অরূপ বসাক, মালবাজার: প্রতিমা নিরঞ্জনের সময় বড়সড় বিপর্যয়। জলপাইগুড়ির মাল নদীতে হড়পা বানে প্রাণ গেল ৮ জনের। হাসপাতালে ভরতি বহু। মৃতের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে বলেই মনে করা হচ্ছে। এই ঘটনায় স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্নের মুখে প্রশাসনের ভূমিকা।
বুধবার ঘড়ির কাঁটায় তখন রাত ৮টা ৪৫মিনিট হবে। ডুয়ার্সের মালবাজার (Malbazar) শহরের পূর্ব প্রান্ত দিয়ে বয়ে যাওয়া মাল নদীর নিরঞ্জন ঘাটে প্রতিমা নিরঞ্জন চলছিল। আচমকা রুদ্ররূপ ধারণ করে দুরন্ত মাল নদী। পাহাড়ের উপর থেকে ধেয়ে আসে হড়পা বান। সেই বানের তোড়ে ভেঙে যায় প্রশাসনের তৈরি করা বালির বাঁধ। নদী ফিরে পায় তার আগেকার স্রোত। প্রতিমা নিরঞ্জন করতে আসা কয়েকটি গাড়ি ও কয়েকশো মানুষ নদীর স্রোতের মুখে পড়ে। ভেসে যায় বেশ কিছু মানুষ ও প্রতিমা নিরঞ্জনের ট্রাক। উদ্ধারকারী দল বেশ কয়েকজনকে উদ্ধার করে। বেশ কয়েকজনকে মাল সুপার স্পেশ্যালিটি হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। সর্বশেষ পাওয়া খবর অনুযায়ী এখনও পর্যন্ত মৃত্যু হয়েছে ৮ জনের। মৃতদের মধ্যে ৪ জন মহিলা, ৩ জন পুরুষ এবং ১ জন শিশু রয়েছে। হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ১৫-১৬ জন। মৃতের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে বলে মনে করা হচ্ছে। নিহত ও আহতদের বাড়ি মালবাজার শহর-সহ আশেপাশের এলাকায়। বৃহস্পতিবার সকালেও চলছে উদ্ধারকাজ।
রাত ১১টা নাগাদ মাল সুপার স্পেশ্যালিটি হাসপাতালে আহত এবং নিহতদের দেখতে যান জলপাইগুড়ির জেলাশাসক মৌমিতা গোদারা বসু। মন্ত্রী বুলুচিক বড়াইক, মালবাজার পুরসভার চেয়ারম্যান স্বপন সাহা, তৃণমূল জেলা সভাপতি মহুয়া গোপও হাসপাতালে যান। নাগরাকাটার বিজেপি বিধায়ক পুনা ভেংড়া এবং পুলিশ আধিকারিকেরা হাসপাতালে গিয়ে আহতদের সঙ্গে দেখা করেন। ওইদিন রাতে স্থানীয় বাসিন্দারা উত্তেজিত হয়ে পড়েন। হাসপাতালের সামনে জমায়েত করেন তাঁরা। হাসপাতালে ভাঙচুরও করা হয়।
গত বেশ কয়েক দিন ধরে ডুয়ার্সের বিভিন্ন প্রান্তে ও সংলগ্ন পাহাড়ি এলাকায় বৃষ্টি চলছিল। সেই বৃষ্টির জেরে মাঝেমধ্যে পাহাড়ি মাল নদী স্রোতস্রিনী হয়ে উঠছিল। মাত্র ১৪ দিন আগে এমনই হড়পা বানে ভেসে গিয়েছিল আস্ত একটি ট্রাক। তারপর তর্পণ করতে এসে নদীর বেপরোয়া রূপ দেখে অনেকে ফিরেও যান। এই রকম পরিস্থিতিতে নদীকে বশে এনে নিরঞ্জন ঘাট তৈরি করা ছিল পৌর প্রশাসনের কাছে এক বড় চ্যালেঞ্জ। গত কয়েকদিন থেকে জেসিবি মেশিনের সাহায্যে নদীর গতিপথ বদল করে নিরঞ্জন ঘাট তৈরি করেছিল মাল পৌর প্রশাসন। মাল নদীতে ৬৫-৭০টি প্রতিমা নিরঞ্জনের কথা ছিল। তবে বিপর্যয়ের জেরে তা আর সম্ভব হয়নি। যুদ্ধকালীন তৎপরতায় এখনও চলছে উদ্ধারকাজ। এই বিপর্যয়ের পর স্বাভাবিকভাবেই প্রশাসনের ভূমিকা বড়সড় প্রশ্নচিহ্নের মুখে। উৎসবের শেষ লগ্নে এমন ঘটনায় মালবাজারে নেমেছে শোকের ছায়া। এই ঘটনা. প্রধানমন্ত্রীর দপ্তর থেকে টুইটে শোকপ্রকাশ করা হয়েছে।
Anguished by the mishap during Durga Puja festivities in Jalpaiguri, West Bengal. Condolences to those who lost their loved ones: PM @narendramodi
— PMO India (@PMOIndia) October 5, 2022
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.