সন্দীপ মজুমদার ও অরিজিৎ গুপ্ত: ভাগাড় কাণ্ড প্রকাশ্যে আসতেই বাঙালির পাত থেকে উধাও হয়েছে কষা চিকেন কিম্বা গরম পাঠার ঝোল৷ জিভে জল এলেও আপাতত মাংসের সঙ্গে সমদূরত্ব বজায় রেখে চলেছে বাংলা৷ ফলে, একলাফে চাহিদা কমেছে কয়েকগুণ৷ বাঙালির মন থেকে মাংসের আতঙ্ক কাটাতে এবার সরকারি উদ্যোগে রেস্তোরাঁগুলি অভিযান শুরু করল উলুবেড়িয়া পুরসভা৷ শুধু পুরসভার তরফেই নয়, এদিন ভাগাড়ের মাংস সন্ধানে পথে নামে অতি উৎসাহী বিজেপি৷ খারাপ মাংস বিক্রির অভিযোগে পাওয়ার পরই এদিন একটি হোটেলের সাইনবোর্ডে কালি লাগিয়ে বিক্ষোভ দেখায় বিজেপি’র নেতা-কর্মীরা৷
এদিন উলুবেড়িয়া পুরসভার স্বাস্থ্য বিভাগ থেকে বিভিন্ন হোটেল ও রেস্তোরাঁয় অভিযান চালিয়ে উদ্ধার হয় প্রায় ৮০ কেজি পচা মাংস৷ পচা মাংস রেখে দেওয়ার অভিযোগে বন্ধ করে দেওয়া হয় দুটি রেস্তরাঁ৷ একইসঙ্গে তলব করা হয়েছে বেশকিছু রেস্তরাঁর মালিক ও মাংস বিক্রেতাদের৷
শুক্রবার উলুবেড়িয়া পুরসভার ভাইস চেয়ারম্যান আব্বাসউদ্দিন খানের নেতৃত্বে উলুবেড়িয়া স্টেশন রোড ও ওটি রোডে প্রায় ২৫ থেকে ৩০টি দোকানে অভিযান চালানো হয়। পচা মাংস মজুত রাখা ও বৈধ অনুমতি পত্র না থাকার কারণে উলুবেড়িয়া স্টেশন রোড সংলগ্ন দুটি রেস্তোরাঁ বন্ধ করে দেওয়া হয়৷ এই অভিযানে পুরসভার চেয়ারম্যান অর্জুন সরকার, কাউন্সিলর অভয় দাস সহ অন্যান্য জনপ্রতিনিধিরা অংশ নেন৷ প্রায় ৮০ কেজি বাসি ও পচা মাংস কয়েকটি হোটেল ও রেস্তোরাঁ থেকে বাজেয়াপ্ত করেন৷ একইসঙ্গে তাঁরা বেশকিছু বাসি তৈরি মাংস, বিরিয়ানি, ফ্রায়েড রাইস, চাওমিন, কাটলেট, ভেজিটেবল চপ ও অন্যান্য খাবার ও খাবার তৈরির উপকরণ বাজেয়াপ্ত করে নষ্ট করে দেন৷ পুরসভার জল পরীক্ষকরা হোটেল ও রেস্তরাঁগুলিতে সরবরাহ করা পানীয় জলের নমুনা পরীক্ষা করে দেখেন৷ এই বিষয়েও বেশ কিছু রেস্তরাঁ ও হোটেল মালিককে সতর্ক করা হয়৷ তাঁদেরকে জানানো হয়, বাসি খাবার কোনওভাবেই বিক্রি করা চলবে না৷ সকালের খাবার বিকেলে সরবরাহ করা যাবে না৷ পরিস্রুত পানীয় জল ছাড়া অন্য কোনও জল ব্যবহার করা যাবে না ও যেখান থেকে মাংস কেন হবে সেখানকার রশিদ রাখতে হবে৷ পুরসভার পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, এরপর উলুবেড়িয়ার বিভিন্ন নার্সিংহোমে সরবরাহ করা মাছ ও মাংসের নমুনা পরীক্ষা করে দেখা হবে৷ একইসঙ্গে ছয় নম্বর জাতীয় সড়ক সংলগ্ন যেসব হোটেল, রেস্তোরাঁ ও ধাবা আছে সেগুলিতেও অভিযান চালানো হবে৷ ২০ লিটার জারে সরবরাহ করা পানীয় জলের নমুনাও পরীক্ষা করে দেখা হবে বলে জানা গিয়েছে৷
একই সঙ্গে এদিন ভাগাড় কাণ্ডে হোটেলের নাম লেখা বোর্ডে কালি লাগিয়ে বিক্ষোভ দেখায় বিজেপি৷ দীর্ঘদিনের বাসি মাংস ফ্রিজে রাখা ও রান্না করা খাবার ফ্রিজে রেখে দেওয়ার পর সেই খাবার গ্রাহকদের পরিবেশন করার প্রতিবাদ জানানো হয়৷ শুক্রবার দুপুরে হাওড়ার পাঁচতারা হোটেল অশোকের সামনে বিক্ষোভ দেখায় বিজেপির নেতা কর্মীরা৷ ভাগাড় কাণ্ডের জেরে গতকাল হাওড়া পুরনিগম ও জেলা স্বাস্থ্য দপ্তর একযোগে অভিযান চালায় হাওড়ার বিভিন্ন হোটেলে৷ তারপরেই সামনে আসে এই তথ্য৷ একটি পাঁচতারা হোটেলের রন্ধনশালা থেকে কেমিক্যাল দিয়ে সংরক্ষণ করে রাখা ২০-২২ দিনের পুরানো মাংসের খোজ পেয়েই চমকে ওঠে হাওড়াবাসী৷ এরপরেই শুক্রবারে হাওড়া স্টেশন সংলগ্ন দ্য অশোকা হোটেলের সামনে বিক্ষোভ দেখান বিজেপি সমর্থকরা। হোটেলের সামনের দেওয়ালে লাগানো হোটেলের নাম কালি লাগিয়ে দেন বিজেপি সমর্থকরা৷ এর সঙ্গেই এই হোটেলের বিরুদ্ধে কোনও ব্যবস্থা না নেওয়ার জেরে এইচএমসি বা হাওড়া মিউনিসিপাল কর্পোরেশনের নামেও কালি লাগিয়ে দেন তারা। এত বেনিয়ম নিজের চোখে দেখার পরেও কেন ওই হোটেলের রেস্তোরাঁ বন্ধ করে দেওয়া হোল না এই অভিযোগ তোলেন হাওড়া জেলা (সদর) বিজেপি সভাপতি সুরজিত সাহা৷
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.