স্টাফ রিপোর্টার: এক দুই নয়, টানা ৭২ দিন। জন্মের পর থেকে সন্তানকে ছুঁয়ে দেখেননি মা। ছোঁবেনই বা কী করে, ১০০ দিন আগে ভূমিষ্ঠ হওয়া ওই শিশু লড়াই করছিল মৃত্যুর সঙ্গে। জন্মানোর কথা ছিল আগস্টে। কিন্তু সাত তাড়াতাড়ি এপ্রিলেই পৃথিবীর আলো দেখে ফেলেছিল শিশুটি। ওজন মোটে ৫২৬ গ্রাম। ভাল করে তৈরি হয়নি ফুসফুস, কিডনি। এমন ক্ষেত্রে দশ জনের মধ্যে ন’জনই মারা যায়। ‘প্রি ম্যাচিওর’ সেই শিশুকে বাঁচিয়ে নজির স্থাপন করলেন চিকিৎসকরা।
হুগলির মশাটে বাড়ি যতীন ঘোষের। ২০১৯ জানুয়ারিতে তাঁর স্ত্রী ভাস্বতী দ্বিতীয়বারের জন্য সন্তানসম্ভবা হন। স্ত্রীকে নিয়ে সল্টলেকের আমরি হাসপাতালে আসেন তিনি। চিকিৎসকরা জানান আগস্ট মাসে সন্তান ভূমিষ্ঠ হবে। তেমনটাই ঠিক ছিল। কে জানত ভবিষ্যৎ অন্য পরিকল্পনা করে রেখেছে। এপ্রিলেই মারাত্মক পেটে ব্যথা শুরু হয় ভাস্বতী দেবীর। ব্লিডিং হতে থাকে। ওই অবস্থায় স্ত্রীকে নিয়ে সল্টলেক আমরিতে যান যতীনবাবু।
যতীনবাবু বলেন, “টেনশনে আমার হাত-পা ঠান্ডা হয়ে গিয়েছিল। আচমকা কেন পেট ব্যথা শুরু হল তা ভেবেই পাচ্ছিলাম না। তখনও তো জানতাম না এত আগেই সন্তান ভূমিষ্ঠ হতে চলেছে।” স্ত্রীকে নিয়ে অপারেশন থিয়েটারে চলে যান ডাক্তাররা। বাইরে উদ্বিগ্ন যতীন অপেক্ষারত। আচমকাই ভিতর থেকে খবর আসে, পুত্রসন্তান হয়েছে। তবে খুশির মধ্যেও তখন অন্য চিন্তা। একশো দিন আগেই যে পৃথিবীতে চলে এসেছে সন্তান!
চিকিৎসকরা শিশুটিকে পরীক্ষা করে দেখেন ওজন অনেক কম। মাত্র ৫২৬ গ্রাম। সাধারণত শিশু দশ মাসে ভূমিষ্ঠ হওয়ার কিছুদিন আগে থাকতে মায়ের জঠরের মধ্যেই তৈরি হয় ফুসফুস। এই শিশুটির ফুসফুসের অর্ধেকের বেশি অংশ তৈরি হয়নি। ডা. সৌম্যব্রত আচার্য জানিয়েছেন, ফুসফুসটি দেখে আমরা চমকে যাই। অক্সিজেন সরবরাহ তো দূরের কথা, ফুসফুসের ভেতরের প্রকোষ্ঠগুলি তখনও ভাল করে তৈরি হয়নি। অপরিণত ছিল হৃদযন্ত্রও। প্রথমটায় সকলেই ভেবে নিয়েছিল শিশুটিকে বাঁচানো সম্ভব নয়। তবে শেষ চেষ্টা করতে ছাড়েননি চিকিৎসকরা। ওই অবস্থাতেই অ্যাম্বুল্যান্সে করে তাকে নিয়ে আসা হয় মুকুন্দপুর আমরি হাসপাতালে। তড়িঘড়ি তাকে ‘নিকু’তে নিয়ে যাওয়া হয়। বিশেষ এক নলের মাধ্যমে ফুসফুসের মধ্যে ওষুধ পাঠানো হতে থাকে। ডা. সৌম্যব্রত আচার্যের কথায়, “এভাবেই টানা আড়াইমাস ওষুধ দিয়ে স্বাভাবিক গঠনে আনা হয় ফুসফুসকে।” জন্মানোর পর থেকে ইনকিউবেটরই ছিল শিশুটির আস্তানা। টানা ৭২ দিন ইনকিউবেটরে থাকার পর যখন শিশুটিকে বের করা হয়, তখনও বিশ্বাস করতে পারছিলেন না ভাস্বতী। “জন্মানোর পর থেকে ছুঁয়ে দেখতে পারিনি, ৭২ দিন পর কোলে নিয়ে প্রথম যখন ওর কান্নার আওয়াজ শুনি চোখে জল চলে এসেছিল।”
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.