্র রক্তের ব্যাপক সংকট থাকে। বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের তরফেও এই সময় রক্তদান শিবিরের আয়োজন করার জন্য বিভিন্ন সরকারি, বেসরকারি সংস্থার কাছে আবেদন জানানো হয়৷ ছোট্ট শ্রেয়নের জন্মদিনও গ্রীষ্মে৷ তাই ঠিক এই সময়টাকেই রক্তদান শিবিরের জন্য বেছে নিলেন প্রদীপবাবু, মান্তুদেবী৷ রবিবার গাংপুর স্টেশন রোডের কাছে একটি অনুষ্ঠানবাড়ি ভাড়া নেওয়া হয়। এলাহি লাঞ্চ বা ডিনারের জন্য নয়, কয়েকঘণ্টার জন্য অনুষ্ঠানবাড়িটাই হয়ে উঠেছিল রক্তদান শিবির৷
প্রদীপবাবুদের উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়ে এগিয়ে এসেছিলেন স্থানীয় বাসিন্দারা। অন্তত ৫০ জন রক্তদান করেছেন। রক্তদানের পর টিফিন খেয়ে তাঁরা ঘরে ফিরলেন একটি করে চারাগাছ হাতে নিয়ে। শ্রেয়নের জন্মদিনে পরিবারের পক্ষ থেকে সেটাই তাঁদের জন্য রিটার্ন গিফট৷ প্রদীপবাবু বলেন, “গরম পড়লেই শুনি চারপাশে রক্তের হাহাকার। আর প্রতিদিন দেখি, গাছপালা কেটে ফেলে প্রকৃতি ধ্বংস করা হচ্ছে৷ তাই আমরা নিজেদের জীবনের এক শুভদিনে রক্তদান শিবির ও বৃক্ষচারা প্রদান করে সমাজের পাশে দাঁড়ানোর চেষ্টা করলাম।” মান্তুদেবীর কথায়, “সকলকেই দেখি হইহুল্লোড় করে জন্মদিন পালন করতে। কিন্তু রক্তদান শিবির করে আমরা ওসবের চেয়ে বেশি খুশি হয়েছি।’’ জোতরামের বাসিন্দা রাষ্ট্রপতি পুরস্কারপ্রাপ্ত শিক্ষক, ‘গাছমাস্টার’ বলে পরিচিত অরূপকুমার চৌধুরির প্রতিক্রিয়া, সন্তানের জন্মদিনে খুবই মানবিক উদ্যোগ নিয়েছেন ওই দম্পতি। ভবিষ্যৎ গড়তে এঁদের মতো অভিভাবক আজকের দিনে খুবই প্রয়োজন৷
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.