ধীমান রায়, কাটোয়া: ২.৯ বাই ১.৪ সেন্টিমিটারের ছোট্ট ক্যানভাস। তার উপর পাঁচটি কৃত্রিম নখ। কোনওটিতে নিপুন হাতে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে নেতাজি সুভাষ চন্দ্র বসু, কোনওটায় মহাত্মা গান্ধী কিংবা ভগৎ সিং। একটিতে জাতীয় পতাকা হাতে এক নাগরিক। অপর একটিতে ধর্মনিরপেক্ষ, প্রজাতান্ত্রিক ভারতের বৈচিত্রের মধ্যে ঐক্যের পরম্পরাকে তুলে ধরেছিল বর্ধমানের (Bardhaman) বুবুন। আর সেই ছবির হাত ধরেই ইন্ডিয়া বুক অফ রেকর্ডসে (India Book of Records) নাম তুলে ফেললেন পূর্ব বর্ধমান জেলার মন্তেশ্বর থানার সুটরা গ্রামের ওই যুবক।
বর্ধমানের মন্তেশ্বর কলেজ থেকে ভূগোলে অনার্স নিয়ে দু-বছর আগে পাশ করেছেন বুবুন পাল। তারপর তিনি দিল্লির লক্ষ্ণৌ ইউনিভার্সিটি থেকে আর্ট (ডিপ্লোমা) নিয়ে পড়াশোনা করছেন। বাবা যজ্ঞেশ্বর পাল পেশায় ভাগচাষি। কোনওরকমে সংসার চালিয়ে খুব কষ্ট করেই ছেলের পড়াশোনা চালানোর চেষ্টা করেছেন তিনি। কিন্তু তাঁর সামান্য আয়ে বুবুনের খরচ চালানো সম্ভব ছিল না। তাই পড়াশোনার পাশাপাশি চাকরি করতে শুরু করেন ওই যুবক। এরপর আচমকাই বুবুন ইন্ডিয়া বুক অফ রেকর্ডসের অনলাইন প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহন করেন চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি মাসের প্রথমদিকে। প্রতিযোগিতার বিষয় ছিল, তিন মিনিটের মধ্যে ২২.৯/ ১.৪ সেমির ক্ষুদ্রতম ক্যানভাসের উপর ক্ষুদ্রতম শিল্প তৈরি। সেখানেই হাতের জাদু দেখিয়ে সেরার খেতাব জিতেছেন ২৩ বছরের বুবুন।
বুবুন জানিয়েছেন, এই প্রতিযোগিতায় তিনি ব্যবহার করেছিলেন পেনসিল ও জেল নেলপলিশ। জানা গিয়েছে, শুক্রবার ডাকে ইন্ডিয়া বুক অফ রেকর্ডসের শংসাপত্র, মেডেল ও অন্যান্য পুরষ্কার চলে আসে বর্ধমানে। বুবুনের এই কৃতিত্বের কথা জানতে পেরে পাড়া-প্রতিবেশীরাও রীতিমতো আপ্লুত। ওই যুবকের মা দুর্গা পাল ও বাবা যজ্ঞেশ্বর পাল বলেন, “ছোটো থেকেই ছেলে ছিল বেশ মেধাবী। আঁকার নেশাও ছিল। ছেলের পড়াশোনার খরচ জোগানের সামর্থ্য আমাদের হয়নি। তবু ছেলেটা যা দেখাল বাবা মা হিসাবে আমরা সৌভাগ্যবান।” বুবুন বলেন, “আর্ট নিয়েই আমি এগিয়ে যেতে চাই। ভবিষ্যতে আরও ভাল কাজ করতে চাই।”
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.