অর্ণব দাস, বারাসত: বারাসত (Barasat) নবপল্লি কো-অপারেটিভ ব্যাংকের আর্থিক জালিয়াতির অভিযোগ উঠেছিল তিন ব্যাংক কর্মীর বিরুদ্ধে। তাদের মধ্যে একজনের আত্মঘাতী হওয়ার ঘটনায় চাঞ্চল্য ছড়াল এলাকায়। বৃহস্পতিবার দুপুরে ঘটনাটি ঘটেছে বারাসত পুরসভার ৩৪ নম্বর ওয়ার্ডের বিদ্রোহী সংঘ সংলগ্ন এলাকায়। পুলিশ জানিয়েছে, মৃত যুবকের নাম অমিত ভদ্র (২৪)। তার ঘর থেকে একটি সুইসাইড নোট উদ্ধার করেছে বারাসত থানার পুলিশ। সুইসাইড নোটের বয়ান অনুযায়ী, টাকা জালিয়াতির সঙ্গে সে যুক্ত নয়। এক টাকাও সে চুরি করেনি। ব্যাংক ম্যানেজারের ভয়ে সে সত্যি কথাটি ব্যাংক কর্তৃপক্ষের কাছে জানাতে পারেনি বলে উল্লেখ করা হয়েছে। সুইসাইড নোটের হাতের লেখা খতিয়ে দেখছে পুলিশ। ঘটনার তদন্ত শুরু করেছে পুলিশ।
গত মে মাসের প্রথম সপ্তাহে বারাসতের নবপল্লি কো-অপারেটিভ ব্যাংকের ন’পাড়া শাখায় নগদ প্রায় ৪৪ লক্ষ টাকা জালিয়াতির ঘটনা জানাজানি হয়। এই ঘটনায় জড়িত থাকার সন্দেহে ব্যাংক ম্যানেজার সত্যব্রত মজুমদার ওরফে কুট্টি, হিসাবরক্ষক কৈলাস রায় এবং ব্যাংক কর্মী অমিত ভদ্রকে গ্রেপ্তার করে বারাসত থানার পুলিশ। এই বিষয়ে ব্যাংক কর্তৃপক্ষ জানিয়েছিলেন, ব্যাংকের লকারের চাবি থাকার কথা ম্যানেজার এবং হিসাবরক্ষকের কাছে। কিন্তু জালিয়াতির ঘটনা সামনে আসার পর লকারের চাবি পাওয়া যায় ব্যাংকের (Bank) সাধারণ কর্মী অমিতের কাছে। এই কারণেই ব্যাংক কর্তৃপক্ষের পক্ষ থেকে তিনজনের বিরুদ্ধে থানায় অভিযোগ দায়ের হয়। পরবর্তীতে সত্যব্রত মজুমদার ওরফে কুট্টি এবং অমিত ভদ্র জামিন পেয়ে যায়। কৈলাস রায় এখনও জেলে রয়েছেন। এরপর বৃহস্পতিবার দুপুরে নিজের বাড়িতে আত্মঘাতী হয় অমিত। এদিন অমিতের মা রীতা ভদ্র জানান, “জামিন পাওয়ার পর থেকেই অমিত খুব কম কথা বলত। ভয়ে ভয়ে থাকত। বাড়ির বাইরে কোথাও বের হত না।” তিনি আরও বলেন, “আমার ছেলে চুরি করেনি। ব্যাংকের ম্যানেজার কুট্টি ও ক্যাশিয়ার কৈলাস চক্রান্ত করে ছেলেকে ফাঁসিয়েছে।”
এদিন ব্যাংকের চিফ একজিকিউটিভ অফিসার সুশান্ত কুমার বাসু বলেন, “ব্যাংকের লকারের চাবি ম্যানেজার এবং ক্যাশিয়ারের কাছেই থাকে। কিন্তু লকারের চাবি ছিল সাধারণ কর্মী অমিতের কাছে। সেই কারণেই ব্যাংকের পক্ষ থেকে ম্যানেজার সত্যব্রত মজুমদার ওরফে কুট্টি, ক্যাশিয়ার কৈলাস রায় এবং অমিত ভদ্রর বিরুদ্ধে থানায় অভিযোগ করা হয়েছিল। অমিতের কাছে চাবিটা যাওয়ার কথা ছিল না। চাবিটা যার কাছে থাকার কথা ছিল সে হয়ত অমিতকে চাবিটা দিয়ে দিয়েছিল। সেক্ষেত্রে অমিতকে হয়তো ফাঁসিয়ে দেওয়া হয়েছিল।”
কো-অপারেটিভ ব্যাংকের প্রাক্তন চেয়ারম্যান তথা বারাসত পুরসভার প্রশাসক মণ্ডলীর সদস্য চম্পক দাস বলেন, “যেহেতু লকারের চাবি অমিতের কাছে পাওয়া যায় তাই জিজ্ঞাসাবাদের জন্য পুলিশ তাকে নিয়ে যায়। সেই সময় ব্যাংকের মধ্যে অমিত কুট্টিকে কাঁদতে কাঁদতে বলেছিল আমাকে ফাঁসিও না। কৈলাসকেও একই কথা বলেছিল, আমি গরিব ঘরের ছেলে আমাকে ফাঁসিও না। সেই মানসিক আঘাতের থেকেই হয়তো এই ঘটনা ঘটেছে। চাবিটা যার কাছে থাকার কথা তার কাছে না থেকে অমিতকে চাবিটা রাখতে দেওয়া হয়েছিল তখন, যখন জালিয়াতির ঘটনাটা ঘটেছে। এই কারণেই আমার মনে হয় তাকে ফাঁসানো হয়েছে।”
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.