দেবব্রত মণ্ডল, দক্ষিণ ২৪ পরগনা: সুন্দরবনে এখন মধুর ভাণ্ডার পরিপূর্ণ। মধুর খোঁজে শয়ে শয়ে মউলি বিভীষিকাময় এই জঙ্গলের গভীরের পাড়ি দিতে শুরু করেছে। আর তাঁদের ‘শিকার’ করতে খাঁড়ি বেয়ে জঙ্গলে ঢুকে ওত পেতে বসেছিল বাংলাদেশি জলদস্যুরা। তবে দস্যুরা মউলির দলে হানা দেওয়ার আগেই পুলিশ তাদের ডেরায় হানা দেয়। শুক্রবার রাতে সুন্দরবনের কৈখালির জঙ্গল থেকে চার খতরনাক জলদস্যুকে বন্দুক ও বোমা সমেত পাকড়াও করে পুলিশ।
নাগালে এসেও পুলিশের হাত থেকে ফসকে যায় আরও চার-পাঁচ দস্যু। নৌকা নিয়ে জঙ্গলের খাঁড়ি ধরে চম্পট দেয় তারা। প্রতি বছরই এই সময় জলদস্যুর শিকার হন মউলিরা। তবে এবছর তাতে ছেদ পড়ল। চলতি বছরে এই নিয়ে চতুর্থ জলদস্যুর দলকে সুন্দরবন থেকে পাকড়াও করল পুলিশ।
বাংলাদেশের সাতক্ষীরা থেকে সুন্দরবনের জলপথ ধরে এ রাজ্যে অনুপ্রবেশ করে জলদস্যুরা। নৌকায় বিপুল পরিমাণ বন্দুক, গুলি ও বোমা মজুত করে কুলতলি থানা এলাকার কৈখালি জঙ্গলের গভীরে লুকিয়ে ছিল ছয়-সাতজন দস্যু। সাধারণত পয়লা এপ্রিল থেকে মউলিরা দল বেঁধে মধু সংগ্রহ করতে জঙ্গলে যেতে শুরু করে। তাদের উপরই হামলা চালানোর ছক ছিল এই জলদস্যুদের। কিন্তু তার আগেই গোপন সূত্রে জলদস্যুদের অনুপ্রবেশের কথা জানতে পারে বারুইপুর থানার স্পেশাল অপারেশনস গ্রুপ। শুক্রবার রাতে সুন্দরবনের জঙ্গলে অভিযান চালায় পুলিশ। জঙ্গলের ভিতরের চড়ে ডেরা বানিয়েছিল দুস্যরা। অতর্কিতে সেখানে হানা দিয়ে চারজনকে ধরে ফেলে পুলিশ। সে সময় খাঁড়িতে নৌকায় বসেছিল আরও কয়েকজন দস্যু। পুলিশ দেখেই নৌকা নিয়ে নিমেষের মধ্যে জঙ্গলে হারিয়ে যায় তারা।
বারুইপুরের পুলিশ সুপার অরিজিৎ সিনহা জানিয়েছেন, “ধৃত চার জলদস্যুর থেকে পাঁচটি রাইফেল, একটি পিস্তল, সাত রাউন্ড গুলি ও সাতটি বোমা উদ্ধার করা হয়েছে। ধৃতরা প্রত্যেকেই বাংলাদেশের বাসিন্দা বলে জানা গিয়েছে। প্রত্যেকের বয়সই ১৯ থেকে ২৫ বছরের মধ্যে।” পুলিশ সূত্রে খবর, ধৃতদের বিরুদ্ধে ১৪ ফরেনার্স অ্যাক্ট, অস্ত্র আইন, ডাকাতি-সহ একাধিক জামিন অযোগ্য ধারায় মামলা রুজু করা হয়েছে। পুলিশ সুপার আরও জানিয়েছেন, জানুয়ারি মাস থেকে এই নিয়ে চারটি জলদস্যুর দলকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এর আগে ২৩ মার্চ পিরখালির জঙ্গল থেকে এমনই এক জলদস্যুর দলকে গ্রেপ্তার করা হয়। কয়েকবার এই দস্যুদের সঙ্গে গুলি বিনিময়ও হয়েছে পুলিশের। এই অভিযান লাগাতার চলবে। পুলিশ জানিয়েছে, শুক্রবার রাতে পালিয়ে যাওয়া জলদস্যুদের খোঁজে চিরুনি তল্লাশি চালানো হচ্ছে। এছাড়া ধৃত চারজনকে জেরা করে ওই এলাকার বাকি দলদস্যুদের সম্পর্কে জানা চেষ্টা করছে পুলিশ।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.