বিপ্লবচন্দ্র দত্ত, কৃষ্ণনগর: বয়স তার মাত্র নয় বছর। ছোট থেকেই নিজের পায়ে দাঁড়ানোর ক্ষমতা নেই। শারীরিক দিক দিয়ে বিশেষভাবে সক্ষম ছোট্ট অঙ্কিতাকে সুস্থ করে তোলার জন্য সংসারের শত অভাবের মধ্যেও হাজার চেষ্টা চালিয়েছেন তার বাবা-মা। কিন্তু অঙ্কিতা নিজের পায়ে দাঁড়াতে পারেনি। এই বয়সেই হুইলচেয়ার তার নিত্যসঙ্গী। যদিও নিজের পায়ে উঠে না দাঁড়াতে পারলেও মাত্র ন’বছর বয়সি অঙ্কিতা চায়, করোনা নামক মারণরোগের কবল থেকে উঠে দাঁড়াক তার নিজের রাজ্য, নিজের দেশ। আর তাই, সে নিজেও আজ করোনা-যুদ্ধে শামিল।
নিজের প্রতিবন্ধী ভাতার তিন মাসের তিন হাজার টাকা এবং সেইসঙ্গে তিল তিল করে জমানো এক হাজার টাকা-সহ মোট চার হাজার টাকা অঙ্কিতা তুলে দিয়েছে করোনা আক্রান্তদের চিকিৎসার জন্য। চার হাজার টাকার চেক প্রধানমন্ত্রীর ত্রাণ তহবিলে দান করে অনন্য নজির সৃষ্টি করেছে নদিয়ার নবদ্বীপের এই ছোট্ট মেয়েটি। তার পরিবারের সদস্যরা জানিয়েছেন, ‘চতুর্থ শ্রেণীর ছাত্রী অঙ্কিতার স্কুল বন্ধ থাকার কারণে সবার মতো সেও ঘরবন্দী। যদিও নিজের পড়াশোনা চালিয়ে যাওয়া তো বটেই, নিজের অত্যন্ত শখের ছবি আঁকা অঙ্কিতা বন্ধ করেনি। করোনা ভাইরাস সম্পর্কে জানার জন্য বাড়ির টেলিভিশনের পর্দায় হুইলচেয়ারে বসেও সর্বদা চোখ রেখেছে সে।’ সেসব দেখেই ৯ বছরের ছোট্ট মেয়েটি বাবা-মাকে বলেছিল করোনা আক্রান্তদের জন্য কিছু করতে চায় সে। তার জমানো সব টাকা দিয়ে দিতে চায় করোনা আক্রান্তদের চিকিৎসার্থে। মেয়ের এমন ইচ্ছার কথা শুনে বাবা-মা তো বাধা দেননিই, উলটে সাহস জুগিয়েছেন।
অঙ্কিতার বাবা-মা জানিয়েছেন, ‘একদিন টিভিতে খবর দেখে মেয়ে জানতে পারে করোনা ভাইরাসের কথা। এও শোনে অনেকেই মুখ্যমন্ত্রী ও প্রধানমন্ত্রীর ত্রাণ তহবিলে টাকা দান করছেন। তখন ও আমাদের কাছে আবদার করে তার জমানো টাকা প্রধানমন্ত্রীর ত্রাণ তহবিলে পাঠাবে। আমাদের একমাত্র সন্তানের এই বয়সে এমন ভাবনাচিন্তার কথা শুনে গর্বে বুক ভরে ওঠে আমাদের। সঙ্গে সঙ্গেই আমরা ওর ইচ্ছাকে মান্যতা দিই। আমার মেয়ের তিন মাসের প্রতিবন্ধী ভাতার তিন হাজার টাকা এবং আমার মেয়ে জমানো একহাজার টাকা, সেই মোট চার হাজার টাকার চেক ব্যাংকের মাধ্যমে মঙ্গলবার প্রধানমন্ত্রীর ত্রাণ তহবিলে পাঠানো হয়েছে।’ শারীরিক দিক দিয়ে বিশেষভাবে সক্ষম ছোট অঙ্কিতার এমন মহান কাজে গর্বিত এলাকাবাসীওl আর আঙ্কিতা? সে কী বলছে? ৯ বছরের ছোট্ট মেয়েটি জানিয়েছে, সরকারি বিধি মেনে দূরত্ব বজায় রাখা, বারবার সাবান দিয়ে হাত ধোয়া, এমনকী মুখে মাস্ক ব্যবহার করার মত সবই সে করছেl যার সঙ্গেই দেখা হচ্ছে, দূর থেকে জানাচ্ছে, ‘তোমরা সবাই এই নিয়ম মেনে চলো।’ নিজের সব টাকা দান করার পর অঙ্কিতা জানিয়েছে, ‘আমার তো যা ছিল, আমি দিয়েছি। আমি চাই, তাড়াতাড়ি করোনা থেকে সবাই সুস্থ হয়ে উঠুক। সবার ভাল হোক।’
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.