Advertisement
Advertisement

Breaking News

Saline Case

‘বিষ’ স্যালাইন কাণ্ড: গরহাজির ৪ সিনিয়র, পরপর সিজার জুনিয়রদের, কারা CID স্ক্যানারে?

মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে বিষ স্যালাইন কাণ্ডে সিআইডি জিজ্ঞাসাবাদের মুখে একের পর এক সিনিয়র ডাক্তার।

4 Senior Doctors and Juniors under CID scanner in Saline Case

ফাইল ছবি

Published by: Paramita Paul
  • Posted:January 15, 2025 4:16 pm
  • Updated:January 15, 2025 4:22 pm  

সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে বিষ স্যালাইন কাণ্ডে সিআইডি জিজ্ঞাসাবাদের মুখে একের পর এক সিনিয়র ডাক্তার। অভিযোগ, সিনিয়র ডাক্তাররা নিজেদের দায়িত্ব পালন করেননি। বরং ‘অনভিজ্ঞ’ জুনিয়র চিকিৎসকদের হাতে পাঁচটা সিজার ডেলিভারি ও অপারেশনের দায়িত্ব দিয়েছিলেন তাঁরা। প্রসূতির মৃত্যু এবং অসুস্থতার পর থেকেই স্ক্যানারে এই সিনিয়র ও জুনিয়র চিকিৎসকরা। কারা রয়েছেন এই তালিকায়?

মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজের বিভিন্ন সূত্র থেকে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে সিজারে যাঁদের থাকার কথা ছিল ডা. দিলীপ পাল (বেড ইনচার্জ), ডা. হিমাদ্রি নায়েক (সিনিয়র ডাক্তার), ডা. সৌমেন দাস (আরএমও), ডা. পল্লবী বন্দ্যোপাধ্যায় (অ্যানাস্থেশিস্ট)। অথচ সিজার করেছিলেন পিজিটি প্রথম বর্ষের ডা. মৌমিতা, ইনটার্ন ডা. সুশান্ত মণ্ডল, পিজিটির তৃতীয় বর্ষের ডা. ভাগ্যশ্রী, জুনিয়র ডাক্তার ডা. জাগৃতি ঘোষ, পিজিটির প্রথম বর্ষে অ্যানাস্থেশিস্ট ডা. মণীশ প্রধান।সেদিন ঠিক কী ঘটেছিল, ওটিতে হাজির দুই সিস্টার পূজা ও শ্বেতা তদন্তকারীদের ঘটনার বিবরণ জানিয়েছেন।

Advertisement

হাসপাতাল সূত্রে খবর, ডা. দিলীপ পাল স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞ হিসাবে বেশ কয়েকটি প্রাইভেট নার্সিংহোমে প্র্যাকটিস করেন, নিয়মিত অপারেশনও করে থাকেন। কিন্তু ওইদিন রাতে দায়িত্বপ্রাপ্ত চার সিনিয়র চিকিৎসকই অনুপস্থিত ছিলেন। স্বভাবতই প্রসব বেদনা নিয়ে যখন প্রসূতিরা হাসপাতালে পৌঁছন তখন জরুরিভিত্তিতে অস্ত্রোপচারের দায়িত্ব তুলে নেন ডিউটিতে থাকা পিজিটি এবং ইনটার্নরা। যদিও রাজ্য স্বাস্থ্য দপ্তরের নিয়ম হল, দুই অ্যাসিস্ট্যান্ট প্রফেসর সৌমেন দাস ও দিলীপ পালরা সিজার ডেলিভারির অপারেশন করবেন আর পিজিটিরা শিক্ষানবীশ থাকায় শুধুমাত্র টেবিলের পাশে দাঁড়িয়ে পুরোটা দেখবেন। কিন্তু সিনিয়র ডাক্তারদের অনুপস্থিতিতে সেদিন প্রথমবর্ষের পিজিটি মণীশ প্রধান অ্যানাস্থেশিয়া দেন আর দু’জন পিজিটি মৌমিতা ও ভাগ্যশ্রী অপারেশন টেবিলে একটু বেশি সময় নিয়েই অস্ত্রোপচার করেন। পাশে দাঁড়িয়েছিলেন আর এক জুনিয়র ডাক্তার জাগৃতি ঘোষ। এঁদের মধ্যে মৌমিতা প্রথম বর্ষের পিজিটি, আর ভাগ্যশ্রী তৃতীয় বর্ষের।

সূত্রের খবর, ১-সি ইউনিটে সেদিন রাতে আরও একজন ইনটার্ন হাজির ছিলেন। তিনি হলেন সুশান্ত মণ্ডল। স্ত্রীরোগ ইউনিট সূত্রে জানা গিয়েছে, সিনিয়র ডাক্তাররা এমন সিজার ডেলিভারির অস্ত্রোপচারে ৪০-৪৫ মিনিট সময় নেন। কিন্তু সেদিন ভাগাশ্রী- মৌমিতারা দু’ থেকে আড়াই ঘণ্টা করে সময় নিয়েছিলেন একেকটি সিজার ডেলিভারিতে। সিনিয়রদের অনুপস্থিতিতে রাত ১০টা থেকে ভোর ৪.২০ পর্যন্ত মোট পাঁচটি এমন সিজার ডেলিভারি করিয়েছিলেন এই জুনিয়র ডাক্তাররাই।

মেদিনীপুর মেডিক্যালের স্ত্রীরোগ বিভাগ সূত্রে জানা গিয়েছে, প্রথমবর্ষের পিজিটি মণীশ প্রধান অ্যানাস্থেশিয়া দেওয়ার শুরুতেই ত্রুটি হওয়ায় এক প্রসূতির শারীরিক অবস্থার অবনতি হতে শুরু করে। সেই সময় অপারেশন থিয়েটারে হাজির এক জুনিয়র চিকিৎসক স্বীকার করেছেন, মূলত পেটের ঠিক পিছনদিকের মেরুদণ্ডে ইঞ্জেকশন দিয়ে এখন অ্যানাস্থেশিয়া করা হয়। সিনিয়র অভিজ্ঞ অ্যানাস্থেটিস্টরা একবারেই একটিমাত্র ইঞ্জেকশন দিয়ে অস্ত্রোপচারের কাজ শুরু করতে পারেন। কিন্তু যেহেতু কাঁচা হাত, অনভিজ্ঞ প্রথম বর্ষের পিজিটি মেরুদণ্ডে চেতনানাশক ইঞ্জেকশন দিতে গিয়ে দুই থেকে তিনবার ফুটিয়েছেন বলে প্রত্যক্ষদর্শীরা স্বীকার করেছেন। স্নায়ুরোগ বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন, মেরুদণ্ডের হাড়ের সঠিক জায়গায় ইঞ্জেকশন না পড়লে নার্ভের গুচ্ছে আঘাত লাগলে ভয়ানক ক্ষতি হয়ে থাকে। এক্ষেত্রে ভুল ইঞ্জেকশন দেওয়া এবং রাসায়নিকের মাত্রা কম-বেশি হওয়ার জেরে ওই প্রসূতির শারীরিক অবস্থার অবনতি হয়েছে বলে মনে হচ্ছে। অ্যানাস্থেশিয়া – ঠিকমতো না হওয়ার জেরে রোগীর শারীরিক অবস্থার অবনতি হচ্ছে জানার পরই দায়িত্বপ্রাপ্ত ডা. পল্লবী বন্দ্যোপাধ্যায়কে খবর দেওয়া হয়। কিন্তু ততক্ষণে ওই রোগীকে যে সমস্ত ওষুধ এবং ইঞ্জেকশন দেওয়ার কথা সেগুলি যেমন দেওয়া হয়নি এবং সময়মতো পড়েনি বলে স্বীকার করছেন হাসপাতালের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরাই। এরপর ওই প্রসূতির শারীরিক অবস্থার আরও অবনতি হয়। কার্যত ভেন্টিলেশনে পাঠানো হলেও পরেরদিন এক প্রসূতি মারা যান। কিন্তু এই যে অ্যানাস্থেশিয়ায় বিভ্রাট এবং চিকিৎসার জটিল পরিস্থিতি সেগুলি কোনওটাই বেড টিকিটে উল্লেখ নেই বলে জানা গিয়েছে।

তদন্তে নেমে স্বাস্থ্য দপ্তরের বিশেষজ্ঞ এবং সিআইডির গোয়েন্দারা দেখেছেন, শারীরিক অবস্থার অবনতি হলেও ওই দিন জুনিয়র চিকিৎসকদের হাতে অপারেশন হওয়া পাঁচ প্রসূতিকে সেই রাতে এসে পরীক্ষা করেননি কোনও দায়িত্বপ্রাপ্ত সিনিয়র ডাক্তার। শুধু তাই নয়, অপারেশনের পরে এবং চারজনের অনুপস্থিতি ধামাচাপা দিতে তড়িঘড়ি যে নথি তৈরি করা হয় তাতে দেখা যায়, একজন সিনিয়র ডাক্তার একই সময়ে দু’টি সিজার ডেলিভারি করেছেন। যা একজন মানুষের পক্ষে করা অসম্ভব। চিকিৎসা বিজ্ঞানের নিয়ম মেনে, একই অ্যাপ্রন পরে দু’টি অপারেশন করা যায় না। কারণ তাতে শুধুমাত্র সংক্রমণ নয়, এক রোগীর শরীরের অসুস্থতা বা ভাইরাস-ব্যাকটেরিয়া অন্য রোগীর শরীরে সংক্রমিত হতে পারে। কিন্তু এক্ষেত্রে চার সিনিয়র চিকিৎসকের গাফিলতি ধামাচাপা দিতে গিয়ে একই সময়ে দু’টি অপারেশন করেছেন বলে ‘কাগজ তৈরি’ করিয়েছেন ওই ডাক্তাররা। সূত্রের খবর, সিনিয়রদের অনুপস্থিতিতে সিজার ডেলিভারি করা এক পিজিটি একই অ্যাপ্রন পরে দুটি অপারেশন করেছেন। চিকিৎসা বিজ্ঞানের মতে, এটাও গর্হিত অপরাধ।

তদন্তে জানা গিয়েছে, ভোরের দিকে রোগীর অবস্থা যখন আর সামাল দিতে পারছেন না তখন জুনিয়র ডাক্তাররা দায়িত্বে থাকা সিনিয়র চিকিৎসক আরএমও সৌমেন দাসকে খবর দেওয়া হবে বলে ঠিক করেন। কিন্তু ততক্ষণে প্রসূতি মারা যায়। গাইনি বিভাগ সূত্রে খবর, ৮ জানুয়ারি রাতে ডিউটিতে না এসে জুনিয়রদের দায়িত্ব দিয়ে কোয়ার্টারে গিয়ে ‘বিশ্রাম’ নিচ্ছিলেন সৌমেন দাস। যদিও প্রসূতির মৃত্যুর পর গন্ডগোলের খবর পেয়ে তিনি ছুটে আসেন। পরে অবশ্য তিনি দাবি করেছেন, “অপারেশনের রুমে আমি ছিলাম, সিজার ডেলিভারি করিয়েছি।” কিন্তু প্রসূতির মৃত্যুর পর প্রাথমিক তদন্ত শুরু হতেই রাজ্য সরকার ওয়েবেল সংস্থার কাছ থেকে ১-সি ইউনিটের লেবার রুম এবং অপারেশন থিয়েটারের প্রবেশ পথের সিসিটিভি ফুটেজ সংগ্রহ করে। সেখানে প্রমাণ হয়ে যায়, চার সিনিয়র চিকিৎসকের কেউই আসেননি। শুধুমাত্র জুনিয়র ডাক্তাররাই অপারেশন করিয়েছেন। সেই সময় ওই অপারেশন থিয়েটারের দায়িত্বে ছিলেন পূজা ও শ্বেতা নামে দুই স্টাফ নার্স। দু’জনেই অবশ্য ডিউটিতে ছিলেন। তাঁরাই আসল সত্য সামনে আসতে সাহায্য করেছেন। মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজের স্ত্রীরোগ বিভাগ সূত্রে জানা গিয়েছে, প্রায়ই এমন ঘটনা ঘটে থাকে। নাইট ডিউটিতে সিনিয়র ডাক্তাররা আসেন না। জুনিয়রদের ঘাড়ে দায়িত্ব দিয়ে হয় ‘বিশ্রামে’ চলে যান, নয়তো বাড়ি অথবা প্রাইভেট নার্সিংহোমে অন্য রোগীকে পরিষেবা দিতে ব্যস্ত থাকেন। 

এ প্রসঙ্গে তৃণমূলের অন্যতম রাজ্য সাধারণ সম্পাদক কুণাল ঘোষ এক্স হ্যান্ডেলে লেখেন, ” স্যালাইন নিয়ে তদন্ত চলুক। খারাপ থাকলে ব্যবস্থা হোক। কিন্তু সঙ্গে এই বিপদটাও দেখুন। মনে রাখুন, এখানে শূন্যপদ ইস্যু নয়। ডিউটিতে থাকা সিনিয়র ডাক্তাররা জাস্ট কাজ করেননি। কাঁচা হাতে ছেড়েছিলেন।”

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

Advertisement