সুমিত বিশ্বাস, পুরুলিয়া: ইংল্যান্ড থেকে ভারতে কাজ করতে এসে কোয়ারেন্টাইনে ব্রিটিশ ইঞ্জিনিয়ার। তবে তাঁকে আলাদা করে রাখতে গিয়ে দিনভর নাজেহাল হতে হল পুরুলিয়া জেলা প্রশাসনের কর্তাব্যক্তিদের। শেষমেশ তাঁকে হোটেল থেকে জেলার দেবেন মাহাতো সদর হাসপাতালের কোয়ারেন্টাইন ওয়ার্ডে এনে রাখা হয়। জেলায় হোম কোয়ারেন্টাইনে রাখা হয়েছে ১২ জনকে।
গত এক বছর ধরেই এই ব্রিটিশ ইঞ্জিনিয়ার জাইকা জলপ্রকল্পের কাজে পুরুলিয়ায় যাতায়াত করেন। প্রতিবারই তিনি পুরুলিয়ার চারতারা হোটেলে থাকেন। মঙ্গলবার শহর পুরুলিয়ায় খবরটা ছড়িয়ে পড়ে। চারতারা হোটেলে ইংল্যান্ডের এক নাগরিক রয়েছেন। আর ওইদিনই লন্ডন থেকে কলকাতায় ফেরা তরুণের শরীরে করোনার জীবাণু বাসা বেঁধেছে বলে পরীক্ষার রিপোর্ট মেলে। তাতেই ঝাড়খণ্ড লাগোয়া শহরকে আতঙ্ক গ্রাস করে। বুধবার সকাল থেকে ওই হোটেল লাগোয়া এলাকা প্রায় ফাঁকা হয়ে যায়। অথচ এই এলাকা অন্যান্য দিন সকাল থেকেই থাকে জমজমাট। ওই ব্রিটিশ ইঞ্জিনিয়ারের শরীরে করোনার কোনও উপসর্গ নেই। তা সত্ত্বেও সতর্কতামূলক ব্যবস্থা হিসেবে হোটেলে প্রশাসন তাঁকে কোয়ারেন্টাইনে রাখে। তাতেই এলাকার মানুষজন আতঙ্কিত হয়ে পড়েন। জাইকা প্রকল্পের ওই ইঞ্জিনিয়ার হোটেলে পর্যবেক্ষণে থাকার পরেও স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ দপ্তরের বিধিনিষেধ মানছিলেন না বলে অভিযোগ ওঠে। ফলে প্রশাসনের হস্তক্ষেপে তাঁকে দেবেন মাহাতো গভর্নমেন্ট কলেজ ও হাসপাতালের হাতোয়াড়া ক্যাম্পাসে রাখার তোড়জোড় শুরু হয়। এখানে দু’শো শয্যার কোয়ারেন্টাইন সেন্টার তৈরি হয়েছে।
কিন্তু জেলা পুলিশের মতে, শহরের একেবারে বাইরে, ফাঁকা জায়গা হাতোয়াড়া ক্যাম্পাসে ওই ব্রিটিশ নাগরিককে রাখা ঝুঁকিপূর্ণ। ফলে দেবেন মাহাতো সদর হাসপাতালের মূল ক্যাম্পাসে প্রায় একশ শয্যার কোয়ারেন্টাইন সেন্টার খুলে সেখানে ‘নজরবন্দি’ করা হয় তাঁকে। পুরুলিয়ার জেলাশাসক রাহুল মজুমদার বলেন, “ওই ব্রিটিশ ইঞ্জিনিয়ারকে দেবেন মাহাতো সরকারি মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালের মূল ক্যাম্পাসের পর্যবেক্ষণ ওয়ার্ডে রাখা হল। এখানে ১০০ শয্যার পর্যবেক্ষণ ওয়ার্ড খোলা হয়েছে।” সবমিলিয়ে, এই জেলায় মোট ৩০০ শয্যার কোয়ারেন্টাইন ওয়ার্ড বা পর্যবেক্ষণ কেন্দ্র খুলল প্রশাসন।
এদিকে, ইন্দোনেশিয়া থেকে জয়পুর ব্লক সদরে সম্প্রতি আসা বাসিন্দাকে প্রশাসনের নির্দেশে বুধবার থেকে হোম কোয়ারেন্টাইনে রাখা হয়। কিন্তু তারপরেও তাঁকে জয়পুর ব্যাংক ও বাজারে কাজকর্ম করতে দেখে এলাকার মানুষজন ক্ষুব্ধ হন। তিনি সতর্ক না হলে, বৃহস্পতিবার তাঁকে নোটিস দিয়ে সতর্ক করবে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ বিভাগ। তারপরেও কোনও কাজ না হলে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে পুরুলিয়া জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে। এদিন এই জেলায় আরও চারজনকে হোম কোয়ারেন্টাইনে রাখা হয়েছে। তারা সৌদি আরব, দুবাই থেকে এই জেলায় পা রাখেন। এখনও পর্যন্ত এই জেলায় মোট বারো জনকে পর্যবেক্ষণে রাখা হল।
ছবি: অমিত সিং দেও।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.