চন্দ্রশেখর চট্টোপাধ্যায়, আসানসোল: দু’দিন কেটে গেলেও উদ্ধার করা গেল না আসানসোলের কুলটির অবৈধ খনিতে নিখোঁজ তিন যুবককে। ইসিএলের উদ্ধারকারী দল থেকে স্থানীয় কয়লা খাদানের প্রতিটি ধাপ জানা বাসিন্দারা – সকলেরই চেষ্টা ব্যর্থ হয়েছে। মঙ্গলবার এলাকায় পোকল্যান্ড নামিয়ে খোঁড়ার কথা ছিল। কিন্তু দিনভর অপেক্ষা করলেও নতুন করে কোনও উদ্ধারের চেষ্টা দেখা যায়নি। ফলে যেমন উদ্বেগ
বেড়েছে নিখোঁজ সন্তোষ, কালীচরণ ও বিনয়ের পরিবারে, আবার অজানা ভয়ে তাঁরাও মুখে কুলুপ এঁটেছেন। অজ্ঞাত কারণে নিঁখোজ ডায়েরিও তাঁরা করেননি।
গত রবিবার রাতে অবৈধ খনিতে খনন করতে গিয়ে গ্যাসের প্রকোপে তিনজন অচৈতন্য হয়ে পড়ে। পরিত্যক্ত খনিতেই আটকে পড়েন স্থানীয় সন্তোষ মারাণ্ডি, কালীচরণ কিসকু, ও বিনয় মূর্মূ। কালীচরণের বৃদ্ধা মা রুক্মিণী কিসকু খবর পাওয়ার পর থেকে বারে বারে মূর্ছা যেতে থাকেন। সন্তোষ মারাণ্ডির জামাইবাবু বলেন, ‘প্রশাসনের উপর থেকে আমাদের ভরসা উঠে যাচ্ছে।’ জানা গেছে, কালীচরণ অবিবাহিত কিন্তু সন্তোষ ও বিনয়ের পরিবার রয়েছে। সন্তোষের স্ত্রী ও এক ছেলে-মেয়ে রয়েছে। বিনয়ের স্ত্রী ও দুই মেয়ে, এক ছেলে আছে। ফলে সংসারের একমাত্র রোজেগের মানুষ চলে যাওয়ায় তাঁদের মাথায় আকাশ ভেঙে পড়ে। আকনবাগান এলাকার প্রতিবেশীদের ধারণা, খনিতে তলিয়ে যাওয়া ৩ যুবক আর বেঁচে নেই। ফলে গ্রামে কিছুটা শোকের আবহও রয়েছে। অন্যদিকে, প্রশাসনিক ব্যর্থতায় চাপা ক্ষোভও বিরাজমান।
কিন্তু উদ্ধারকাজে এত সমস্যা কেন হচ্ছে? ইসিএলের মাইনস রেসকিউ টিমের সদস্য অশোক রায়ের কথায়, ‘খনির প্রবেশপথ খুবই সরু৷ সেটাকে বাড়িয়ে ভিতরে ঢুকে উদ্ধারের চেষ্টা চালাতে হবে৷ কার্বন মনোক্সাইডের পরিমাণ অত্যধিক বেশি থাকায় চারটি পোর্টাল অক্সিজেনের পাইপ ফেটে গিয়েছে। তাতে এক লাখ টাকার ক্ষতি হয়ে গেছে ইতিমধ্যেই।’ এলাকায় পোকল্যান্ড নামিয়ে মাটি খোঁড়ার কথা ছিল, সেই কাজটি
মঙ্গলবার হয়নি। স্থানীয় তৃণমূল নেতা তথা কুলটি পুরসভার প্রাক্তন ভাইস চেয়ারম্যান বাচ্চু রায় বলেন, ‘শুনেছি, পোকল্যান্ড নামানোর কথা থাকলেও নামানো যাচ্ছে না এলাকটি ধস কবলিত হওয়ায়। পোকল্যান্ডের মত ভারী যন্ত্রটিও ধসের কবলে পড়তে পারে।’ আসানসোল দুর্গাপুর পুলিশের এডিসিপি (পশ্চিম) অনমিত্র দাস জানিয়েছেন, স্থানীয় সূত্রে খবর পেয়ে পুলিশ পরিত্যক্ত খাদানে তল্লাশির চেষ্টা চালাচ্ছে। ওখানে
প্রচুর পরিমাণে বিষাক্ত গ্যাস থাকায় সমস্যা তৈরি হচ্ছে।
দুর্ঘটনার পর থেকেই এলাকায় রয়েছেন স্থানীয় সমাজকর্মী জাহাঙ্গীর আলম। তিনি বলেন, ‘আমরা মনে করছি, প্রশাসন উদ্ধারে অযথা বিলম্ব করছে। যেভাবে প্রিন্স উদ্ধার হয়েছিল, সেভাবে বোরিং মেশিন দিয়ে ড্রিল করে ওই খনির সঙ্গে সংযোগ স্থাপন করে বিষাক্ত গ্যাস বের করা যেতে পারে।’ তাঁর দাবি, প্রয়োজনে সেনার সাহায্য নেওয়া হোক।
তবে কুলটি এলাকায় এদিনও দেখা যায় অবৈধ কয়লা পাচার চলছে অবললীলায়। কুলটির বেজডির টাওয়ার ও আলডিহি থেকে চোরাই কয়লা তুলে লছিপুরের অবৈধ কাঁটাঘরে পাচার হয় এদিনও। ফলে অবৈধ কয়লা রেশ টানতে কুলটি পুলিশের ভূমিকা নিয়ে ফের প্রশ্ন উঠল আবারও।
দেখুন ভিডিও:
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.