ফাইল ছবি
সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: তৃণমূলের প্রার্থী তালিকায় বড় চমক। বাদ গেলেন সাত সাংসদ। নুসরত জাহান, মিমির মতো তারকা সাংসদ পেলেন না টিকিট। এই প্রথমবার তৃণমূলের হয়ে ভোটে লড়ছেন না অধিকারী পরিবারের কেউ। যদিও তা প্রত্যাশিতই ছিল। আবার বারাকপুর শিল্পাঞ্চলেও অর্জুন সিংয়ের উপর আস্থা রাখতে পারল না ঘাসফুল শিবির। সব মিলিয়ে ৪২ আসনে ২৬ জনই নতুন মুখ। তার মধ্যে ১০ জন একেবারেই আনকোরা, ১১ জন বিধায়ক। এবং বাকি ৫ জন বিজেপি থেকে তৃণমূলে ফিরে পেলেন লোকসভা ভোটের টিকিট।
একুশের বিধানসভা নির্বাচনের আগে দলবদল করেন শুভেন্দু অধিকারী। অমিত শাহর সামনে যোগ দেন বিজেপিতে। বর্তমানে নন্দীগ্রাম বিধানসভার বিধায়ক তিনি। রাজ্যের বিরোধী দলনেতা। বলা চলে শুভেন্দুর দলবদলের পর থেকেই অধিকারী পরিবারে উলটো স্রোত। সাংসদ হওয়া সত্ত্বেও তৃণমূলের বিরুদ্ধে মুখ খুলতে দেখা গিয়েছে শিশির অধিকারী এবং দিব্যেন্দুকে। তাই অধিকারী পরিবারের কেউ যে ভোটের টিকিট পাচ্ছেন না, তা এককথায় নিশ্চিতই ছিল। আর রবিবাসরীয় ব্রিগেডের মঞ্চ থেকে ৪২ আসনে প্রার্থী তালিকা ঘোষণার পর সেই গুঞ্জনেই সিলমোহর। তমলুক লোকসভা আসনে শিশিরের পরিবর্তে দেবাংশু ভট্টাচার্যতেই আস্থা রেখেছে ঘাসফুল শিবির। দিব্যেন্দুর লোকসভা কেন্দ্র কাঁথিতে তৃণমূলের চব্বিশের সৈনিক উত্তম বারিক। সুতরাং, এই প্রথমবার লোকসভা নির্বাচনে তৃণমূলের হয়ে ভোটে লড়ছেন না অধিকারী পরিবারের কেউ। আবার মেদিনীপুর থেকে বাদ গিয়েছেন মানস ভুঁইয়াও। কারণ, বার বার যেমন বিতর্কে জড়িয়েছেন আবার তেমনই সাধারণ মানুষেরও তাঁর বিরুদ্ধে ক্ষোভবিক্ষোভের শেষ নেই। এদিকে, বারাকপুরে বিজেপি থেকে ফেরা অর্জুন সিং পেলেন না টিকিট। দলে প্রত্যাবর্তনের সুযোগ পেলেও তিনি যে তৃণমূলে তাঁর পুরনো স্থান ফিরে পাননি তা এককথায় স্পষ্ট। টিকিট পেলেন না দীনেশ ত্রিবেদীও।
সাংসদ থাকা সত্ত্বেও টিকিট না পাওয়ার তালিকায় রয়েছেন মিমি চক্রবর্তী, নুসরত জাহানের মতো দুই তারকা। মিমি সম্প্রতি সাংসদ পদ থেকে ইস্তফা দেন। রাজনীতি থেকে সরে দাঁড়ানোর ইচ্ছাপ্রকাশ করেন। মমতা তাঁর ইস্তফাপত্র গ্রহণ করেননি ঠিকই। তবে চব্বিশের যুদ্ধে আস্থাও রাখেননি। মিমির পরিবর্তে যাদবপুর লোকসভা কেন্দ্রে যুবনেত্রী সায়নী ঘোষকে বেছে নিয়েছে দল। গল্ফগ্রিনের বাসিন্দা সায়নীর তারকা ইমেজ যেমন রয়েছে, তেমনই আবার দক্ষ সংগঠকও।
অপর তারকা সাংসদ মিমির ‘বোনুয়া’ নুসরত জাহান যে টিকিট পাচ্ছেন না তা মোটের উপর স্পষ্টই ছিল। রাজনৈতিক মহলের মতে, নুসরত গত লোকসভা নির্বাচনে বিপুল ভোটে জিতলেও জনপ্রতিনিধি হয়ে উঠতে পারেননি। তাই নিজের সংসদীয় এলাকায় তেমন কোনও কাজ করেননি, অন্ততপক্ষে স্থানীয় বাসিন্দাদের একাংশের দাবি সেরকমই। সম্প্রতি সন্দেশখালি কাণ্ডের পরেও নিজের সংসদীয় এলাকায় দেখা যায়নি তাঁকে। পরিবর্তে সোশাল মিডিয়ায় বেশি সক্রিয়। তাই আর টিকিট পাননি নুসরত। তাঁর পরিবর্তে ভূমিপুত্র হাজি নুরুল ইসলামের উপর ভরসা রেখেছে ঘাসফুল শিবির। এদিকে, CAA, NRC নিয়ে হইচইয়ের মাঝে এবারের লোকসভা নির্বাচনে মতুয়া ভোট বড় ফ্যাক্টর। তাই বনগাঁয় মতুয়া গড় থেকে কেউ প্রার্থী হবেন বলেই মনে করা হচ্ছিল। মমতাবালা ঠাকুর বর্তমানে রাজ্যসভার সাংসদ। চব্বিশে তৃণমূলের টিকিট পেলেন বিশ্বজিৎ দাস। তিনি বর্তমানে বাগদার বিধায়ক।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, উত্তরবঙ্গে তৃণমূলের সংগঠন কিছুটা দুর্বল। মেগা ফাইটের আগে প্রায় সবকটি লোকসভা কেন্দ্রেই গতবারের প্রার্থীদের উপর আস্থা রাখতে পারল না ঘাসফুল শিবির। এবার দার্জিলিংয়ে টিকিট পাননি অমর সিং রাই। পরিবর্তে গোপাল লামার উপর আস্থা রেখেছে তৃণমূল। কোচবিহারে পরেশচন্দ্র অধিকারীর পরিবর্তে প্রার্থী জগদীশ চন্দ্র বসুনিয়া। আলিপুরদুয়ারে টিকিট পাননি দশরথ তিরকে। তাঁর বদলে শাসক দলের আস্থা প্রকাশ চিক বরাইকে। জলপাইগুড়িতে নির্মলচন্দ্র রায় প্রার্থী। বাদ গিয়েছেন বিমলচন্দ্র বর্মন। রায়গঞ্জে ‘দলবদলু’ কৃষ্ণ কল্যাণীই তৃণমূলের সৈনিক। বাদ গিয়েছেন কানাইয়া লাল।
আমজনতার নজরে থাকা বালুরঘাট থেকে অর্পিতা ঘোষ, মালদহ উত্তরের মৌসম নূর, মালদহ দক্ষিণের মোয়াজ্জেম হোসেন, আরামবাগের অপরূপা পোদ্দার, বর্ধমান পূর্বের সুনীল মণ্ডলরা আর টিকিট পাননি। বহরমপুরে বাদ গিয়েছেন অপূর্ব সরকার, রানাঘাটের রূপালি বিশ্বাস, ঝাড়গ্রামের বীরবাহা সোরেন, পুরুলিয়ার মৃগাঙ্ক মাহাতো, বিষ্ণুপুরের শ্যামল সাঁতরা, দুর্গাপুর-বর্ধমান লোকসভা মমতাজ সংঘমিত্রাও পেলেন না টিকিট। মনে করা হচ্ছে, বার্ধক্যজনিত কারণে এবার আর সিএম জাটুয়া, হুগলির রত্না দে নাগকেও টিকিট দেওয়া হয়নি।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.