সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: সালটা ২০০৪। গোটা দেশে বামেদের সাংসদ সংখ্যা ৫৯। সেসময় সিপিএম সাধারণ সম্পাদক ছিলেন কমরেড হরকিষেণ সিং সুরজিত। প্রথম ইউপিএ সরকার গড়তে নির্ণায়ক ভূমিকা ছিল বামেদের। তারপর মাত্র ১৫ বছরের ব্যবধানে গোটা দেশ থেকেই কার্যত নিশ্চিহ্ন লালঝান্ডা। সীতারাম ইয়েচুরি, প্রকাশ কারাত, সূর্যকান্ত মিশ্ররা সর্বহারাদের জনসমর্থন এক্কেবারে তলানিতে নিয়ে চলে গেলেন। এবারে বাম দলগুলির সম্মিলিত আসন সংখ্যা দশের গন্ডিও পেরলো না। আর বাংলায়? একসময় বাংলার দোর্দণ্ডপ্রতাপ শাসকদের এরাজ্যে যেন খুঁজেই পাওয়া গেল না। লড়াই তো দূরঅস্ত, ৪২ কেন্দ্রের কোথাও দ্বিতীয় স্থানে থেকেও লড়তে পারলেন না বাম-শিবিরের কোনও প্রার্থী। অধিকাংশ বাম প্রার্থীই বাঁচাতে পারলেন না নিজেদের জামানত৷
ভোটের আগেই অবশ্য স্পষ্ট হয়ে গিয়েছিল, এরাজ্যে বড় বেশি আসনে আশা নেই বামেদের। তবুও, আদ্যন্ত বামপন্থীরা বুক বাঁধছিলেন বিকাশরঞ্জন ভট্টাচার্য, মহম্মদ সেলিম, নেপালদেব ভট্টাচার্য, বদরুদ্দোজা খান, আভাস রায়চৌধুরি, অমিয় পাত্রদের মতো নেতৃত্বের দিকে তাকিয়ে। বাম নেতৃত্বের বিশ্বাস ছিল অন্তত সেলিম এবং বিকাশ জয়ের মতো পরিস্থিতিতে আছে। আর বাকিরা জিততে না পারলেও লড়াই দিতে পারবেন। কিন্তু, ফলপ্রকাশ হতে দেখা গেল জয় বা লড়াই দেওয়া তো দূর কি বাত, নিজেদের জমানতই বাঁচাতে পারলে না ৪০ জন বাম প্রার্থী। রাজ্যে মোট ৪১ আসনে প্রার্থী দিয়েছিল বামেরা। তারমধ্যে একমাত্র বিকাশরঞ্জন ভট্টাচার্য ২১ শতাংশ ভোট পেয়ে নিজের জামানত বাঁচিয়েছেন। মহম্মদ সেলিম পেয়েছেন ১৪.২৫ শতাংশ ভোট। দমদমে নেপাল ভট্টাচার্য পেয়েছেন ১৩.৯১ শতাংশ ভোট। মুর্শিদাবাদে বদরুদ্দোজা খান পেয়েছেন ১২.৪৪ শতাংশ ভোট। বর্ধমান দুর্গাপুরে আভাস রায়চৌধুরি পেয়েছেন ১১.২২ শতাংশ ভোট। বাকি কেউ জামানত বাঁচানোর ধারেকাছেও যেতে পারেননি।
কমিশনের নিয়ম অনুযায়ী, কোনও প্রার্থীর জামানত বাঁচাতে প্রয়োজন হয় মোট ভোটের একের ৬ অংশ। অর্থাৎ ১৬.৬৭ শতাংশ ভোট। রাজ্যের ৪০ জন বামপ্রার্থী তাও পারেননি। একাধিক কেন্দ্রে বামপ্রার্থীরা পেয়েছন চতুর্থ স্থান। এরাজ্যে শুরুতে কংগ্রেসের সঙ্গে জোট নিয়ে দীর্ঘ আলোচনা করেছিলেন বামপন্থীরা। কিন্তু, শেষ পর্যন্ত আসনরফা চূড়ান্ত না হওয়ায় জোটের পরিকল্পনা ভেস্তে যায়। তখনই অনেকে আন্দাজ করছিলেন ২০১৬ থেকে শুরু হওয়া রক্তক্ষরণের ধারা এবারেও অব্যাহত থাকবে। ফলাফল সেই ধারণাকে প্রতিষ্ঠিত করল।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.