রাজা দাস, বালুরঘাট: বড়সড় ধস নামল দক্ষিণ দিনাজপুর জেলার গেরুয়া শিবিরে। বিজেপির জেলা কমিটি সদস্য তথা প্রাক্তন টাউন সভাপতি মিঠু মণ্ডল এবং বিজেপির শ্রমিক, ট্রেড ইউনিয়নের নেতৃত্ব-সহ কয়েক হাজার কর্মী যোগদান করল তৃণমূলে। আসন্ন পুরসভা ভোট তো বটেই, আগামী বিধানসভা ভোটের আগে কার্যত দিশেহারা পরিস্থিতি জেলা বিজেপির।
জানা গিয়েছে, রবিবার বালুরঘাট শহরের উৎসব ভবনে কয়েক হাজার বিজেপি নেতা কর্মী-সহ বাম ও কংগ্রেস ভেঙে চলে এই দলবদল। সেখানে তৃণমূল জেলা সভাপতি অর্পিতা ঘোষের নেতৃত্বে অন্তত ৪ হাজার মানুষ তৃণমূলে এসেছে বলেই দাবি। এদিন ওই দলবদল অনুষ্ঠানে এসে তৃণমূলে যোগ দেন বিজেপি ও তার শাখা সংগঠনের তাবড় তাবড় শহর ও জেলা নেতারা। যাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলেন মিঠু মহন্ত। তিনি বিজেপির বালুরঘাট টাউন মণ্ডল কমিটির প্রাক্তন সভাপতি ছিলেন। বিজেপির সদ্য প্রকাশিত জেলা কমিটিতেও এবার তিনি সদস্য হন।
এছাড়া বিজেপির শ্রমিক সংগঠনের জেলা সভাপতি শ্যামসুন্দর সাহা, বিজেপির ট্রেড ইউনিয়নের জেলা সাধারণ সম্পাদক চণ্ডী সাহা, বিজেপির টাউন মণ্ডল কমিটির প্রাক্তন জেলা সাধারণ সম্পাদক দেবায়ন গোস্বামী, প্রাক্তন টাউন সহ-সভাপতি কাজল সরকার তৃণমূলে যোগ দেন এদিন। পাশাপাশি ফরওয়ার্ড ব্লকের প্রাক্তন জেলা সম্পাদক চিত্তরঞ্জন দাস-সহ প্রথম সারির নেতারা বাম, কংগ্রেস এবং বিজেপি থেকে এসে ঘাসফুলে ভেড়েন। তাদের সঙ্গে দলবদল করে কয়েক হাজার কর্মী। তৃণমূল জেলা সভাপতি অর্পিতা ঘোষের হাত থেকে দলীয় পতাকা তুলে নেন সকলে। এই দলবদলে অর্পিতা ছাড়াও উপস্থিত ছিলেন তৃণমূলের কার্যকরী সভাপতি দেবাশিস মজুমদার, তৃণমূল জেলা সম্পাদক বিপ্লব মণ্ডল, বালুরঘাট টাউন তৃণমূল সভাপতি সুভাষ চাকি প্রমূখ।
তৃণমূলে যোগদানকারী বিজেপির জেলা কমিটির সদস্য তথা টাউন মণ্ডল কমিটির প্রাক্তন সভাপতি মিঠু মহন্ত বলেন, ‘বিজেপি সাংসদ যেভাবে এগোচ্ছেন তাতে কর্মীদের ন্যূনতম সম্মান মিলছে না। জেলা কমিটির কোনও ভূমিকা নেই জেলায়। এছাড়া কেন্দ্রে বিজেপি সরকারের সিএএ, এনআরসি নিয়ে মানুষ অখুশি। এগুলির প্রতিবাদ করে আমরা তৃণমূলে এসেছি। আমরা সব সম্প্রদায়ের মানুষকে পাশে নিয়ে চলতে চায়। রাজ্যে তৃণমূল তথা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় মানুষের পাশে আছেন। সেই আদর্শেই আমরা চলতে চলব।’
তৃণমূল জেলা সভাপতি অর্পিতা ঘোষ জানান, ‘মানুষের পাশে একমাত্র মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ও তার সরকার রয়েছেন। সিএএ, এনআরসি বিরোধিতায় তৃণমূল সরকার সকলের পাশে। এছাড়া মানুষের জন্য এই সরকার যে উন্নয়ন করছে তা আর কেউ পারবে না। সেই ভরসাতেই মানুষ তৃণমূলে আসছেন।’ বিজেপি জেলা সাধারণ সম্পাদক বাপি সরকার জানান, পুরসভা নির্বাচনকে সামনে রেখে তাঁরা বিভিন্ন কমিটি পরিবর্তন করেছেন। ফলে অনেক জায়গাতে কোণঠাসা হয়ে পড়েছিলেন মিঠু-সহ অন্য দলবদলকারীরা। প্রভাব খাটাতে গিয়ে তাঁরা গুরুত্ব পাচ্ছিলেন অনেক জায়গাতে। ফলে হতাশা থেকেই তারা তৃণমূলে গিয়েছেন। সেখানেও কিছু করতে পারবেন না ওই দলবদলকারীরা। বিজেপি থেকে কয়েক হাজার মানুষ তৃণমূলে গিয়েছেন বলে মিথ্যা প্রচার করা হয়েছে।
প্রসঙ্গত, তৃণমূলে যোগদানকারী বিজেপির টাউন প্রাক্তন সভাপতি মিঠু মহন্তর প্রভাবে বালুরঘাট শহরে সাংগঠনিক শ্রীবৃদ্ধি করেছিল বিজেপি। নিজের ওয়ার্ড তো বটেই বালুরঘাট শহরের অন্য ওয়ার্ডেও মিঠু দাপটের সাথে সাংগঠনিক কাজ চালিয়ে গিয়েছেন বিগত দিনে। এই পরিস্থিতিতে শহরের ওই নেতার তৃণমূলে যোগদান তাৎপর্যপূর্ণ ঘটনা। আসন্ন পুরভোটের আগে বালুরঘাট শহরের তৃণমূলের হাত আরও শক্ত হল এই দলবদলে।
ছবি: রতন দে
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.