ছবি: প্রতীকী
শংকর কুমার রায়, ইসলামপুর: চব্বিশ ঘণ্টার মধ্যেই খুশি বদলে গেল কান্নাভেজা তীব্র শোকে। শেষরক্ষা আর হল না। অমোঘ মৃত্যুর সঙ্গে লড়াই করেও বাঁচানো গেল না পাঁচ সদ্যোজাতর চারজন শিশুকে। জীবিত কন্যাসন্তানের অবস্থাও আশঙ্কাজনক। সোমবার ভোরে ইসলামপুর মহকুমা হাসপাতালের নিউ বর্ন কেয়ার ইউনিটের শয্যায় মাত্র কুড়ি ঘণ্টা বয়সের চার-চারটি নবজাতকের জীবনদীপ নিভে গেল।
রবিবার সকালে উত্তর দিনাজপুরের ইসলামপুর-বিহার সীমানার আমবাগান এলাকার এক বেসরকারি নার্সিংহোমে একসঙ্গে পাঁচ কন্যাসন্তানের জন্ম দেন তাহেরা বেগম। কিন্তু প্রত্যেক শিশুর ওজনই ছিল অত্যন্ত কম। আশঙ্কা ছিল, সবাইকে বাঁচানো যাবে কি না। সেই আশঙ্কা সত্যি করে চারজন এই পৃথিবীতে ২৪ ঘণ্টাও থাকতে পারল না। খবর পেয়ে ভেঙে পড়েছেন তাহিরা বেগম। পরপর চার অপরিণত সন্তান হারানোর যন্ত্রণা সহ্য করতে না পারা মাকে ঘুমের ওষুধও দিতে হয়।
রবিবার সকালে জন্ম নেওয়া পাঁচ কন্যাসন্তানের শারীরিক অবস্থা আশঙ্কাজনক হওয়ায় তড়িঘড়ি পার্শ্ববর্তী ইসলামপুর মহকুমা হাসপাতালে নিউ বর্ন কেয়ার ইউনিটে স্থানান্তরিত করা হয়েছিল। কিন্তু তাতেও বাঁচানো সম্ভব হল না মাত্র আটশো-নয়শো গ্রাম ওজনের বাচ্চাগুলোকে। জন্মের কুড়ি ঘণ্টার মধ্যেই দুই শিশু মারা যায়। সোমবার সকালে আরও দুই শিশু মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ে। একমাত্র জীবিত শিশুও আশঙ্কাজনক বলে জানান ইসলামপুর মহকুমা হাসপাতালের সুপার সুরোজ সিনহা। তিনি বলেন, “অপরিণত শিশুগুলোর মৃত্যু অস্বাভাবিক নয়। প্রত্যেক শিশুর ওজন এক কেজি থেকেও কম। যেখানে স্বাভাবিক নবজাতকের ওজন হওয়া চাই কমপক্ষে দুই থেকে আড়াই কেজি। তবু বাঁচানোর জন্য সমস্তরকম চেষ্টা করা হয়েছিল। কিন্তু দুঃখজনক হলেও মেনে নেওয়া ছাড়া উপায় নেই।”
তাহেরা বলেন, “রোজগার কম। স্বামী বাইরের রাজ্যে কাজ করেন। নিজের সন্তানদের মুখটাও শেষ দেখার সুযোগ পেল না। তার আগেই সব শেষ হয়ে গেল। একজন মাত্র বেঁচে আছে। কিন্তু সেটার কী হবে জানি না।” এদিন মৃত চার শিশুকে বিহারের ঠাকুরগঞ্জের জালমিলিক গ্রামের বাড়ির অদূরে কবরস্থ করেন তাদের দাদু। মৃত সন্তানদের বাবা জাভেদ আলিকে ফোন করে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.