ধীমান রায়, কাটোয়া: রেলে চাকরি দেওয়ার নাম করে ৪১ লক্ষেরও বেশি টাকা প্রতারণার অভিযোগ উঠল এক চক্রের বিরুদ্ধে। ইতিমধ্যেই ওই প্রতারণা চক্রের সঙ্গে জড়িত এক মহিলা-সহ ৫ জনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। চাঞ্চল্যকর ঘটনাটি বর্ধমান জেলার গুসকরার (Guskhara)। পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, এলাকার বাসিন্দা এক যুবকের অভিযোগের ভিত্তিতেই এই গ্রেপ্তারি।
জানা গিয়েছে, অভিযোগকারী সব্যসাচী মণ্ডল একটি বিস্কুট কারখানায় কাজ করতেন। তিনি জানিয়েছেন, ধৃতদের মধ্যে পূর্ণিমা নামে একজনের বাড়িতে কালীপুজো হয়। মায়ের সঙ্গে পুজো দিতে গিয়ে পূর্ণিমাদেবীর সঙ্গে আলাপ তাঁর। তখন পূর্ণিমাদেবীই সব্যসাচীকে বলেন, রেলে চাকরি করে দেওয়ার বিষয়ে তাঁর যোগাযোগ রয়েছে। টাকা তেমন কিছু লাগবে না। স্বাভাবিকভাবেই রেলে চাকরির প্রলোভন ছাড়তে পারেননি তিনি। সব্যসাচীবাবু বলেন, “টাকার কথা প্রথমে না বললেও আমার শিক্ষাগত যোগ্যতার সংশাপত্র দেওয়ার কিছুদিন পর থেকেই আমাকে ধাপে ধাপে টাকা দিতে হয়েছে। মোট ৪ লক্ষ ৭৫ হাজার টাকা আমি দিয়েছি। এরপর আমাকে পূর্ণিমাদেবী ও তাঁর সাগরেদরা সঙ্গে করে শিয়ালদহ নিয়ে গিয়েছিল। সেখানে ইন্টারভিউ পর্যন্ত দিয়েছিলাম। তারপর চলতি মাসের মাঝামাঝি সময়ে আমাকে রেলের গ্রুপ-ডির নিয়োগপত্র দেওয়ার পর তা নিয়ে চাকরিতে যোগ দিতে গিয়ে দেখি সেটি জাল।”
বিষয়টি বোঝার পর সব্যসাচীবাবু প্রথমে তাঁর টাকা ফেরত চান। কিন্তু পূর্ণিমাদেবী দায় অস্বীকার করলে সব্যসাচী গুসকরা পুলিশ ফাঁড়িতে অভিযোগ জানান। পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, পূর্ণিমাদেবী ও তাঁর স্বামী গোবিন্দ দের বিরুদ্ধে অভিযোগ পেয়ে পুলিশ প্রথমে তাঁদের বাড়ি যায়। গুসকরা ফাঁড়ির ওসি দেবাশীষ নাগ ও তাঁর সহকর্মীরা সাদা পোশাকে হানা দেয় সেখানে। পূর্ণিমাদেবীর কাছ থেকে একে একে ভৈরব বন্দ্যোপাধ্যায়ের ও মতিলাল কোনার নামে দু’জনের কথা জানতে পারেন তিনি। দেবাশিসবাবু পরিচয় গোপন রেখে একজনের চাকরি করে দিতে হবে, এই টোপ দিয়ে ডেকে পাঠান ভৈরবকে ও মতিলালকে। এলেই গ্রেপ্তার করা হয় তাঁদের। ধরা হয় কেশবপুর গ্রামের রতন রায়কেও।
প্রাথমিক তদন্তে পুলিশ জানতে পেরেছে, এই ৫ জনের মধ্যে পাণ্ডা ভৈরব। সে রেলের চাকরি করে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়ে টাকা নেওয়ার পাশাপাশি সবাইকে বলত চাকরি জন্য প্রার্থী খুঁজে দিতে। মোটা টাকা কমিশনের লোভও দেখাত। পূর্ণিমাদেবী প্রথমে ভৈরবের সঙ্গেই এই কারবার করছিলেন। তারপর ওই মহিলা সরাসরি এই চক্রের কলকাতার এক এজেন্টের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। সেখানে গিয়ে টাকাও দিয়ে এসেছেন পূর্ণিমাদেবী। পূর্ণিমাদেবীর দেওরের চাকরির জন্যও টাকা দেওয়া হয়েছিল বলে জেরায় জানিয়েছেন তিনি। অপরদিকে ভৈরবকে নিজের ছেলের চাকরির জন্য টাকা দিয়েছিল মতিলাল। তারপর ভৈরবের কথামতো কমিশনের লোভে মতিলাল কোনার বিভিন্ন এলাকা মিলে ১৪ জনের কাছে মোট ১৯ লক্ষ টাকা তুলে ভৈরবকে দেয়। এভাবে পুলিশ আপাতত ৪১ লক্ষ ২৫ হাজার টাকার প্রতারণার কথা জানতে পেরেছে। চক্রে আর কারা জড়িত তাঁদের সন্ধান পেতে তদন্ত শুরু করেছে পুলিশ।
ছবি: জয়ন্ত দাস
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.