সম্যক খান, মেদিনীপুর: কোটিপতি প্রার্থীর ছড়াছড়ি পশ্চিম মেদিনীপুরে। একেই বলে একেবারে সেয়ানে-সেয়ানে টক্কর। কেউ কারও থেকে কম নয়। জেলার দুটি কেন্দ্রেই প্রধান দুই রাজনৈতিক দল তৃণমূল ও বিজেপি প্রার্থীরা অর্থ ও প্রতিপত্তির দিক থেকে কেউ কোনও অংশে কম যান না। তবে কোটিপতি প্রার্থী হলেও তারা স্বতঃস্ফুর্তভাবে নিজের বা দলের প্রচারের জন্য কতটা খরচ করছে তা দলের অন্দরমহলে কর্মীদের আলোচনায় কান পাতলেই ভালোমন্দ নানান কথা শোনা যাবে। অর্থের দিক থেকে পুরোপুরি বেমানান কংগ্রেস ও বামফ্রন্ট জোটের প্রার্থীরা। দুই কেন্দ্রেই জোটপ্রার্থী আছে সিপিআইয়ের। তার মধ্যে মেদিনীপুরের প্রার্থী বিপ্লব ভট্ট কয়েক লাখ টাকার মালিক হলেও ঘাটালের প্রার্থী তপন গঙ্গোপাধ্যায়ের প্রায় কিছুই নেই বললে চলে। একই অবস্থা ভোটের ময়দানে অবতীর্ণ হওয়া অন্যান্য ছোটখাটো দল ও নির্দল প্রার্থীদের।
দুটি কেন্দ্র ঘাটাল ও মেদিনীপুরে প্রধান দুই রাজনৈতিক দলের যে চারজন প্রার্থী ভোটে লড়ছেন তাঁরা সকলেই সেলিব্রিটি। তাঁদের মধ্যে তিনজনই অভিনয় জগৎ থেকে আসা তো অপরজন নামকরা ফ্যাশন ডিজাইনার। ঘাটালে হচ্ছে দুই অভিনেতার লড়াই। একদিকে তৃণমূলের দীপক অধিকারী ওরফে দেব তো অপরদিকে বিজেপির প্রার্থী হিরণ চট্টোপাধ্যায়। দুজনেরই স্থাবর ও অস্থাবর সম্পত্তি কয়েক কোটি টাকা। তবে অনেকটাই উপরের দিকে আছেন দেব।
প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন কমিশনের সামনে তাঁরা যে হলফনামা দাখিল করেছেন তাতে দেখা যাচ্ছে যে দেবের অস্থাবর সম্পত্তির পরিমাণ ১৭ কোটি ২২ লক্ষ ৩৫ হাজার ৬৯ টাকা এবং স্থাবর সম্পত্তির পরিমাণ ১৯ কোটি ৭২ লক্ষ ৭২ হাজার টাকা। সেখানে হিরণের অস্থাবর সম্পত্তি হিসেবে আছে ৩ কোটি ১৩ লক্ষ ১৫ হাজার ৮২৮ টাকা আর স্থাবর সম্পত্তির পরিমান ৯০ লক্ষ টাকা।
আবার মেদিনীপুরে তৃণমূলের প্রার্থী অভিনেত্রী জুন মালিয়ার বিরুদ্ধে বিজেপি থেকে লড়ছেন ফ্যাশন ডিজাইনার অগ্নিমিত্রা পল। জুন মালিয়ার অস্থাবর সম্পত্তির পরিমাণ যেখানে ১ কোটি ৪২ লক্ষ ৪২ হাজার ৬৭৫ টাকা এবং স্থাবর সম্পত্তির পরিমান ১ কোটি ৭৯ লক্ষ ৩২ হাজার ৪৮৪ টাকা সেখানে বিজেপি প্রার্থী অগ্নিমিত্রা পলের অস্থাবর ও স্থাবর সম্পত্তির পরিমান যথাক্রমে ১ কোটি ৩৫ লক্ষ ৫৭ হাজার ৭৬৪ টাকা ও ১ কোটি ২৮ লক্ষ ৭৫ হাজার ২৬ টাকা। তাঁদের ধারেকাছেই আসতে পারছেন না বাম-কং জোটের প্রার্থীরা।
বিপ্লব ভট্টের অস্থাবর সম্পত্তির পরিমাণ ১৫ লক্ষ ৮০ হাজার ৯৬১ টাকা এবং স্থাবর সম্পত্তির পরিমাণ ৮৬ লক্ষ ৫৫ হাজার ৩ টাকা উল্লেখ থাকলেও তপন গঙ্গোপাধ্যায়ের উল্লেখ করার মতো কিছুই নেই। পার্টির হোল টাইমার তপনবাবুর অস্থাবর সম্পত্তির পরিমাণ মাত্র ৫ হাজার টাকা। আর স্থাবর সম্পত্তি কিছুই নেই। প্রায় একই হাল এসইউসিআই, বহুজন সমাজ পার্টি, আমরা বাঙালি থেকে শুরু করে নির্দল হিসেবে দাঁড়ানো প্রার্থীদেরও। ফলে কোটিপতি প্রার্থীদের জাঁকজমক প্রচারের কাছে প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতেই পারছেন না তাঁরা। কোটিপতি প্রার্থীদের লড়াই একটা শ্রেণি উপভোগ করলেও অপর একটি শ্রেণি অবাক। বর্ষীয়ান ভোটারদের অনেকেই বলেছেন, আগে এসব ভাবা যেত না। রাজনীতি করতেন একেবারে সাধারণ বাড়ির লোকজন। কিন্তু এখন সবকিছু কেমন বদলে যাচ্ছে। যাদের টাকা আছে তারাই কাউন্সিলর, বিধায়ক, সাংসদ হতে পারছে। বাকিরা অর্থ ও প্রভাব প্রতিপত্তির কাছে এঁটে উঠতেই পারছে না।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.