সৌরভ মাজি, বর্ধমান: প্রাকৃতিক দুর্যোগে মর্মান্তিক ঘটনা। ছিঁড়ে পড়ে থাকা বিদ্যুতের তারে স্পৃষ্ট হয়ে মৃত্যু হয়েছে এক শিশুর। শনিবার পূর্ব বর্ধমানের গলসির এই ঘটনায় বিদ্যুৎদপ্তরের বিরুদ্ধে গাফিলতির অভিযোগ তুলেছেন স্থানীয়রা। তাঁদের অভিযোগ, বিদ্যুৎদপ্তরকে তার ছিঁড়ে পড়ে থাকার কথা জানানো হলেও ব্যবস্থা না নেওয়াতেই এই দুর্ঘটনা। দুর্ঘটনার পর বিদ্যুৎদপ্তরের এক কর্মী এলাকায় যান। স্থানীয়রা তাঁকে আটকে রাখেন। পরে গলসি থানার পুলিশ গিয়ে পরিস্থিতি সামাল দেয়। যদিও গাফিলতির অভিযোগ অস্বীকার করেছে বিদ্যুৎদপ্তর। তাদের দাবি, ঝড়ে তার ছিঁড়ে যাওয়ার বিষয়ে তাঁদের কাছে কোনও খবরই ছিল না।
জানা গিয়েছে, গলসি স্টেশনের পশ্চিমপাড়ার বাসিন্দা খুশি বাউড়ি (৮) শনিবার প্রতিবেশী আর এক নাবালিকা বিন্দিয়া বর্মার সঙ্গে দোকানে যাচ্ছিল। সেই সময় ক্যানেল পাড়ের কাছে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয় খুশি। বিন্দিয়া ছুটে গিয়ে এলাকার লোকজনকে খবর দেয়। স্থানীয়রা গিয়ে লাঠি দিয়ে বিদ্যুতের তার সরান। তারপর খুশিকে উদ্ধার করা হয়। স্থানীয় বাসিন্দা আমিনা খাতুন বলেন, “খুশির সারা শরীর ঝলসে যায়। চামড়া উঠে আসতে থাকে।” তাকে উদ্ধার করে বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানেই মৃত্যু হয় খুশির।
এলাকার বাসিন্দা অনুপ বাউড়ি, প্রদীপ বাউড়িরা জানান, গত কয়েকদিন ধরেই ঝড়বৃষ্টি হচ্ছে। দিন তিনেক আগে ঝড়ে ক্যানাল পাড়ের ওই বিদ্যুতের তার ছিঁড়ে গিয়েছিল। প্রদীপ বলেন, “সকালেও বিদ্যুৎদপ্তরে তার ছিঁড়ে থাকার কথা জানানো হয়েছিল। কিন্তু ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। ব্যবস্থা নিলে এভাবে অকালে চলে যেতে হত না খুশিকে।” অনুপ বলেন, “ছিঁড়ে থাকা তার সারানো হয়নি। উলটে ওই লাইনে বিদ্যুৎ চালু করে দেওয়া হয়েছিল। তার না সারিয়ে বিদ্যুৎ সংযোগ না দিলে এই ঘটনা ঘটত না।” জানা গিয়েছে, খুশির বাবা অনেক আগেই মারা গিয়েছেন। বাড়িতে মা ও এক দিদি রয়েছে।
গ্রামবাসীদের অভিযোগ অস্বীকার করেছে বিদ্যুৎদপ্তর। সংস্থার রিজিওনাল ম্যানেজার রাজু মণ্ডল বলেন, “বিদ্যুতের তার ছিঁড়েছিল। তাতেই বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে ওই নাবালিকার মৃত্যু হয়েছে বলে জানা যাচ্ছে। তবে ওই তার ছিঁড়ে থাকার কোনও খবর আমাদের দেওয়া হয়নি। খবর পেলেই ব্যবস্থা নেওয়া হত। আমরা বিভিন্ন জায়গায় প্রচার চালাচ্ছি যাতে এই সব বিষয়ে দ্রুত আমাদের খবর দেওয়ার জন্য। নির্দিষ্ট নম্বর ও হোয়াটসঅ্যাপ নম্বর দেওয়া হচ্ছে আমাদের খবর দেওয়ার জন্য। দ্রুত খবর পেলে এই ধরনের ঘটনা এড়ানো সম্ভব। সকলকেই আরও সচেতন হতে হবে।”
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.