সুমিত বিশ্বাস, পুরুলিয়া: ভোটের ডিউটি নিয়ে তিক্ত অভিজ্ঞতা৷ তাই তা এড়িয়ে যেতে চান বারবার৷ উপায় হিসেবে তিনি ভোটে দাঁড়ান প্রতিবার। কিন্তু দেওয়াল লিখে প্রচারে বিশ্বাসী নন৷ বিশ্বাস নেই মিছিল,সভা-সমিতিতেও। এমনকী কারও কাছে ভোটও চান না। তবুও তিনি প্রার্থী হন। তা লোকসভা ভোট হোক, কিংবা বিধানসভা বা পঞ্চায়েত। ব্যালট পেপার বা ইভিএমে তাঁর নাম জ্বলজ্বল করে। কোনওবার মনোনয়ন পত্র বাতিল হয়ে গেলে মানুষের কাছে আবেদন জানান, নোটায় ভোট দেওয়ার৷
২০০৬ সাল থেকে চারবার ভোটে দাঁড়িয়েছেন মৃত্যুঞ্জয় মাহাত৷ এটা পঞ্চমবার৷ মূল লক্ষ্য কিন্তু একটাই৷ ভোটের ডিউটি থেকে যাতে অব্যাহতি পাওয়া যায়। আর এহেন ভোটপ্রার্থীকে পুরুলিয়াবাসী চিনেও গিয়েছেন৷ এবারও তিনি পুরুলিয়া লোকসভা কেন্দ্রে ভারতীয় জনবাদী ফরওয়ার্ড ব্লকের প্রার্থী, জনগণের কাছে যিনি নির্দল প্রার্থী৷ এবারও ব্যাট হাতে ভোটের ময়দান কাঁপাচ্ছেন। ভোটারদের কাছে নিজের পরিচয় দিচ্ছেন ব্যাটসম্যান হিসেবে। তাই শুক্রবার প্রচারের শেষ দিনে দিনভর চার, ছয় হাঁকালেন। কিন্তু কারও কাছেই ঠিক চিরাচরিত কায়দায় ভোট চাইলেন না৷
মৃত্যুঞ্জয় মাহাতো। বাড়ি পুরুলিয়া এক নম্বর ব্লকের গাড়াফুসড় গ্রামে। রোগা, ছিপছিপে সাতান্ন বছরের মৃত্যুঞ্জয় মাহাতো গাড়াফুসড় দু’নম্বর প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক। ২০০৬ সাল থেকে তাঁর ভোটে দাঁড়ানোর অভিযান শুরু হয়েছে। ২০০৬
সালের বিধানসভা নির্বাচনে জয়পুর বিধানসভা কেন্দ্রের প্রার্থী হয়ে মাত্র ১৯৯৯টি ভোট পান৷ ওই বছরই পুরুলিয়া কেন্দ্রের লোকসভা উপনির্বাচনে তার প্রাপ্ত ভোট ছিল ৩৫০০৷ ২০০৯ সালের লোকসভায় তিনি ভোট পান ১৫,৭১৬টি৷ তারপর ২০১৪ সালের লোকসভায় মনোনয়ন বাতিল হয়ে যাওয়ায় তিনি ভোটারদের নোটায় ভোট দেওয়ার আহ্বান জানান। ফলে সেইবার এই কেন্দ্রে নোটায় পড়েছিল ১৬,৭২৬। ২০১৬ সালের বিধানসভায় তিনি প্রার্থী না হলেও গত পঞ্চায়েত নির্বাচন অর্থাৎ ২০১৭ সালে পুরুলিয়া জেলা পরিষদের বলরামপুরের একটি আসনে প্রার্থী হয়েছিলেন। প্রাপ্ত ভোট ছিল ৩৫০র কাছাকাছি।
তাঁর কথায়, “১৯৯৮ সালে পঞ্চায়েতের সময়ে আমার ভোট ডিউটি পড়েছিল হুড়ার বিশপুরিয়ায়। সেখানে দেখেছিলাম এক মহিলা ভোটারের ভোট একজন পুরুষ দিয়ে দিচ্ছেন। আমি তার প্রতিবাদ করেছিলাম। কিন্তু আমাকে অপমানিত করা হয়। সেই অপমান আমি মেনে নিতে পারিনি। তাই ভোটের ডিউটি এড়াতেই আমি সব ভোটে নিজেই প্রার্থী হই।” তবে গণতান্ত্রিক দেশে ভোটে লড়ার তো একটা নির্দিষ্ট ইস্যু থাকবে৷ সেই জায়গায় দাঁড়িয়ে মৃত্যুঞ্জয়ের প্রচারে উঠে আসে মদ, পণপ্রথা, কুসংস্কার বিরোধী সুর৷
ছবি: অমিত সিং দেও
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.