রবীন গিরি: তাসের ঘরের মতো ভেঙে পড়ল চারতলা বাড়ি৷ ধসের জেরে এই দুর্ঘটনা৷ ঘটনাস্থলেই মৃত্যু হল সাতজনের৷ দার্জিলিং শহরে বেনজির এই কাণ্ড৷ আশঙ্কাজনক অবস্থায় আটজনকে পাঠানো হয় হাসপাতালে৷ উদ্ধারে নামে সেনা৷
রাজ্য সরকারের তরফে মৃতদের পরিবার পিছু দু’লাখ টাকা ও আহতদের এক লাখ টাকা করে ক্ষতিপূরণ ঘোষণা করা হয়েছে৷ দেহ সৎকারের জন্য জেলা প্রশাসনের তরফে দশ হাজার টাকা করে দেওয়া হয়৷ মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নির্দেশে কলকাতা থেকে তড়িঘড়ি শিলিগুড়ি ফিরে পাহাড়ে পৌঁছন উত্তরবঙ্গ উন্নয়নমন্ত্রী রবীন্দ্রনাথ ঘোষ৷ জিটিএ-র তরফেও ক্ষতিপূরণ ঘোষণা করেন বিমল গুরুং৷
দার্জিলিং শহরের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ জাকির হুসেন রোডের বুচার বস্তিতে এই বহুতল ভেঙে পড়ার ঘটনায় আতঙ্ক ছড়ায় শৈলশহরবাসীর মধ্যে৷ শুক্রবার রাত সাড়ে দশটা নাগাদ বিকট শব্দে হুড়মুড়িয়ে ভেঙে পড়ে বাড়িটি৷ সঙ্গে সঙ্গেই বিদ্যুত্ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায় শহরে৷ আতঙ্কিত হয়ে পড়েন পাহাড়ে আসা পর্যটকরাও৷ দুর্ঘটনার খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে পৌঁছন জেলাশাসক ও পুলিশ সুপার৷ আসেন দার্জিলিংয়ের বিধায়ক তথা পুরপ্রধান অমরসিং রাই৷ উদ্ধার কাজে তদারকি করেন তাঁরা৷ দমকল, সিভিল ডিফেন্স, ডিজাস্টার ম্যানেজমেন্টের কর্মীরা উদ্ধারে নামেন৷ একদিকে ঝিরঝিরে বৃষ্টি, তার উপর বিদ্যুৎ না থাকায় এমার্জেন্সি লাইট জ্বালিয়ে উদ্ধার কাজ শুরু হয়৷
ধ্বংসস্তূপ সরাতেই একের পর এক দেহ বেরিয়ে আসে৷ রাতেই উদ্ধার হয় একই পরিবারের তিনজনের মৃতদেহ৷ জীবিত অবস্থায় উদ্ধার হয় আটজন৷ তাদের মধ্যে একজন নাবালক ও তিনজন নাবালিকা৷ মৃতরা হলেন, অমৃতা পারিয়ার (৬০), রাজেশ পারিয়ার (৪৫) এবং অনিতা পারিয়ার (৪০)৷ এই দুর্ঘটনার পর পাহাড়ে বহুতল নিয়ে ফের প্রশ্ন উঠেছে৷ শনিবার সকালে ভোরের আলো ফুটতেই আরও জোর কদমে শুরু হয় উদ্ধার কাজ৷ এদিন বিকেলে ফের উদ্ধার হয় উমনি হাবিব (২৭), নাসিমা বানু, জমিলা বানু এবং সাবিনা কাশ্মীরির মৃতদেহ৷
দার্জিলিংয়ের পুলিশ সুপার অমিত পি জাভালগি বলেন, “ওই বাড়িটি অনেক দিনের পুরনো৷ কয়েকদিনের বৃষ্টির ফলে ভার সইতে না পেরে হয়তো ভেঙে পড়েছে বাড়িটি৷” দার্জিলিংয়ের জেলাশাসক অনুরাগ শ্রীবাস্তব বলেন, “সন্ধে পর্যন্ত সাতজনের মৃতদেহ উদ্ধার হয়েছে৷ আহতরা হাসপাতালে চিকিৎসাধীন৷” আহতদের নাম অঞ্জলি পারিয়ার, মহম্মদ সালাম, গুলাম হুসেন, ফয়েজ রাজা, ইভা পারভিন, সাবানা খাতুন, আলাউদ্দিন শাহ এবং সাবিনা খাতুন৷ ভেঙে পড়া ওই বাড়িটির মালিক অশোক ছেত্রী শুক্রবার শিলিগুড়িতে ছিলেন৷ বাড়িটি দীর্ঘদিন ধরে সংস্কার হয়নি বলেও অভিযোগ৷ তবে অনেকেই মনে করছেন প্রবল বর্ষণের কারণেই পুরনো এই বাড়িটি ভেঙে পড়েছে৷
দু’দিন আগেই লোদামায় ধসে বাড়ি চাপা পড়ে একই পরিবারের তিনজনের মৃত্যু হয়৷ শুক্রবার রাতে বাড়ি ভেঙে মৃত্যুর ফলে এক সপ্তাহে দার্জিলিং পাহাড়ে দশজনের মৃত্যু হল৷ এদিকে শনিবার বিকেলে কালিম্পংয়ের রম্ভির ১৮ মাইলে বড়সড় ধসে বন্ধ হয়ে যায় সিকিমের সঙ্গে সড়ক যোগাযোগ৷ সেবকেও ধস নামে৷
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.